রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
সাধারণ বাজেটের সংবাদ-সমারোহে রাহুল গান্ধী নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছেন, এ বড় কম কথা নয়। সে দিন তাঁর সংসদ ভবনে প্রবেশের সময় দলীয় অনুগামীরা যখন ‘ভারত জোড়ো’ ধ্বনি তুলে সাংসদকে অভ্যর্থনা জানান তখন যে দৃশ্যের জন্ম হয়েছিল, এই দৃশ্যবিলাসী ভুবনে তার কোনও মার নেই। এবং, লক্ষ করার বিষয়, শাসক দলের বাক্পটু মুখপাত্ররা এ নিয়ে তাঁদের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেননি। তাঁরাও হয়তো বুঝেছেন, রাহুল গান্ধী সম্পর্কে এ-যাবৎ তাঁরা যে ভঙ্গিতে যথেচ্ছ ঠাট্টাতামাশা করে এসেছেন, এখন তার ফল বিপরীত হতে পারে। সাড়ে চার মাসে দেশের এক ডজন রাজ্যে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পদযাত্রার মধ্য দিয়ে কংগ্রেস সাংসদ কেবল নিজের মুখচ্ছবিতেই পরিবর্তন আনেননি, তাঁর ভাবমূর্তিও বদলেছে। যে দলের মহানায়কের নাম নরেন্দ্র মোদী, তারা আর কিছু না জানুক, ভাবমূর্তির মূল্য বিলক্ষণ জানে। সম্ভবত, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পারিষদরা এ কথাও উপলব্ধি করেছেন যে, প্রতিপক্ষের এই নতুন ভাবমূর্তিটি নিছক প্রচারের আলোয় নির্মিত ‘হলোগ্রাম’ নয়, দিনের পর দিন রীতিমতো পরিশ্রম করে তিনি এটি অর্জন করেছেন। অগণন মানুষের কাছে পৌঁছে সরাসরি তাঁদের কথা শুনে এবং তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এক জন রাজনীতিক জনসংযোগ করছেন, এমন অভিজ্ঞতা থেকে ভারতবাসী বহু দিন বঞ্চিত ছিলেন। রাহুল গান্ধী যদি মনে করেন, ভারতীয় রাজনীতির মঞ্চে অবশেষে তিনি— পারিবারিক পরিচয়ের কারণে নয়, নিজের সামর্থ্যে— একটি সম্ভাবনা তৈরি করতে পেরেছেন, সেই ভাবনাকে অযৌক্তিক বলা যাবে না।
কিন্তু তিনি যদি আশা করেন যে, অতঃপর সেই সম্ভাবনা পূরণের পথটি ধরে রাজনৈতিক সাফল্যের এ-যাবৎ অধরা লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন, বিরোধী শিবিরের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবেন এবং শাসক দল তথা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্পর্ধী হিসাবে মধ্যমঞ্চে নিজেকে অনায়াসে প্রতিষ্ঠিত করবেন, তবে বলতেই হবে— ধন্য আশা কুহকিনী! কঠোর সত্য এই যে, রাহুল গান্ধী রাজনৈতিক পরিসরে লড়াই করার ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্যতা অংশত ফিরে পেয়েছেন, কিন্তু সেই লড়াই তাঁকে গড়ে তুলতে হবে। অত্যন্ত কঠিন লড়াই। কঠিন, তার প্রধান কারণ এই নয় যে, কংগ্রেস নির্বাচনী পাটিগণিতে অনেক পিছনে; প্রধান কারণ এই যে, রাজনীতির ময়দানে বড় আকারে ফিরে আসার জন্য যে সুস্পষ্ট দিশা এবং সতেজ ও প্রবল সংগঠনের দরকার, দলের ভান্ডারে সেই দুই বস্তুরই ঘোর অনটন।
বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের উগ্র এবং অসহিষ্ণু সংখ্যাগুরুবাদের বিপরীতে একটি উদার বহুত্ববাদী ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানে দাঁড়িয়েই রাহুল গান্ধীর দলটিকে তার দিশা নির্ধারণ করতে হবে, এ বিষয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু এ পর্যন্ত তারা সেই অবস্থানটিকে বলিষ্ঠ প্রত্যয়ের সঙ্গে দাবি করতে ব্যর্থ হয়েছে। শাসকের অন্যায়ের বিরোধিতায় কংগ্রেসের, বিশেষত রাহুল গান্ধীর ধারাবাহিক প্রতিবাদী ভূমিকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, সেই কারণেই সর্বভারতীয় রাজনীতির পরিসরে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকেই আক্রমণের প্রধান নিশানা হিসাবে চিহ্নিত করে এসেছেন। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী ভারতের বিপরীতে জাতীয়তার উদার ও বহুমাত্রিক ধারণাটিকে সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরতে না পারলে যথার্থ বিকল্প হিসাবে আত্মপ্রতিষ্ঠা দুঃসাধ্য। পাশাপাশি, রাজ্যে রাজ্যে, বিশেষত উত্তর ভারতের হৃতভূমিতে দলীয় সংগঠন গড়ে তোলাও কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তনের পক্ষে অত্যাবশ্যক। ভারত জোড়ো অভিযান এই দুই বিষয়েই অগ্রগতির জমি তৈরি করেছে। এক দিকে রাহুল গান্ধী বিদ্বেষের বিপরীতে সমন্বয়ের বার্তা দিতে পেরেছেন, অন্য দিকে বিভিন্ন রাজ্যে বহু উৎসাহী মানুষের সমর্থনের মধ্যে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধির সুযোগও লক্ষ করা গিয়েছে। উদ্যোগপর্ব সম্পন্ন, এ বার পরীক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy