Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Voting

নাগরিকের প্রত্যাশা

দ্বিতীয় অভিযোগ, কমিশন কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিধি বলবৎ করিবার বিষয়ে যথেষ্ট কঠোর নহে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২১ ০৫:৩৪
Share: Save:

নির্বাচনই যে গণতন্ত্রের পক্ষে যথেষ্ট নহে, তাহা এখন ঘরে-বাহিরে সুস্পষ্ট। তবু নির্বাচনও গণতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভারতের মানুষ বরাবর সেই গুরুত্বকে প্রভূত স্বীকৃতি দেন। ভোট দিয়া কতটুকু লাভ হয়, সেই বিষয়ে বিস্তর সংশয় সত্ত্বেও তাঁহারা নিয়মিত প্রবল উৎসাহে ভোট দেন। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রথম পর্বে ত্রিশটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোটাধিকারী নাগরিকদের শতকরা ৮৫ জন চৈত্রের উত্তাপ সর্বাঙ্গে ধারণ করিয়া ভোট দিয়াছেন— এই পরিসংখ্যানে আরও এক বার জানা গিয়াছে যে, তাঁহারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আপন ভূমিকাকে কতটা মর্যাদা দিয়া থাকেন। সেই কারণেই অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বটি এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেই দায়িত্বের নির্বাহক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তির ঘোষণার পরে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসন অনেকাংশে কমিশনের নিয়ন্ত্রণে চলিয়া যায়, ফলে তাহার অধিকার এবং দায়, দুইই বিপুল আকার ধারণ করে। কমিশনের নিকট নাগরিকদের প্রত্যাশাও সেই অনুপাতেই বেশি হইবে, তাহা স্বাভাবিক। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান নির্বাচনপর্বে এযাবৎ সেই প্রত্যাশা কত দূর পূর্ণ হইয়াছে? প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাকে যদি একটি মাপকাঠি হিসাবে গণ্য করা হয়, তবে কমিশন খুব খারাপ ফল করে নাই। ভোটযন্ত্রে কারচুপি, দুই বা ততোধিক গোষ্ঠীর সংঘর্ষ, ভোটপ্রার্থী, রাজনৈতিক কর্মী এবং ভোটদাতাদের উপর আক্রমণ বা তাঁহাদের বাধাদান ইত্যাদি নানা অভিযোগ উঠিয়াছে। তবে সামগ্রিক ভাবে ‘কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা সত্ত্বেও ভোট শান্তিপূর্ণ’ বলিয়া কমিশন যে দাবি করিয়াছে, তাহাকে উড়াইয়া দেওয়া যাইবে না। কিন্তু সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হইবারও কারণ নাই। প্রশ্ন এবং সংশয়ও থাকিয়া গেল বইকি। কিছু দিন ধরিয়াই কমিশনের কার্যকলাপ সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা অভিযোগ জানাইয়া আসিতেছে। কমিশনের প্রতি শাসক দলের বিরাগের একটি কারণ— প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণের শুরু হইতে কার্যত ভোটপর্বের পূর্বাহ্ণ অবধি কমিশন বিভিন্ন সরকারি আধিকারিককে পদ হইতে সরাইয়া দিয়াছে, অনেককেই নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও পদে না-বসাইবার নির্দেশ দিয়াছে। এই ধরনের হস্তক্ষেপ অপ্রত্যাশিত নহে— রাজ্য প্রশাসনে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আধিকারিকদের প্রাদুর্ভাবের অভিযোগ সুপরিচিত। তবে, প্রত্যাশা ইহাই যে, কমিশনের আদেশের পিছনে বিপরীত কোনও পক্ষপাত কাজ করিতেছে না।

দ্বিতীয় অভিযোগ, কমিশন কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিধি বলবৎ করিবার বিষয়ে যথেষ্ট কঠোর নহে। বিশেষ করিয়া বিভিন্ন অঞ্চলে ‘বহিরাগত’দের প্রবেশ ও বিচরণ নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশি তৎপর হওয়া দরকার ছিল। দরকার ছিল তথাকথিত বাইক বাহিনীর দাপট বন্ধ করা, কারণ এই ধরনের যূথশক্তির প্রদর্শনী জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করিয়া নির্বাচনী পরিবেশকে কলুষিত করে। সাম্প্রতিক কালে এই প্রবণতা বাড়িয়াছে, তাহার প্রমাণ যথেষ্ট। কেবল সরকারি পক্ষ নহে, এই ক্ষেত্রে কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করিয়াছে বিরোধী শিবিরের বিভিন্ন দলও। সাধারণ ভাবেও, ২০১৯ লোকসভা ভোটের মতোই এই নির্বাচনেও রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায়, বিশেষত অন্য রাজ্যের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বহিরাগতদের দাপট প্রকট। ইহাও তাৎপর্যপূর্ণ যে, রাজ্য প্রশাসন-সহ বিভিন্ন তরফের অভিযোগের পরে কমিশন প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সীমান্তে নজরদারির নির্দেশ দিয়াছে, ওই রাজ্যগুলিকেও তদারকি করিতে বলিয়াছে। এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন নহে। ভিত্তিহীন নহে নির্বাচনের প্রথম দিনে কিছু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর যথেচ্ছাচারের অভিযোগও। নিষ্ক্রিয়তা এবং অতিসক্রিয়তা, দুই গোত্রের অভিযোগই যাহাতে কমানো যায়, নির্বাচন কমিশন তাহার জন্য সমস্ত প্রকার চেষ্টা করিবে, ইহাই পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা।

অন্য বিষয়গুলি:

General citizens Voting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy