Advertisement
৩১ অক্টোবর ২০২৪
Israel Palestine Conflict

যুদ্ধতাপদগ্ধ

হামাস হামলার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইজ়রায়েল-এর পাশে দাঁড়ালেও পরবর্তী কালে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে কিন্তু স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গড়ে ওঠার পক্ষে ভারতের অবস্থানের কথাটিও উল্লিখিত হয়েছে।

ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের দিকে নজর গোটা বিশ্বের। —ফাইল চিত্র।

ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের দিকে নজর গোটা বিশ্বের। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৩৯
Share: Save:

ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাতের তিন সপ্তাহ অতিক্রান্ত। গাজ়ায় যত তীব্র হচ্ছে ইজ়রায়েল-এর হামলা, তত উত্তপ্ত হচ্ছে বিশ্ব ভূ-রাজনীতি। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি যেখানে ইজ়রায়েল-এর পক্ষে সওয়াল করছে, সেখানে ইরান, সৌদি আরব, তুরস্কের মতো পশ্চিম এশিয়ার বহু দেশ দাঁড়িয়েছে প্যালেস্টাইনিদের পাশে। পশ্চিম এশিয়ার এ-হেন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দুই অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র— চিন ও ভারতের অবস্থান কী? হামলার পরে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে হামাসের বিরুদ্ধে কোনও সমালোচনামূলক বিবৃতি প্রকাশিত না হলেও, গত সপ্তাহে দুই যুযুধান দেশকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষনেতা শি জ়িনপিং। সম্প্রতি চিনের সামরিক সেনা ওই অঞ্চলে ছ’টি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। লক্ষণীয়, গত কয়েক দশক ধরে পশ্চিম এশিয়ার আঞ্চলিক বিবাদ থেকে নিজেকে বিরত রাখার বৈদেশিক নীতিই পালন করে এসেছে চিন। এখানকার দেশগুলির সঙ্গে সে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে মূলত নিজের বাণিজ্যিক স্বার্থে। সে দেশের মোট অপরিশোধিত তেলের অর্ধেকের বেশি আমদানি হয় এই অঞ্চল থেকেই। তবে সাম্প্রতিক কালে, পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার উপরে জোর দিয়েছে চিন এক বিশেষ ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে— এই অঞ্চলে আমেরিকার প্রভাব প্রশমিত করতে। সাম্প্রতিক ইরান-সৌদি আরবের মধ্যে শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতায় অগ্রণী ভূমিকা নেয় চিন, যে দায়িত্ব এক সময় ছিল আমেরিকার।

অন্য দিকে, হামাস হামলার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইজ়রায়েল-এর পাশে দাঁড়ালেও পরবর্তী কালে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে কিন্তু স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গড়ে ওঠার পক্ষে ভারতের অবস্থানের কথাটিও উল্লিখিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইজ়রায়েল এবং আরব দুনিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার উপরেই জোর দেন। লক্ষণীয়, পশ্চিম এশিয়ার অনেক দেশই ভারতকে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে গণ্য করায়, সাম্প্রতিক কালে নয়াদিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক অংশীদারি গড়ে তুলেছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি ২০২১ সালে ইজ়রায়েল, আমেরিকা, সংযুক্ত আমির আমিরশাহিকে নিয়ে একটি নয়া অর্থনৈতিক জোট-ও (আইটুইউটু) গঠন করেছে ভারত। এ বারের জি-২০ সম্মেলনে ‘ইন্ডিয়া মিডল ইস্ট ইউরোপ ইকনমিক করিডর’ গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা ঘোষিত হয়, তাতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমির আমিরশাহিকে অংশীদার হিসাবে যুক্ত করা হয়েছে। তবে, ইজ়রায়েল-হামাস বিবাদের ফলে ভারতের এ-হেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনাসমূহ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার সম্ভাবনাই প্রবল। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধের আঁচ যদি ইজ়রায়েল গাজ়ার বাইরেও ছড়ায়, তবে পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনীতির পাশাপাশি ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কও প্রভাবিত হতে বাধ্য। পরিস্থিতি কঠিন বটে। তবে, ইজ়রায়েল তথা আরব দুনিয়া দু’তরফের সঙ্গেই ভারতের সুসম্পর্ক থাকায় এই ক্রমপরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের সাবধানতা অবলম্বন করে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়া গতি নেই। অর্থাৎ দিল্লির সামনে কঠিন পরীক্ষা। ইউক্রেন যুদ্ধে যেমন ভারসাম্য রাখার কূটনীতিতে সাফল্য মিলেছিল, ততটা সাফল্য এ ক্ষেত্রে আশা করা যায় কি?

অন্য বিষয়গুলি:

Israel Palestine Conflict India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE