Advertisement
E-Paper

স্বাধীনতার রক্ষী

বিষয়টি অতি মাত্রায় গুরুতর বলেই বার বার বলা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ২০২২ সালের নভেম্বরে বলেছিলেন, আদালত ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রশ্নটিকে অগ্রাধিকার দেবে।

CJI D.Y. Chandrachud

—ফাইল চিত্র ।

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:০৭
Share
Save

জামিনই নিয়ম, জেল ব্যতিক্রম, এই নীতি উপেক্ষিত হচ্ছে নিম্ন আদালতগুলিতে, ইতিমধ্যে মনে করালেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সম্প্রতি গুজরাতে জেলা আদালতের বিচারকদের একটি সম্মেলনে তিনি বলেন, নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারকে গুরুত্ব না দেওয়ার প্রবণতা বদলাতে হবে। তাতে এক দিকে যেমন জামিন বিষয়ে সাধারণ মানুষের ধারণার পরিবর্তন হবে, অন্য দিকে তেমনই কমবে উচ্চতর আদালতগুলির উপর চাপ। নিম্ন আদালতে জামিন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন বেড়েই চলেছে। জামিন আবেদনের বিপক্ষে পুলিশের যুক্তিগুলিকে যথেষ্ট খুঁটিয়ে না দেখেই বিচারকরা জামিন প্রত্যাখ্যান করছেন। এই অভিযোগ অমূলক নয়, তার প্রমাণ— ভারতে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা সাজাপ্রাপ্ত বন্দির তিনগুণ। ২০২২-এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী ৫,৫৪,০৩৪ বন্দির মধ্যে ৪,২৭,১৬৫ (৭৬%) বিচারাধীন বন্দি। এঁদের একটি বড় অংশ গরিব ও দুঃস্থ মানুষ। অনেকেই ছোটখাটো চুরির দায়ে বন্দি, আবার অনেকে নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও আইনজীবী নিয়োগের অপারগতার জন্য বন্দি। এই বন্দিরা জামিন পেলে অপরাধের প্রমাণ লোপ করে দেবেন, সাক্ষীদের উপর চাপ সৃষ্টি করবেন, এমন ধরে নেওয়া চলে না। তা সত্ত্বেও তাঁরা জামিন পাচ্ছেন না, বিচারও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দুই বা তিন দশক জেলে থাকার পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে ছাড়া পেয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের কথা বারংবার সংবাদে উঠে এসেছে। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেও সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে (১০-৪)।

বিষয়টি অতি মাত্রায় গুরুতর বলেই বার বার বলা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ২০২২ সালের নভেম্বরে বলেছিলেন, আদালত ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রশ্নটিকে অগ্রাধিকার দেবে। সেই অনুসারে বিচারপতিদের প্রত্যেক বেঞ্চ দিনে অন্তত দশটি জামিনের মামলা শুনবে, এমনও জানা গিয়েছিল। প্রথম যে আদালতে জামিনের শুনানি হচ্ছে, সেখানেই অভিযুক্তের মুক্তির দাবিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে, এবং সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া জামিন প্রত্যাখ্যান করা হবে না— এই পরামর্শকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল ভারতের জেলা ও মহকুমা স্তরের আদালতগুলিতে। অথচ কার্যক্ষেত্রে, জামিন প্রত্যাখ্যান ঘটেই চলেছে। এ দিকে সম্প্রতি অন্তত দু’টি কারণে প্রধান বিচারপতির এই পরামর্শের গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। এক, ভারতে নতুন ফৌজদারি আইন যদি পয়লা জুলাই থেকে কার্যকর হয়, তা হলে অভিযুক্তকে পুলিশের হেফাজতে রাখার সীমা পনেরো দিন থেকে বেড়ে নব্বই দিন হবে। যদিও এই সময়ে জামিন পাওয়া কঠিন হয়, তা হলেও দীর্ঘ বন্দিত্বের কারণে জামিনের আবেদনের সংখ্যা বাড়বে। নিম্ন আদালত জামিন প্রত্যাখ্যানের প্রবণতা বজায় রাখলে উচ্চতর আদালতগুলিতে আবেদন আরও বাড়তে বাধ্য। ফলে বিচারে আরও বিলম্ব, এবং অকারণে ব্যক্তিস্বাধীনতা লঙ্ঘিত হওয়ার সম্ভাবনা আরও তীব্র হতে বাধ্য।

দুই, পুলিশ-প্রশাসন যার উপরে বিরূপ, তাকে বিচারাধীন বন্দি করে জেলে ভরে ‘শিক্ষা দেওয়া’-র প্রচলন ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। যে উদ্দেশ্যে আইনি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আটককারী কর্তৃপক্ষের হাতে, সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যেই সেই ক্ষমতার প্রয়োগ হচ্ছে, অপর কোনও উদ্দেশ্যে হচ্ছে না, এ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। বিরোধীদের উপর মিথ্যা মামলা আরোপ করে ভীতিপ্রদর্শন ও হয়রান করতে চাইছে রাষ্ট্র। সে ক্ষেত্রে পুলিশ বা তদন্তকারী কোনও বিভাগ যে অপর কারও নির্দেশে কাজ না করে স্বাধীন ভাবে কাজ করছে, তা নিশ্চিত করতে হবে আদালতকেই। গত বছর জুলাইয়ে বিচারাধীন বন্দিদের সংখ্যাধিক্যের দিকে নির্দেশ করে শীর্ষ আদালত বলেছিল, গণতন্ত্র কখনও পুলিশ রাষ্ট্র হতে পারে না। তা যাতে না হয়, সেটা দেখার প্রথম দায়িত্ব বিচারবিভাগেরই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Supreme Court Law Court Democracy

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}