Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Society

প্রশ্নের অভ্যাস

খয়রাশোলের পারশুণ্ডি পঞ্চায়েত এলাকায় ‘দিদির দূত’ হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন শতাব্দী। সেখানেই দীর্ঘ দিন সংস্কার না-হওয়া একটি রাস্তার বেহাল অবস্থা নিয়ে দানা বেঁধেছিল অসন্তোষ।

Picture of Satabdi Roy.

ফুল্লাইপুর গ্রামে শতাব্দী রায়। — নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩৩
Share: Save:

দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে বিক্ষোভের সম্মুখীন হওয়া তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের কাছে বোধ হয় আর নতুন ঘটনা নয়। কিছু দিন আগে যেমন বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়েরও তেমন অভিজ্ঞতা হল। খয়রাশোলের পারশুণ্ডি পঞ্চায়েত এলাকায় ‘দিদির দূত’ হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন শতাব্দী। সেখানেই দীর্ঘ দিন সংস্কার না-হওয়া একটি রাস্তার বেহাল অবস্থা নিয়ে দানা বেঁধেছিল অসন্তোষ। গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়, রাস্তা না হলে ভোটও মিলবে না। অতঃপর রাস্তা তৈরির দাবি নিয়ে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া ও এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

উন্নয়নের কাজ দীর্ঘ সময় অবহেলিত থাকলে জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। কিন্তু, এটাও ঠিক যে, এক জন সাংসদের প্রধানতম দায়িত্ব স্থানীয় এলাকার উন্নয়ন নয়, সংসদে দেশের নীতি-নির্ধারণের প্রক্রিয়াটিতে সক্রিয় ভাবে যোগদান করা। তিনি অবশ্যই তাঁর নিজ নির্বাচন-ক্ষেত্রটির স্বার্থের কথা ভাববেন। প্রত্যেক বছর স্থানীয় এলাকার উন্নয়নের জন্য সাংসদ খাতে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই পরিমাণ টাকা যথাযথ ভাবে ব্যয় করা হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখবেন। কিন্তু তাঁর নির্বাচন-ক্ষেত্রের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের রাস্তার কেন সংস্কার হচ্ছে না, সেই উত্তর তাঁর কাছে দাবি করলে ভুল হবে। কেউ বলতে পারেন যে, শতাব্দী তাঁর সাংসদ পরিচয়ে নয়, গ্রামে গিয়েছিলেন ‘দিদির দূত’ হয়ে, ফলে মানুষ তাঁর সেই পরিচয়ের কাছেই নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কথাটি এক দিক থেকে ঠিক। কিন্তু, সম্পূর্ণত নয়। ভারতের বিভিন্ন ধরনের সড়ক নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিভিন্ন বিভাগের উপর ন্যস্ত। জাতীয় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বটি যেমন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত, একই ভাবে গ্রামীণ সড়ক এবং জেলা সড়কগুলির নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে রাজ্য সরকারের অধীন পিডব্লিউডি বা পঞ্চায়েতি প্রতিষ্ঠানগুলির হাতে। সুতরাং, সাংসদকে ভোট দেওয়া না-দেওয়ার উপর গ্রামীণ রাস্তার নির্মাণ বা সংস্কার নির্ভর করবে না। নবনির্বাচিত সাংসদও সে ক্ষেত্রে তাঁর সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারবেন না।

তবে, একই সঙ্গে কাজ না হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিকে প্রশ্ন করার অভ্যাসটিও বজায় রাখা প্রয়োজন। বস্তুত, এই দ্বিতীয় বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, তা সমস্ত গণতন্ত্রের একেবারে গোড়ার কথা। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে জয়ী হন শুধুমাত্র তাঁর দলীয় প্রতীকটির প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের জোরেই নয়, তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর দাবিদাওয়ার প্রতি যত্নবান হবেন, তাঁদের প্রয়োজনগুলিকে উপযুক্ত জায়গায় তুলে ধরবেন— এই প্রত্যাশাও ভোটদানের সঙ্গে জুড়ে থাকে। সেই নাগরিক পরিষেবা যদি যথাযথ না মেলে, তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করা নাগরিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। এবং এই প্রশ্ন করার কাজ শুধুমাত্র বিরোধী দলের সমর্থকদেরই নয়। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে শাসক দলের সমর্থককেও সমান ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায়, নির্বাচনী গণতন্ত্রের মৌলিকতম মাহাত্ম্য— অর্থাৎ, মানুষের কাছে জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা— খর্ব হবে। শেষ পর্যন্ত তাতে মানুষের ক্ষতি। দল-নির্বিশেষে।

অন্য বিষয়গুলি:

Society Politics Satabdi Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy