২০২২ সালে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য গভীরতর আর্থিক বিপদের সম্মুখীন হইতে পারে। অতিমারির নূতনতর সংক্রমণের কারণে নহে; অর্থব্যবস্থার গায়ে আসিয়া লাগা নূতনতর কোনও ধাক্কার ফলেও নহে— এই বিপদের গতিপথটি পূর্বনির্দিষ্ট, এবং অনিবার্য। তাহার শিকড় ২০১৭ সালে। সেই বৎসর পণ্য ও পরিষেবা কর প্রবর্তিত হইবার ফলে দেশের পরোক্ষ কর কাঠামোয় বহুবিধ পরিবর্তন সাধিত হয়। তাহার মধ্যে একটি পরিবর্তন ছিল এই রূপ— কোনও পণ্য যে রাজ্যে উৎপাদিত হইতেছে সেই রাজ্য নহে, তাহার উপর কর আদায় করিবে অন্তিম পণ্যটি যে রাজ্যে বিক্রয় হইতেছে, সেই রাজ্য। অর্থাৎ, জিএসটি আদায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজ্যের আপেক্ষিক গুরুত্ব যেমন পাল্টাইয়া যাইবে, তেমনই জিএসটি-র ভাগ বাবদ রাজ্যের পাওনার ক্ষেত্রেও তারতম্য ঘটিবে। এই ঘাটতি মিটাইবার জন্যই ব্যবস্থা হইয়াছিল জিএসটি ক্ষতিপূরণের। কেন্দ্রীয় সরকার গ্যারান্টি দিয়াছিল, ২০১৭ সালের পরের পাঁচ বৎসর প্রতিটি রাজ্যের ভাগে জিএসটি বাবদ রাজস্বের পরিমাণ বৎসরে কমপক্ষে ১৪ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়িবেই। কোনও রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমাণ যদি তাহার তুলনায় কম হয়, তাহা হইলে কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সেই ঘাটতি পুষাইয়া দিবে। পরিসংখ্যান বলিতেছে, অতিমারির পূর্বে রাজ্যগুলির জিএসটি আদায়ের পরিমাণ তুলনায় বেশি ছিল— গত দুই বৎসরে ক্ষতিপূরণের উপর নির্ভরতা প্রবল হারে বাড়িয়াছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে নির্দিষ্ট রাজস্ববৃদ্ধির স্তরে পৌঁছাইবার ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির ঘাটতি ছিল মাত্র ১২ শতাংশ; ২০২০-২১ সালে তাহাই বাড়িয়া দাঁড়াইয়াছে ৩৬ শতাংশে। ছবিটি পাল্টাইবে, অদূর ভবিষ্যতে তেমন ভরসাও নাই। এ দিকে, আইন সংশোধিত না হইলে ২০২২ সালই জিএসটি ক্ষতিপূরণের শেষ বৎসর। ফলে, অনেক রাজ্যই বিপদে পড়িতে চলিয়াছে। বিপদের সূচনা অবশ্য পূর্বেই হইয়া গিয়াছে, যখন অতিমারির মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার জিএসটি ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হইল।
বহু রাজ্যকেই আর্থিক ভাবে পঙ্গু করিয়াছে জিএসটি। কিন্তু, তাহাতে বৃহত্তর কোনও উপকার সাধিত হইয়াছে কি? বলা হইয়াছিল, ‘এক দেশ, এক করব্যবস্থা’ প্রবর্তিত হইলে, করপদ্ধতি সরলতর হইলে শেষ অবধি কর আদায়ের পরিমাণ বাড়িবে। বাস্তব ভিন্নমুখী হইয়াছে। জিডিপি-র অনুপাতে জিএসটি বাবদ আদায়ের পরিমাণ অতিমারির সূচনার পূর্বেই নিম্নগামী হইয়াছিল। জিএসটি চালু হইবার পূর্ববর্তী পর্যায়ের সহিত তুলনার সুবিধার্থে যদি পরবর্তী কালে জিএসটির অন্তর্ভুক্ত হওয়া পণ্য ও পরিষেবাগুলিকে বাছিয়া লওয়া হয়, তবে দেখা যাইতেছে যে, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে সেই পণ্য ও পরিষেবা বাবদ আদায় হইয়াছে জিডিপি-র ৬.১ শতাংশ। ২০১৯-২০ সালে, কমপেনসেশন সেস-এর অঙ্কটি বাদ দিলে, জিএসটি আদায়ের পরিমাণ জিডিপি-র ৫.১ শতাংশ। অর্থাৎ, সাতমার পালোয়ান রাজ্যগুলিকে ধরাশায়ী করিয়াছে বটে, কিন্তু বর্ধিত রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা তাহার হাত গলিয়া পলাইয়াছে। কেন, সেই কারণটি বোঝা কঠিন নহে। জিএসটি সরল নহে— তাহার মোট পাঁচটি হার, কর প্রদানের পদ্ধতি অতি জটিল, বহু ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী পণ্যের তুলনায় অন্তিম পণ্যের উপর করের হার কম হওয়ার ফলেও বিস্তর জটিলতা রহিয়াছে। মোট কথা, অপরিকল্পিত ভাবে কোনও অতিবৃহৎ আর্থিক সিদ্ধান্ত করিলে তাহার পরিণাম কতখানি মারাত্মক হইতে পারে, জিএসটি তাহার একটি মোক্ষম উদাহরণ। এই অবস্থায় রাজ্যগুলিকে ভাগ্যের হাতে ছাড়িয়া দিলে কেন্দ্রীয় সরকার দায় ঝাড়িয়া ফেলিতে পারে বটে, কিন্তু তাহাতে অর্থব্যবস্থার সমস্যার সমাধান হইবে না। স্বখাত সলিল হইতে নিস্তারের পথটি, অতএব, কেন্দ্রীয় সরকারকে খুঁজিতেই হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy