Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Export of Products

সবুজ শিল্প

জলবায়ু পরিবর্তন আজ কেবল তাত্ত্বিক কথা নয়, তার প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। শিল্পের দূষণ উষ্ণায়নের এক প্রধান কারণ, অতএব স্বচ্ছ উৎপাদন কেবল রফতানির পণ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:১২
Share: Save:

ইউরোপের দেশগুলিতে রফতানি করতে চাইলে জানাতে হবে, পণ্য তৈরি করতে কত কার্বন নিঃসরণ ঘটেছে। আপাতত ইস্পাত, সিমেন্ট, রাসায়নিক সার এবং অ্যালুমিনিয়াম, এই শিল্পগুলি আসছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) বিধির অধীনে, যা বলবৎ হচ্ছে আগামী অক্টোবর থেকে। তথ্য না জানালে, বা ভ্রান্ত তথ্য দিলে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে। তথ্যের দাবি বস্তুত কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ। ২০২৬ সাল থেকে কার্বন কর (কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজ়ম ট্যাক্স) চালু করবে ইইউ। ভারতীয় শিল্পগুলি বিধি-নির্দিষ্ট সীমা মানতে পারবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এর ফলে ভারতের ইস্পাত, সিমেন্ট প্রভৃতির রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষত শতাধিক বছরের পুরনো ইস্পাত শিল্প এখনও কয়লা-নির্ভর। তা থেকে হাইড্রোজেন জ্বালানিতে বিবর্তন সহজে হবে না। কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রকের একটি তথ্য— উন্নত দেশগুলিতে যেখানে প্রতি টন ইস্পাত উৎপাদনে সাড়ে চার থেকে পাঁচ গিগা ক্যালরি জ্বালানি লাগে, সেখানে ভারতে লাগে ছয় থেকে সাড়ে ছয় গিগা ক্যালরি। পুরনো কারখানায় নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ, উৎপাদনের পুরনো অভ্যাস, নিম্নমানের কয়লা ও লোহা ব্যবহার প্রভৃতি কারণের জন্য জ্বালানির এমন অপচয় হচ্ছে, যা দূষণও বাড়াচ্ছে। সরকারের তরফে নানা বিধিনিষেধ তৈরি করে আরও দক্ষ উৎপাদনের পথে হাঁটার কথা বলা হচ্ছে বটে, কিন্তু শিল্পমহল থেকে বার বার দাবি উঠেছে, পরিকাঠামো উন্নত করতে প্রয়োজন সরকারি সহায়তা।

সংবাদে প্রকাশ, ইস্পাত শিল্পে উৎপন্ন দূষণ কী ভাবে মাপা হবে, সে বিষয়ে ইস্পাত মন্ত্রক ও বাণিজ্য মন্ত্রকের মধ্যে আলোচনা চলছে। প্রশ্ন হল, বিষয়টিকে কি কেবল রফতানির শর্তপূরণ হিসাবে দেখার কথা? গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে ভারত সরকার ২০৭০ সালে শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর যে পাঁচটি উপায়ের কথা বলা হয়েছিল তার অন্যতম, ২০৩০ সালের মধ্যে একশো কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে স্বচ্ছ, পুনর্ব্যবহার-যোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর অঙ্গীকারও করেছে সরকার। ঘোষিত লক্ষ্য: ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে উৎপন্ন জ্বালানির অর্ধেকই হবে ‘স্বচ্ছ’ জ্বালানি। কিন্তু তার জন্য পরিকাঠামো যত দ্রুত হারে নির্মাণ করার কথা, যত কঠোর হাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার কথা, তা কত দূর হয়েছে, জানা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠবে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরকার যে ঘোষণাগুলি করছে, দেশে তার প্রতিফলন কোথায়? কোন পণ্য উৎপাদক কতটা দূষণ করছে, সে তথ্য প্রকাশ করলে ক্রেতাদের একটি অংশও পরিবেশ-বৈরী পণ্যগুলি পরিহার করে চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। বদলাতে পারে উপভোক্তাদের পছন্দের নকশাও।

জলবায়ু পরিবর্তন আজ কেবল তাত্ত্বিক কথা নয়, তার প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। শিল্পের দূষণ উষ্ণায়নের এক প্রধান কারণ, অতএব স্বচ্ছ উৎপাদন কেবল রফতানির পণ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প থেকে কৃষি, মৎস্য ও পশুপালন— উৎপাদনের সব ক্ষেত্রে নিযুক্ত ব্যক্তি ও সংস্থাকে হিসাব করতে হবে, তাঁরা কতখানি প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করছেন, এবং কত গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করছেন। কার্বন বাণিজ্য শিল্পে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায়। ইইউ বিধি অনুসারে, কোনও পণ্যের প্রস্তুতিতে নিযুক্ত কলকারখানা সর্বোচ্চ কত কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করবে, তা বেঁধে দেওয়া হয়। যে সব উৎপাদন কেন্দ্র তার চেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ করে, তারা অবশিষ্ট ‘কার্বন ক্রেডিট’ বিক্রি করতে পারে। যারা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাদের বাড়তি কার্বন উৎপাদনের ছাড়পত্র ক্রয় করতে হবে। ‘কার্বন বাণিজ্য’ দূষণের পরিমাপ করে বলে দূষণের মাত্রা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে, এটা বাড়তি লাভ। অতএব পণ্য উৎপাদন-জনিত দূষণ কত হচ্ছে, তা পরিমাপের পদ্ধতি সম্পর্কে সর্বস্তরে প্রচার প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Carbon Emission Export
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy