Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
CPM

প্রবীণ

পুরাতন চিন্তাপথ বিসর্জন দিতে না পারিলে ব্যক্তিবিশেষকে বানপ্রস্থে পাঠাইয়াও কোনও লাভ হইবে না।

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২১ ০৫:৫২
Share: Save:

পথিক যখন পথ হারাইয়া ফেলেন, তাঁহার পক্ষে গন্তব্যের হদিসটুকু পাওয়াও কঠিন হইয়া উঠে। নবকুমারের পক্ষেই দুষ্কর, প্রবীণ হইলে তো কথাই নাই। পথভ্রষ্ট হইতে হইতে পশ্চিমবঙ্গের আইনসভায় বিলুপ্ত হইবার পর সিপিএম সারকথা স্থির করিয়াছে: বয়সই যত নষ্টের গোড়া। অতএব, তাজা রক্তের আমদানি করিলেই সংগঠনের রক্তক্ষরণ বন্ধ হইবে। সিদ্ধান্ত হইয়াছে, বাহাত্তর পার হইলে রাজ্য কমিটি এবং পঁচাত্তর পার হইলে কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বার চিরতরে বন্ধ হইয়া যাইবে, এবং ষাট পার হইলে কোনও সদস্য কমিটিতে ঢুকিতে পারিবেন না। অবসর স্বভাবত এক যথার্থ পন্থা, প্রতিটি সংগঠিত কর্মক্ষেত্রে এমনই প্রচলন, উহাই নূতন প্রজন্মের দরজা খুলিয়া দেয়, রাজনীতিতেও তাহা বিধেয়। শুধুমাত্র পরাভূত সিপিএমের ক্ষেত্রে নহে, সব দলকেই ভাবিতে হইবে যে, জনসেবা করিবার জন্য যে শারীরিক-মানসিক সুস্থতা ও সক্রিয়তা প্রয়োজন, তাহা না থাকিলে কাহারও সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা বিধেয় কি না।

বয়স্কদের অবসর গ্রহণ এবং নূতনদের আহ্বান জানাইবার প্রকৃত অর্থ— বহুল প্রচলিত চিন্তাধারা হইতে সরিয়া আসিয়া নূতন করিয়া ভাবিবার প্রয়াস। উহা প্রসাধনী বদল নহে— কয়েকটি পুরাতন মুখকে সরাইয়া কাঁচা-নবীনদের লইয়া আসিলেই আধমরাকে ঘা মারিয়া বাঁচানো যায় না। বঙ্গীয় বাম রাজনীতিতে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র প্রমুখ প্রায় অর্ধ শতক যাবৎ সক্রিয়। কেহ বলিতে পারেন, একদা সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপের কৃতিত্ব ও সুফল যদি এই নেতৃত্বের উপর বর্তাইয়া থাকে, বর্তমান ব্যর্থতার দায়ও তাঁহাদেরই লইতে হইবে। কিন্তু নবীনদের অভিমুখে তাকানো প্রয়োজন। এই বার যে তরুণ দলকে লইয়া বামপন্থীরা সবিশেষ হইচই পাকাইলেন, তাঁহারাও ভোটযুদ্ধে দাগ কাটিতে পারেন নাই। এহ বাহ্য— তাঁহারা জনতাকে নূতন কথা শুনাইতে পারেন নাই। তাঁহাদের দেখিয়া সাধারণ মানুষের মনে এই আশা জাগে নাই যে, ইঁহারা কোনও নয়া ভাবনার আমদানি করিতে পারিবেন। জনদরবারে তাঁহারা নূতন যৌবনের দূত হিসাবে গৃহীত নহেন। অতএব, বয়সের বদলে মানসিকতার প্রাচীনতায় মনোনিবেশ করিলে হয়তো কিছু কাজের কাজ হইত। ‘তরুণ’ বামপন্থীরা নিজেদের জন্য একটি সহজ পরীক্ষার ব্যবস্থা করিতে পারেন। যত দিন তাঁহারা ভাবিবেন যে ‘মানুষ ভুল করিয়াছে’, অথবা ‘মানুষের কাছে গিয়া তাহাদের বুঝাইতে হইবে’— বুঝিয়া লইবেন যে, তত দিন তাঁহারা অতিপ্রবীণ। যে দিন টের পাইবেন যে, ভুল মানুষের নহে, নিজেদের, সে দিন তাঁহারা তরুণ হইবেন।

হ য ব র ল-র উধো বুড়ো ব্যতীত ইহজগতে সকলেরই বয়স বাড়তির দিকে। কিন্তু, বয়স কি আর বয়সে হয়? তাহা হয় মনে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বয়স ও কর্মক্ষমতার দিকে তাকাইলেই কথাটি বোঝা যায়। কিন্তু যাঁহাদের ভাবনাচিন্তা স্থবির, যাঁহারা আপনাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে সর্বশক্তিমান বিজ্ঞান বলিয়া মনে করেন, তাঁহাদের সংস্কারের পথটি সহজ নহে। যত দিন না এই মানসিকতার পরিবর্তন করা যাইতেছে, এবং চর্বিতচর্বণ বাণীমালা পরিত্যক্ত হইতেছে, তত দিন সিপিএম বলিতে পক্বকেশ বৃদ্ধদলের ছবিটিই জনমানসে আঁকা থাকিবে। পুরাতন চিন্তাপথ বিসর্জন দিতে না পারিলে ব্যক্তিবিশেষকে বানপ্রস্থে পাঠাইয়াও কোনও লাভ হইবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy