ডিজিটাল তথা অনলাইন শিক্ষা-পরিসর।
কোভিড-পূর্ব ও কোভিড-উত্তর, পৃথিবীর ইতিহাসকে ভবিষ্যৎ নির্দেশ করবে এ ভাবেই, বলছেন বিদগ্ধজন। স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ব্যক্তি ও সমাজমন, প্রতিটি পরিসরেই ছাপ ফেলেছে অতিমারি, পাল্টে দিয়েছে দেখার চোখ। আমূল বা রাতারাতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘বিপ্লবাত্মক’ বিশেষণটি বহুব্যবহৃত, কোভিডের ধাক্কায় বিশ্বের শিক্ষাক্ষেত্রও সেই পরিবর্তনই দেখেছে, বললে ভুল হবে কি? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণাগারের ঝাঁপ বন্ধ, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন স্তব্ধ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কিংবা ছাত্রদের পারস্পরিক সামীপ্য ভাইরাস-ভ্রুকুটিতে ছিন্ন হল যখন, তখনই উঠে এল বিকল্প: ডিজিটাল তথা অনলাইন শিক্ষা-পরিসর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি যথাশীঘ্র ও যথাসাধ্য মানিয়ে নিল এই ব্যবস্থা, এতটাই যে— কোভিড-পূর্ব ‘স্বাভাবিক’ শিক্ষাব্যবস্থা এখন লোকমুখে পরিচিতি পেয়েছে ‘অফলাইন’ নামে। কোভিডের প্রকোপ পেরিয়ে থিতু হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষত উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলি ‘অনলাইন’ ব্যবস্থাকে বরণ করেছে সমান্তরাল এমনকি মুখ্য পাঠ-প্রকরণ হিসেবেও। এখন তাকে আর শুধুই এক ‘বিকল্প’ বলা যাচ্ছে না।
অতিমারির চাপে বিশ্ব জুড়ে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ও প্রয়োগ পাল্টে দিয়েছে এত দিনের ভাবনাকেই। ধ্রুপদী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গী এবং প্রতিযোগী হয়ে উঠে এসেছে প্রচুর অনলাইন শিক্ষাক্ষেত্র— লার্নিং অ্যাপ, ওয়েবসাইট ইত্যাদি। ধ্রুপদী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিও পরিস্থিতি বুঝে চালু করেছে নিজস্ব ডিজিটাল পাঠ-ব্যবস্থা। এই সব কিছুই শিক্ষার্থীর সামনে এনে দিয়েছে প্রচুর সুযোগ, বেছে নেওয়ার জন্য বিস্তর বিকল্প— অনলাইন-অফলাইন দুই পরিসরেই। লকডাউনে গৃহ-বন্দি কোনও ছাত্র অনলাইনে আমেরিকা-ইউরোপের খ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘অফার’ করা অনলাইন কোর্সে পছন্দের বিষয় পড়তে পারছেন, তাদের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার বা আর্কাইভ ব্যবহার করতে পারছেন বিনামূল্যে, কিংবা বিখ্যাত ম্যানেজমেন্ট-প্রতিষ্ঠানের পাঠ-সহায়তায় ঝালিয়ে নিচ্ছেন নিজের ব্যক্তিত্ব বা দক্ষতার কোনও দিক-আঙ্গিক— এ জিনিস অতিমারির আগে বহুলাংশে কল্পনাতীত ছিল। আগে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পছন্দের বিষয়, পাঠ্যক্রম, প্রতিষ্ঠান বা পঠনপাঠনের ব্যবস্থা নির্বাচনে ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনতা ছিল কম, প্রতিষ্ঠান-নির্ধারিত নিয়ম-কাঠামোর মধ্যেই সেরাটুকু পাওয়ার জন্য লড়তে হত তাদের। অনলাইন ব্যবস্থা আসায় স্বাধীনতার দিগন্ত খুলে গিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে উচ্চশিক্ষা হয়ে উঠেছে সুবিধাজনক, শিক্ষার্থীবান্ধব।
শুধুই কুসুমাস্তীর্ণ কি এ পথ, বাধা নেই কোনও? কোভিডকালে ভারত বিলক্ষণ বুঝেছে, ডিজিটাল শিক্ষা-পরিসরে তার খামতি কতটা। অতিমারির পুরো সময় জুড়েই দেশে বিতর্কের বিষয় ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে— প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ স্তরে— বিকল্প শিক্ষা-পরিকাঠামোর অভাব ও অব্যবস্থা। সমীক্ষা দেখিয়েছে, গত দু’বছরে কত ছাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়েছে, পড়াশোনা বাদ দিয়ে যোগ দিয়েছে অন্নসংস্থানের কাজে। বিশ্বের বহু দেশ অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় নিজেদের পাল্টে নিতে পেরেছে, তার সামর্থ্য ও পরিকাঠামো দুই-ই তাদের আগে থেকেই ছিল বলে। ভারত পারেনি, একুশ শতকের তথ্যপ্রযুক্তিক্ষেত্রে তার বিরাট প্রতিভা সত্ত্বেও। এই অপারগতা অবিলম্বে ঘোচা দরকার। নইলে পাল্টে যাওয়া বিশ্বশিক্ষাঙ্গনে ক্রমশ তাকে পিছিয়ে পড়তে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy