—প্রতীকী ছবি।
অবশেষে ভারতের প্রবীণরাও এলেন স্বাস্থ্যবিমার আওতার ভিতরে। বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইআরডিএআই সম্প্রতি যে নির্দেশ জারি করেছে, তার ফলে পঁয়ষট্টি-ঊর্ধ্ব নাগরিকদের নতুন স্বাস্থ্য বিমা দিতে বাধ্য থাকবে বিমা সংস্থাগুলি। আগে থেকে কোনও রোগ থাকলেও বিমার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ক্যানসার, হৃদ্রোগ, এইচআইভি-র মতো কঠোর রোগে আক্রান্তদেরও অস্বীকার করা যাবে না। গ্রাহকদের সুবিধার জন্য কিস্তিতে প্রিমিয়াম নিতে পারবে সংস্থাগুলি। ভারতে স্বাস্থ্যবিমার প্রসার করতে হলে এই সুবিধাগুলি প্রয়োজন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। গত বছরে প্রকাশিত ন্যাশনাল ইনশিয়োরেন্স অ্যাকাডেমির তথ্য অনুসারে, ভারতের তিয়াত্তর শতাংশ মানুষ নেই স্বাস্থ্যবিমার আওতায়। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসার নিরাপত্তা নেই, ফলে প্রবীণরা বিশেষ ভাবে বিপন্ন হন। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বয়স্কদের স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্যতম পিছিয়ে পড়া দেশ ভারত। দক্ষিণ কোরিয়া বা তাইল্যান্ড যেখানে প্রায় সব দেশবাসীকে এনেছে বিমার অধীনে, সেখানে ভারতে প্রবীণদের মাত্র একুশ শতাংশের বিমা রয়েছে। একটি বড় অংশের পেনশনের মতো নিশ্চিত আয় নেই, পাশাপাশি নেই স্বাস্থ্যবিমাও। ফলে চিকিৎসার খরচ বহন করা তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। বহু পরিবারে প্রবীণরা বাধ্য হন বার্ধক্যেও কাজ করে যেতে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাধির আক্রমণ স্বাভাবিক, তাই অনূর্ধ্ব-পঁয়ষট্টি ব্যক্তিদের একটা বড় অংশও নতুন বিমা কেনার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। বিমার প্রসারে তাই বয়সের সীমা, এবং পূর্বের রোগ না থাকার শর্ত দু’টি উঠে যাওয়ার দরকার ছিল।
কিন্তু তার পরের প্রশ্নটি ওঠে টাকার। প্রবীণদের স্বাস্থ্যবিমা কেনার সুযোগ থাকলেও, তার প্রিমিয়াম যদি অত্যন্ত চড়া হয়, তা হলে তা সাধারণের নাগালের বাইরেই থেকে যাবে। ভারতে এই প্রশ্নটি তীব্র আকারে দেখা দিলেও, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ-সহ বেশ কিছু দেশে স্বাস্থ্যবিমার অধীনে অধিকাংশ নাগরিককে নিয়ে আসা একটি বড় পরীক্ষা হয়ে দেখা দিয়েছে দেশের প্রশাসনের কাছে। চিকিৎসায় উন্নতির জন্য সব দেশেই প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে— মোটের উপর এশিয়াতে প্রবীণরা এখন জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এঁদের স্বাস্থ্য পরিষেবা ও চিকিৎসা জোগানোর বিপুল খরচ মেটানো সহজ নয়।
তবে অন্য দিকে, প্রবীণদের উৎপাদনশীলতাও বাড়ছে। তাঁদের কাজ দেশের জিডিপি বাড়াচ্ছে। অতএব স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার সঙ্গে যে কর্মক্ষেত্র এবং উৎপাদনশীলতার সম্পর্ক রয়েছে, তা-ও মনে করিয়েছে এডিবি-র রিপোর্ট। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিমা থাকা তাই অত্যন্ত জরুরি। তবে ভারতের অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত দরিদ্র নারীপুরুষদের জন্য সে সুবিধা নেই বললেই চলে। এখনও অবধি অধিকাংশ মানুষ রয়েছেন সরকারি বিমার অধীনে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত,’ এবং সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারগুলির নিজস্ব বিমা (পশ্চিমবঙ্গে ‘স্বাস্থ্যসাথী’) দরিদ্র মানুষের সুচিকিৎসা পাওয়ার ভরসা। সুলভ ও সার্বিক সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কিন্তু স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। স্বাস্থ্যবিমা বাড়তি সুরক্ষার অস্ত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy