Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Women Empowerment

মেয়ে বলিয়াই?

উত্তরে বলিতে হয়, শুধুমাত্র সংরক্ষণ, এবং কিছু আর্থিক সুবিধা দান করিলেই কোনও শ্রেণির সার্বিক উন্নয়ন করা যায় না, ক্ষমতায়নের ধারণাও ইহাকে সমর্থন করে না।

— ছবি সংগৃহীত

— ছবি সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ০৬:৪০
Share: Save:

বিজেপি নির্বাচনী ইস্তাহারে জানাইয়াছে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জিতিয়া ক্ষমতায় আসিলে মেয়েদের জন্য তাহারা সরকারি বাসে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ দিবে। এহেন কৃপাবর্ষণের কারণ? দলের একাংশ জানাইয়াছে, কর্মরতা মহিলাদের গৃহকর্মও করিতে হয়, সন্তানপালনের দায়িত্বও তাহাদেরই লইতে হয়। সুতরাং, রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে এই সুবিধাটুকু তাহাদের প্রাপ্য। আপাতদৃষ্টিতে এই রূপ ঘোষণায় চমক আছে, নিঃসন্দেহে। বহু নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মহিলা এবং পড়ুয়ার ইহাতে কিছু আর্থিক সাশ্রয়ও হইবে। কিন্তু প্রশ্ন, মহিলাদের জন্য ভাবা, বা কিছু করিবার অর্থ কি শুধুমাত্র এই বিনা পয়সায় যাতায়াতের সুযোগ দিবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? ইহাই কি তবে নারীর ক্ষমতায়নের পথ?

উত্তরে বলিতে হয়, শুধুমাত্র সংরক্ষণ, এবং কিছু আর্থিক সুবিধা দান করিলেই কোনও শ্রেণির সার্বিক উন্নয়ন করা যায় না, ক্ষমতায়নের ধারণাও ইহাকে সমর্থন করে না। বরং, এই ধরনের আর্থিক সুবিধা দানের মধ্যে এক রকম অবমাননা লুক্কায়িত থাকে। অবশ্য, সমাজব্যবস্থায় নারীর ভূমিকা বলিতে যাহারা শুধুমাত্র গৃহকর্ম এবং সন্তানপালনের ধারণা পোষণ করে, নারীর আদর্শ আচরণবিধি এবং পোশাক লইয়া দিবারাত্র চিন্তা করে, তাহাদের নিকট ইহা অপেক্ষা অধিক কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। সোই কারণেই এই প্রতিশ্রুতির মধ্যেও প্রবল পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা স্পষ্ট। যেন নারী অক্ষম বলিয়াই এই সুবিধাটুকু তাহাদের প্রয়োজন। প্রশ্ন জাগে, নারীদের সক্ষমতার জন্য সরকারি অবদান কি অন্যবিধ হইতে পারে না? ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারে তো গত সাত বৎসর ধরিয়া এই প্রতিশ্রুতিদাতারাই ক্ষমতায়। নারীর সক্ষমতার জন্য প্রয়োজন ছিল শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র-সহ সকল বিভাগে তাহাদের যোগদানের হার বৃদ্ধি করা গিয়াছে কি? ‘ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজ়েশন’-এর রিপোর্ট বলিতেছে, ১৯৯৯-২০০০ সালে ভারতে কর্মরতা মহিলাদের যে হার ছিল, বর্তমানে তাহা ১৪ শতাংশ কমিয়াছে। যাতায়াত-খরচ কমিলেও এই হার বাড়িবে না।

কর্মক্ষেত্রে যোগদানের হার বাড়িতে পারে কর্মক্ষেত্র, গণপরিবহণে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হইলে। তাহা কি হইয়াছে? যে দল নারীর এত ‘অগ্রগতি’র চিন্তা করে, সেই দলের শাসনেই উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের ন্যায় রাজ্যগুলিতে মেয়েদের দুরবস্থার সীমা নাই। ধর্ষণের সংখ্যায় উত্তরপ্রদেশের স্থান ভারতে প্রথম সারিতে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো-র পরিসংখ্যান বলিতেছে, ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটি করিয়া ধর্ষণ সংঘটিত হয়। যেখানে গৃহের বাহিরে পা রাখিলে ধর্ষিত হইবার ভয় তাড়া করে, সেখানে কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা যোগ দিবে কী ভাবে? সর্বাগ্রে প্রয়োজন কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। তবেই তো সে নিশ্চিন্তে ঘরের বাহিরে পা রাখিবে। আর্থিক কর্মকাণ্ডে অংশ লইবে। আর্থিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত হইলে তবেই ক্ষমতায়ন সম্ভব। রহিল পড়িয়া ভাড়ার সুবিধা। সেই খরচ যাহাতে মেয়েদের কমে, শুধুমাত্র মেয়েরাই নহে, অন্য অনগ্রসর শ্রেণিদেরও কমে, সেই লক্ষ্যে গণপরিবহণে মাসিক টিকিটের বন্দোবস্ত, কিংবা আকর্ষক ছাড় দিয়াও কিছু কিছু সামাজিক গোষ্ঠীকে সুবিধা দান করা যায়। জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের ইহাই কর্তব্য। তাহার জন্য ঢালাও বিনা পয়সার প্রতিশ্রুতির দরকার নাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Women Empowerment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy