Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Petrol price

দায় কাহার?

সামান্য পাটিগণিতেই প্রধানমন্ত্রীর যুক্তির দুধ হইতে জল পৃথক করিয়া ফেলা সম্ভব।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:২৪
Share: Save:

পেট্রল-ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধির দায়টিও পূর্বতন সরকারগুলির ঘাড়ে চাপাইয়া দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলিলেন, সেই আমলের গাফিলতিতেই ভারতে পেট্রলিয়ামের ক্ষেত্রে আমদানি-নির্ভরতা কমে নাই। নচেৎ, মধ্যবিত্তকে আজ এই দুঃসহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হইতে হইত না। অর্থাৎ, দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের খুচরা মূল্যবৃদ্ধির দায়টিকে তিনি সম্পূর্ণতই আন্তর্জাতিক বাজারের ঘাড়ে চালাইয়া দিতে চাহেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, প্রধানমন্ত্রীর অন্য অনেক দাবির মতো এই দাবিটিতেও সত্যের ভাগ তুলনায় কম। সামান্য পাটিগণিতেই প্রধানমন্ত্রীর যুক্তির দুধ হইতে জল পৃথক করিয়া ফেলা সম্ভব। ২০১৪ সালের মে মাসে যখন মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষ হইতেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তখন এক ব্যারেল অপরিশোধিত পেট্রলিয়ামের দাম ছিল ১০৮ ডলারের কাছাকাছি। তখন এক ডলারের মূল্য ছিল ৫৯ টাকার সামান্য কম। অর্থাৎ, টাকার অঙ্কে এক ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৬৪৭২ টাকার কাছাকাছি। বর্তমানে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার, এবং এক ডলারের দাম ৭২ টাকা। অর্থাৎ, এখন এক ব্যারেল অপরিশোধিত পেট্রলিয়ামের দাম ৪৩২০ টাকা। সহজ অঙ্ক, মনমোহন সিংহের শেষ লগ্নের তুলনায় বর্তমানে অপরিশোধিত তেলের মূল্য ৩২.২ শতাংশ কম। এখন দিল্লিতে এক লিটার পেট্রলের দাম প্রায় ৯০ টাকা। ২০১৪ সালের মে মাসে তাহা ছিল ৭১ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ, তেলের দাম বাড়িয়াছে ২৫ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ৩২ শতাংশ দাম কমিল, তখন দেশের বাজারে ২৫ শতাংশ দাম বাড়িল কোন পূর্বসূরির পাপে, প্রধানমন্ত্রী সেই ধাঁধার উত্তর দেন নাই।
উত্তরটি অবশ্য সহজ— দাম বাড়িয়াছে করের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে। দিল্লিতে এক লিটার পেট্রলের উপর কেন্দ্রীয় সরকার আমদানি শুল্ক বাবদ আদায় করে ৩২.৯৮ টাকা, রাজ্য সরকার ভ্যাট বাবদ আদায় করে ১৯.৫৫ টাকা। অর্থাৎ, পেট্রলের যাহা বাজারমূল্য, তাহার প্রায় ৫৫ শতাংশ কর হিসাবে যায়। ২০২০ সালের মার্চ মাসের তুলনায় বর্তমানে পেট্রলের বাজারদর ১৭ টাকারও অধিক বেশি। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম তলানিতে ঠেকিয়াছিল বলিয়া সরকার তেলের উপর শুল্কের পরিমাণ বাড়াইয়া দিয়াছিল— বাজারে তেলের দাম বাড়িবার পরও তাহা কমাইয়া উঠিতে পারে নাই। জওহরলাল নেহরু বা অটলবিহারী বাজপেয়ী নহেন, এমনকি মনমোহন সিংহও নহেন— পেট্রল-ডিজ়েলের ক্রমবর্ধমান দামের জন্য যদি কাহারও সরকারের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করিতে হয়, তবে সেই প্রধানমন্ত্রীর নাম নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী যতই অস্বীকার করুন, অন্যের ঘাড়ে দায় চাপান, সত্যটি বদলায় না।


তেলের উপর বর্ধিত হারে কর আদায় করা কি ন্যায্য সিদ্ধান্ত? পরিবেশের উপর পেট্রলিয়ামের নেতিবাচক প্রভাব, এবং শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পরিবহণেই পেট্রলের ব্যবহারের কথা মাথায় রাখিলে এই বর্ধিত করের যুক্তি পাওয়া যায়, সন্দেহ নাই। কিন্তু, ডিজ়েল যে হেতু গণপরিবহণে এবং পণ্য পরিবহণে ব্যবহৃত হয়, তাহার মূল্যবৃদ্ধি হইলে সরাসরি সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। যেখানে অর্থব্যবস্থার প্রয়োজনে নমনীয় আর্থিক নীতি প্রয়োগ করা হইতেছে, সেখানে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা এমনিতেই প্রবল। তাহার উপর ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধি বিপদ বাড়াইবে। অন্য দিকে, পেট্রলের উপর সেস চাপাইয়া কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে তাহাদের প্রাপ্য হইতে বঞ্চিত করিতেছে। ইহাও যুক্তরাষ্ট্রীয়তার ধর্মের বিরোধী। অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যভঙ্গ হইবার কারণে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ এমনিতে কম। পেট্রলিয়ামের উপর রাজস্ব বাড়াইয়া সরকার সেই ঘাটতি পূরণ করিতে চাহিতে পারে। কিন্তু, সেই সত্যটি স্বীকার করিবার সাহস না থাকা অতি লজ্জার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy