রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
ভারত জোড়ো-র প্রথম যাত্রার লক্ষ্য ছিল ঐক্য, দ্বিতীয় যাত্রায়— ন্যায়। রাহুল গান্ধীর যাত্রার এই দ্বিতীয় পর্বটি যে উত্তর-পূর্ব থেকে শুরু হয়েছে, লক্ষ্যটি মনে রাখলে তা একটা আলাদা মর্যাদা পায় নিঃসন্দেহে। গত কয়েক বছর ধরে অসম প্রদেশে এনআরসি রাজনীতি যে ভয়ঙ্কর অস্থিতি ও সঙ্কট তৈরি করে রেখেছে, এবং গত বছরটিতে মণিপুরে যে তীব্র হিংসার অন্ধকার নেমে এসেছে, সব মিলিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে ধর্ম-ভাষা-জাতিপরিচয় সমস্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভাজিকা রেখা জুড়ে যে ভাবে বিষতরঙ্গ উঠতে দেখা গিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায়ের দাবি তোলার জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের থেকে উপযুক্ত মঞ্চ এখন আর কিছুই হতে পারে না। গোটা অঞ্চলে শাসক দল বলতে এখন একমাত্র বিজেপি-ই, সুতরাং তাকেই এই অতিবিপন্ন বাস্তবের দায়িত্ব নিতে হবে। অসমে এনআরসি নিয়ে যে আতঙ্ক-পরিবেশ বিরাজ করছে, যত মানুষ অধিকারহীন হয়ে পড়ছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার উপরেই সেই দায় বর্তায়। গত বছর মণিপুরে হিংসাত্মক তাণ্ডব শুরু হওয়ার পর সে দিকে ন্যূনতম প্রশাসনিক মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ সর্বতোভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে প্রথম কথাটি উচ্চারণ করার সময় পেয়েছেন বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পর। প্রধানমন্ত্রী মোদী জি২০ থেকে রামমন্দির পর্যন্ত নিজমহিমাবিধৌত কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও এ দিকে তাকানোর অবকাশ পাননি। এক দিকে রাজনৈতিক দখল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভাজন ও বিদ্বেষ বিষিয়ে তোলার চেষ্টা, অন্য দিকে সামাজিক অস্থিরতার প্রতি অবহেলা। শাসক বিজেপির জোড়া ‘কৃতিত্ব’র পরিপ্রেক্ষিতে ‘ন্যায় যাত্রা’র জন্য উত্তর-পূর্ব ভারত অবশ্যই প্রকৃষ্টতম মঞ্চ হিসাবে প্রস্তুত ছিল।
নেপথ্য ছবিটিই বুঝিয়ে দেয়, কেন যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা অসমের আদালতে উৎক্ষিপ্ত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা কৌশলে তো বটেই, ছলে বলেও রাহুল গান্ধীকে উত্ত্যক্ত করতে চাইছেন, সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করে যাত্রায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। রাহুল গান্ধীর উপর শারীরিক হামলার চেষ্টা হয়েছে, তাঁকে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি, পথে ব্যারিকেড তৈরি করে তার পর সেই বাধা সরানোর চেষ্টা করা হলে তার বিরুদ্ধে ‘পুলিশ-প্রশাসনের উপর হামলা’র অভিযোগ তোলা হয়েছে। কেবল রাহুল একা নন, ওই অঞ্চলের ছাত্রছাত্রী, তরুণ সমাজের উপরও যথেষ্ট হামলার অবকাশ পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যুত্তরে রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, যত ইচ্ছা মামলা মুখ্যমন্ত্রী দায়ের করতে পারেন, তিনি ভয় পাবেন না, পিছিয়ে আসবেন না। তাঁর বয়ানে: হিমন্তবিশ্ব শর্মা দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্ষতিকারক মুখ্যমন্ত্রী, তিনি অঞ্চলের বসবাসীদের জমি কেড়ে নিচ্ছেন, এবং তাঁদের নাগরিক অধিকার দলিত করছেন— সুতরাং স্বভাবতই এখন বিরোধী নেতার অবমাননা করতে মুখ্যমন্ত্রী অনেক দূর যেতে পারেন।
সম্ভবত বিজেপির মূল উদ্দেশ্যটি পূর্ণ হচ্ছে ঠিকঠাক: রাহুল গান্ধী একটি শান্তিপূর্ণ যাত্রার পরিকল্পনা করলেও যাত্রাটিকে শেষ পর্যন্ত এক তীব্র অশান্তির উৎস হিসাবে প্রতিভাত করতে অসমের বিজেপি সরকার মোটের উপর সফল। এই পরিস্থিতিতে দুই দিকেই বিজেপির লাভ। যদি রাহুলবাহিনী তাঁদের সামনে উত্থিত বাধাকে ততটা প্রতিহত করতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে বিজেপির সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণের দাবিটিই সমর্থিত হয়। আর যদি রাহুলবাহিনী বাধার উত্তরে উল্টো প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, তাতে যে অশান্তি পাকিয়ে উঠবে, তাতেও তাঁদের উপরে শান্তিভঙ্গকারীর পরিচিতি আরোপ করা যায়। কৌশলের দিক দিয়ে কেন হিমন্তবিশ্ব শর্মা তাঁর আশীর্বাদক দিল্লীশ্বরদের ‘যোগ্য’ উত্তরসূরি, তা এর থেকেই সুবোধ্য। কেবল যাত্রা দিয়ে নয়, কৌশলকে ঠেকাতে জরুরি প্রতিকৌশল। রাহুল গান্ধী ও তাঁর দল সে কথা মনে রাখছেন কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy