Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Animal Movie

কেবলই ছবি?

গণতন্ত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকার করলে অবশ্য সেটা বলা যায় না। চলচ্চিত্র নামের শিল্পমাধ্যমটিতে পরিচালক তাঁর ভাবনার প্রকাশ পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেই পারেন, সেই ভাবনা যতই অনগ্রসর বা পশ্চাৎপদ মনে হোক না কেন।

‘অ্যানিম্যাল’-এ রণবীর কপূর।

‘অ্যানিম্যাল’-এ রণবীর কপূর। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩২
Share: Save:

চলচ্চিত্রে কী ‘দেখানো উচিত’ এবং কী ‘দেখানো হচ্ছে’, এই দুইয়ের দ্বৈরথে জনপরিসর আরও এক বার আলোড়িত, অ্যানিম্যাল ছবিটির সূত্রে। প্রণয়িনীর প্রতি এবং মেয়েদের প্রতি ছবির মুখ্যচরিত্রের যে দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ তা নারীবিদ্বেষের, এমনকি নিগ্রহের নামান্তর; চরিত্রটির ব্যক্তিগত যন্ত্রণাদগ্ধ অতীতের জের যৌবনে তার প্রেম-ভালবাসাতেও প্রভাব ফেলছে, নারীকে সে দেখছে নিতান্ত ও একমাত্র দখলদারির দৃষ্টিতে, তাকে ‘রক্ষা’র মধ্যেও ফুটে বেরোচ্ছে প্রবল ও বিষাক্ত পৌরুষ— এই সবই ছবিটির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ’। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমানাধিকার সমানুভূতি ‘সম’তন্ত্রের বার্তাবহ এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এ ছবি আসলে ক্রমাগত পিছনপানে তাকাচ্ছে, প্রাচীনপন্থা রক্ষণশীলতা পিতৃতন্ত্র পুরুষতন্ত্র আদি সমাজশৃঙ্খলগুলিরই জয়গান গাইছে, তাই একে নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত, বলছেন অনেকে।

গণতন্ত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকার করলে অবশ্য সেটা বলা যায় না। চলচ্চিত্র নামের শিল্পমাধ্যমটিতে পরিচালক তাঁর ভাবনার প্রকাশ পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেই পারেন, সেই ভাবনা যতই অনগ্রসর বা পশ্চাৎপদ মনে হোক না কেন। প্রতাপী, বিষাক্ত পৌরুষের ভাবনাটি বহুলাংশের কাছে অপ্রিয়, তা বলে তা নিয়ে ছবি তৈরি করা যাবে না, বা ছবিতে তা দেখানো যাবে না, এই যুক্তি শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতার পরিপন্থী। এ তর্ক নতুন নয়— বিশ্বের ইতিহাসে সাহিত্য চিত্রকলা ভাস্কর্য গান নাচ থিয়েটার-সহ কোনও শিল্পপরিসর বাকি নেই যেখানে ঔচিত্য-অনৌচিত্যের এই তর্ক ওঠেনি, চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তম শিল্পমাধ্যম বলে সেখানে তা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান ও আলোচিত। সিনেমার শুরুতেই বলে দেওয়া হয় যে, পর্দায় যা দেখানো হচ্ছে সবই ‘মনগড়া’, কোনও সাদৃশ্য পাওয়া গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়। অ্যানিম্যাল ছবির মুখ্যচরিত্র নারীবিদ্বেষী বলে তার থেকে মুখ ফেরানো যেতে পারে, প্রতিবাদ করা যেতে পারে, কিন্তু তা ‘দেখানো যাবে না’ বা ‘দেখানো উচিত নয়’, এমন নিদান ফতোয়ার শামিল। শিল্পের একটি কাজ আঘাত করা, যা কিছু অপ্রিয় অথচ সত্য তা তুলে ধরা। মানুষ আগাগোড়া ‘মানবিক’, এই স্বতঃসিদ্ধের দিকে আঙুল তুলে তার ভিতরের ‘জান্তব’কে তুলে ধরেছে আলোচ্য ছবিটি, এ যুক্তিও অসার নয়।

ব্যবসাসাফল্যের সঙ্গে শিল্পের উৎকর্ষের সম্পর্কটি জটিল, সুপারহিট ছবি মাত্রেই রসোত্তীর্ণ বা যুগান্তকারী ছবি নয়। অ্যানিম্যাল ছবিটি এর মধ্যেই নানা রেকর্ড ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ বিপুল সংখ্যক মানুষ এ ছবি দেখছেন। মনস্তত্ত্ববিদরা বলেন, অপ্রিয় ও কদর্যের প্রতি মানুষের একটি গভীর গোপন টান আছে, বহিরঙ্গে ছি-ছি করলেও মনে মনে সে হিংসার নানা রূপ-রূপান্তরের প্রদর্শন-অভিলাষী, অপরাধ তদন্ত পুলিশ খুনি-সম্বলিত বই বা ছবির এত জনপ্রিয়তার ও-ও হয়তো একটা কারণ। সমসময়ের রাজনীতি ও সমাজচিত্রও শিল্পের মুকুরে ছায়া ফেলে: সিনেমার ‘নায়ক’ হয়ে ওঠে সমসময়েরই ইচ্ছাপূরণের কল। অ্যানিম্যাল ছবিটি এই দেশ কাল রুচিরই বিস্ফোরণ কি না, তা বিশ্লেষণের কাজটি সমাজতাত্ত্বিকের। শিল্পকে কাঠগড়ায় তোলা গেলেও তার ‘বিচার’ করা চলে না, তাকে ‘বিবেচনা’ করতে হয়। অপ্রিয় দুষ্পাচ্য নায়ককে ধিক্কার দেব আর অতিমানবিক ভাল নায়ককে বলব ‘ও সব সিনেমাতেই হয়’, এই জন-দ্বিচারিতা বন্ধ হলেই মঙ্গল।

অন্য বিষয়গুলি:

Bollywood Controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy