Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
CBI

নীচতা

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠার কালে আম্বেডকর বলিয়াছিলেন, উহা এক ‘ডুয়াল পলিটি’ বা দ্বৈত রাজনৈতিক সত্তা, যাহার মধ্যস্থলে আছে কেন্দ্র এবং পরিধিতে রাজ্য।

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৪:৫৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির জল একটি বিচিত্র খাতে বহিতেছে— এমন গতিতে, যাহাকে প্রকৃতার্থে ‘রাজনীতি’ বলা মুশকিল। সেই কুনাট্যের অন্যতম কুশীলব রাজ্যের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল, যাহারা কেন্দ্রের শাসক দলও বটে। বিরোধীরা সরকারের উপর প্রবল হইবে, অস্বস্তিকর প্রশ্ন করিবে, তাহাকে জবাব দিতে বাধ্য করিবে— উহা কাম্য। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে যাহা চলিতেছে, তাহার ধরন ভিন্ন। কেহ অভিযোগ করিতে পারেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকিবার সুবাদে বিজেপি বারে বারেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করিতেছে, যাহাতে রাজ্যের শাসকদের বিড়ম্বনায় পড়িতে হয়। প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে লইয়া রাজ্যের সঙ্গে অবান্তর বিবাদে জড়াইল কেন্দ্র। ভোট-পরবর্তী হিংসায় কেবলমাত্র এই রাজ্যেই কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তদল উপস্থিত হইয়াছিল, শত অভিযোগ সত্ত্বেও বিজেপি-শাসিত ত্রিপুরার অভিমুখে তাহাদের নজরটুকুও পড়ে নাই। তারিখ পার হইয়া যাইবার পরেও রাজ্য পুলিশের ডিজি পদে নাম সুপারিশ করে নাই কেন্দ্র, রাজ্যের প্রবীণতম আইপিএস-কে নির্বাহী ডিজি-র অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করিয়া এখনও কাজ সামলানো হইতেছে। কেন্দ্র আপন আইনি অধিকারের গণ্ডি লঙ্ঘন করিতেছে, এমন কথা হয়তো বলা চলিবে না; কিন্তু যাহা হইতেছে, তাহাকে সহযোগিতার সম্পর্কও বলা কঠিন।

কেন উত্ত্যক্ত করিবার এই নিরন্তর প্রয়াস? এই প্রশ্নের উত্তর শুধু অনুমান করাই সম্ভব। দক্ষ রাজনীতিকেরও ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, তিনি লঘু কথা বলিয়া ফেলেন, সেই স্খলনকে প্রতিবাদের অস্ত্র করে বিরোধীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উত্ত্যক্ত করিয়া বিজেপি কি এমন সুযোগই খুঁজিতেছে? কাহাকেও ক্রমশ উত্ত্যক্ত করিয়া তাহার দুর্বল মুহূর্তের সুযোগ লইবার চেষ্টা। তাহাতে বৃহত্তর ক্ষতি হইলেও পরোয়া নাই, উহা ক্ষুদ্রস্বার্থকেন্দ্রিক। আমপান বা ইয়াসের ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাহয় স্থগিতই থাকিল, রাজ্যের জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্য অর্থের ৩৮৫০ কোটি টাকা কেন্দ্র কেন মিটাইতেছে না, তাহারও জবাব নাই। এই প্রশ্নগুলি তুলিবার অবকাশই যাহাতে না মিলে, তাহার জন্যই কি এই উত্ত্যক্ত করিয়া চলা? কেন্দ্র-রাজ্য রাজনৈতিক দ্বৈরথ ও পারস্পরিক দোষারোপ পশ্চিমবঙ্গ নূতন কথা নহে, এমন কদর্য রাজনীতির পথে তাহার প্রকাশটি অভূতপূর্ব।

কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতেরও এক প্রকার অনিবার্যতা আছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠার কালে আম্বেডকর বলিয়াছিলেন, উহা এক ‘ডুয়াল পলিটি’ বা দ্বৈত রাজনৈতিক সত্তা, যাহার মধ্যস্থলে আছে কেন্দ্র এবং পরিধিতে রাজ্য। দুইয়েরই সংবিধান-নির্দিষ্ট সার্বভৌমত্ব আছে। রাজনীতি-ভাবনা বা আদর্শ পৃথক পথে চালিত হইলে সংঘাতও অস্বাভাবিক নহে। যদিও তাহা রাজনৈতিক— বিবিধ রাষ্ট্রনীতিতে দুই সরকারের ভিতর মতভেদের সাক্ষী সংসদীয় ইতিহাস। কিন্তু দলীয় ক্ষুদ্রস্বার্থে তাহা কাজে লাগাইবার পন্থাটি নূতন। বলা যায়, ইহা মধ্যস্থলের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করিতে পরিধিকেও যথাসম্ভব দখল করিবার চেষ্টা। এবং নিন্দকে বলিবে, বঙ্গদেশে পরাজয়ের জ্বালাটি বিজেপির এখনও হজম হয় নাই। ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে নীচতা তাই চলিতেছে, চলিবে। হায়, দুর্ভাগা পশ্চিমবঙ্গবাসী!

অন্য বিষয়গুলি:

CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy