Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Dirty Toilets

পরিচ্ছন্নতার অধিকার

সাফাইকর্মীর অভাব। বিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার সাম্প্রতিক ঘটনা নয়। বছরের পর বছর ধরে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলে আসছে।

A Photograph representing toilet

সাফাইকর্মীর অভাব। তাই শহরের বেশির ভাগ সরকারি বিদ্যালয়ে অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে পড়ুয়ারা। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১৫
Share: Save:

সাফাইকর্মীর অভাব। তাই শহরের বেশির ভাগ সরকারি বিদ্যালয়ে অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে পড়ুয়ারা। শিকার হচ্ছে নানা ধরনের সংক্রমণের। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ শোনা গিয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারাও কার্যত সেই অভিযোগকে স্বীকার করে নিয়েছেন। চিত্রটি ভয়াবহ। কোথাও স্কুলের আয়তন এবং ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত সাফাইকর্মী নেই, কোথাও আংশিক সময়ের জন্য সাফাইকর্মী রেখে কোনও ক্রমে কাজ চালানো হচ্ছে, কোথাও অর্থাভাবে সাফাইকর্মী রাখাই সম্ভব হয়নি। স্কুলে সাফাইকর্মী নিয়োগের অর্থ আলাদা ভাবে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। বড় স্কুলগুলি নিজ খরচে তার ব্যবস্থা করলেও যে স্কুল ছোট এবং পড়ুয়া সংখ্যা কম, তাদের সেই সুবিধা মেলে না। ফলে, স্বাস্থ্যসম্মত পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের ভাবনাটি আকাশকুসুমে পরিণত হয়।

বিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার সাম্প্রতিক ঘটনা নয়। বছরের পর বছর ধরে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলে আসছে। শুধু সরকারি স্কুল নয়, বহু নামী বেসরকারি স্কুলের শৌচাগারের চিত্রটিও আলাদা কিছু হয় না। স্বচ্ছ ভারত, নির্মল বাংলা-সহ নানাবিধ প্রকল্প এবং প্রচারের বৃত্ত থেকে কী ভাবে যেন স্কুলের শৌচাগারগুলি প্রতি বারই বাদ পড়ে যায়। অথচ, বাড়ির বাইরে এই প্রাঙ্গণটিতেই শিশু থেকে কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের দিনের অধিকাংশ সময় কাটে। পরিচ্ছন্নতার অভাবে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে জলের অভাবে দীর্ঘ ক্ষণ তারা শৌচাগারে না গিয়ে থাকার অভ্যাস রপ্ত করতে বাধ্য হয়। পরবর্তী কালে, বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। মূত্রনালির সংক্রমণের আশঙ্কাও থেকে যায়। আশ্চর্য এটাই যে, এত বছর ধরে এই চিত্র প্রদর্শিত হলেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের টনক নড়ে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা এবং মেয়েদের জন্য সুলভে স্যানিটারি প্যাড রাখার কথা ইতিপূর্বে বহু আলোচিত। কিন্তু তার বাস্তব প্রয়োগ কই? অর্থাভাবই যদি পরিচ্ছন্নতার এই অতি প্রয়োজনীয় অভ্যাসটি গড়ে তোলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান একান্ত কাম্য। স্কুল কর্তৃপক্ষকেই সেই বিষয়ে উদ্যোগ করে, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। জীবনের প্রারম্ভেই এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের দিকে ছাত্রছাত্রীদের ঠেলে দেওয়ার জন্য কোনও অজুহাতই যথেষ্ট হতে পারে কি?

তবে শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের শৌচাগারের অপরিচ্ছন্নতার কথা বললে চিত্রটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এ দেশে সার্বিক ভাবে শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে নাগরিকের ধারণা প্রায় শূন্য, প্রশাসনেরও তা-ই। শহর কলকাতাতেই কিছু দূর অন্তর সুদৃশ্য সুলভ শৌচাগার নির্মিত হয়েছে। কিন্তু তাতেও পরিচ্ছন্নতার ন্যূনতম আশা করা চলে না। রেলের শৌচাগারের ভয়াবহতা প্রায় গল্পকথায় পরিণত। পরিচ্ছন্নতার ধারণা রাতারাতি গড়ে ওঠে না। শৈশব থেকেই এর অভ্যাস প্রয়োজন। পরিচ্ছন্নতা একটি স্ব-ভাবে তৈরি হওয়া আবশ্যক। পরিচ্ছন্নতা একটি নাগরিক ‘অধিকার’ হয়ে ওঠা আবশ্যক। এ দিকে বিদ্যালয় স্তর থেকেই যদি শৌচাগারের অপরিচ্ছন্নতা ‘স্বাভাবিক’ হয়ে ওঠে, তবে এই বৃত্ত ভাঙবে কী করে?

অন্য বিষয়গুলি:

dirty toilets school Colleges Cleaning Staffs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE