প্যাকেটজাত খাবারের খাদ্যগুণের সুরক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ফাইল চিত্র।
মুখরোচক খাবারের রঙিন মোড়ক যতটা লোভনীয়, প্রায়ই ভিতরের বস্তুটি ততটা স্বাস্থ্যকর হয় না। কিন্তু তা বোঝার উপায় নেই, কারণ খাদ্যগুণ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য থাকে না প্যাকেটে। ফলে জনস্বাস্থ্যের উপর প্যাকেটবন্দি খাবারের কুপ্রভাব নিয়ে বার বার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ভারতের খাদ্য মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডর্স অথরিটি অব ইন্ডিয়া, সংক্ষেপে এফএসএসএআই) প্যাকেটের গায়ে তারকা চিহ্ন দিয়ে খাদ্যগুণ বোঝানোর প্রস্তাব করেছে। অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্যাকেটে অর্ধেক তারকা চিহ্ন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বোঝাতে পাঁচটি তারা, এমন নিয়ম থাকলে সহজেই ক্রেতারা স্বাস্থ্যকর খাবারকে চিহ্নিত করতে পারবেন। কিন্তু সুরক্ষা-সূচক তারকা পাওয়ার শর্ত কী, সে বিষয়ে ওই সংস্থার সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতবিরোধ তীব্র হয়েছে। এফএসএসএআই খাবারে যে পরিমাণ চিনিকে স্বাস্থ্যকর বলে দাবি করছে, চিকিৎসক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে সেই পরিমাণ (একুশ শতাংশ) চিনি খাবারে থাকলে তা সুরক্ষার সীমা লঙ্ঘন করে যায়। আবার, বেশি নুন, চিনি বা অতিরিক্ত চর্বি রয়েছে যে সব খাবারে, কেবল বাদাম বা ফলের মতো ভাল উপকরণ যোগ করে সেগুলোকে ‘স্বাস্থ্যকর’ বলে দাবি করে বহু উৎপাদক সংস্থা। এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে তারও বিরোধিতা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশ কিছু চিকিৎসক সংগঠন সতর্ক করেছে, অস্বাস্থ্যকর খাবারকে দুই কিংবা তিনটি তারকা চিহ্ন দিলে তা আরও বিভ্রান্তি ছড়াবে। এই বিতর্কে উঠে এসেছে একটি পুরনো প্রশ্ন— এফএসএসএআই কি নাগরিকের স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছে, না কি বাণিজ্যিক স্বার্থকে?
ভারতে যখন ডায়াবিটিস এবং হৃদ্রোগের প্রকোপ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, তখন প্যাকেটজাত খাবারের খাদ্যগুণের সুরক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে বইকি। আক্ষেপ, পশ্চিমের দেশগুলোর মতো ভারতেও এখন চটজলদি খাবার (‘ফাস্ট ফুড’) ক্রমশ প্রধান আহারের জায়গা অনেকটাই নিয়ে নিচ্ছে। শিশুদের হাতে চিপস, চকলেট বা ক্রিম বিস্কুটের প্যাকেট, নরম পানীয় তুলে দিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিও। এগুলিকে ঝুঁকিপূর্ণ খাবার বলে মনে করেন না অভিভাবকদের একটি বড় অংশ। মুখরোচক খাবারের চড়া স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার ফলে বহু শিশু সেগুলি নিয়মিত খাচ্ছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে এর কুফল এত দিনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, এবং প্রতিকারের নানা চেষ্টাও হয়ে গিয়েছে। শিশুদের অতিরিক্ত ওজন, হৃদ্রোগ এবং ডায়াবিটিস থেকে বাঁচাতে স্কুলগুলিতে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হয়, তা নিয়ে নিয়মিত প্রচার করা হয়। যে ভাবে সুপারমার্কেটে খাবার সাজিয়ে রাখা হয়, তা-ও শিশুদের সুস্থ খাদ্যাভ্যাসের উপযোগী করার চেষ্টা চলেছে। ভারতে এ সব কাজের প্রায় কিছুই হয়নি।
অথচ, কঠিন হলেও সে কাজকে ফেলে রাখা যায় না। সতর্কতামূলক প্রচার যে মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে পারে, সিগারেটের জনপ্রিয়তায় ঘাটতি তার দৃষ্টান্ত। প্যাকেটের গায়ে সতর্কীকরণ সেখানে কার্যকর হয়েছে। খাবারের ক্ষেত্রেও কোনটি কুখাদ্য, কোনটি উপকারী, তার স্পষ্ট নির্দেশ থাকা দরকার, এতে প্রলোভন অতিক্রম করে খাবারের ভালমন্দ যাচাই করে খেতে শেখার অভ্যাস তৈরি হতে পারে। তবে মান নির্ণায়ক চিহ্ন দানে শিথিলতা থাকলে হিতে বিপরীত হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy