—প্রতীকী ছবি।
এক বছর আগে, গত অক্টোবরে, ভারতের সর্বোচ্চ আদালত একটি তদন্তের নির্দেশ দেয়: বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে পেগাসাস সফটওয়্যারের সাহায্যে কেন্দ্রীয় সরকার বেআইনি নজরদারি করছে কি না খতিয়ে দেখার জন্য। অনেকগুলি মামলার প্রেক্ষিতে এসেছিল আদালতের সেই কঠিন নির্দেশ। এক বছর পর আবারও একই অভিযোগ নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে: বাণিজ্যিক স্পাইওয়্যারকে নজরদারির অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছে দেশের বাছাই-করা নাগরিকদের কার্যকলাপের উপর চোখ রাখার লক্ষ্যে। সম্প্রতি কিছু বিরোধী নেতা এবং সাংবাদিকের ফোনে একই সঙ্গে অ্যাপল থেকে একটি ‘অ্যালার্ট নোটিফিকেশন’ আসার পরই বিষয়টি প্রকাশ্য হয়। অভিযোগ সপাটে অস্বীকার করেছে সরকার, যদিও মৌখিক অস্বীকার দিয়ে বেশি দূর এগোনো মুশকিল। যে-হেতু বারংবার একই মর্মে অভিযোগ উঠছে, একই ধরনের সন্দেহজনক স্পাইওয়্যারের সন্ধান মিলছে, কিছু যে একটা ঘটছে কিংবা ঘটানো হচ্ছে, তা এখন আর নিছক সংশয়ের পর্যায়ে থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত, গত বছরের সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশের পর আদালত নিযুক্ত কমিটি শেষ পর্যন্ত কোনও নিশ্চিত সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি। তবে কমিটি-রিপোর্টে উঠে এসেছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য যে, সরকারি তরফ থেকে এই তদন্তে যৎপরোনাস্তি অসহযোগিতা করা হয়েছে। সন্দেহ নিরসনের পদ্ধতিতে এত অনীহা কেন? তবে কি তদন্তে গোলমেলে কিছু বেরিয়ে পড়বে, আশঙ্কা এমনই?
পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে দেখে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী জানিয়েছেন যে, এই ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত নিশ্চয়ই তাঁরা করবেন। মন্ত্রিবরের কথায় ভরসা রাখতে পারলে স্বস্তি পাওয়া যেত। তবে বিগত নানা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সে স্বস্তিবোধ লাভ করা সহজ হচ্ছে না। উপর্যুপরি অভিযোগ এলে নাগরিক কী ভাবে সরকার-প্রতিশ্রুত ‘উপযুক্ত তদন্ত’-এর উপর আস্থা রাখবেন? এত জন গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয়ের ফোনে একই দিনে একই সঙ্গে এমন অ্যালার্ট আসার ঘটনাটি কি কাকতালীয় হতে পারে? লক্ষণীয়, কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে, শশী তারুর, সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, সিপিএম-এর সীতারাম ইয়েচুরি, শিব সেনার প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী, আপ-এর রাঘব চড্ডা সকলেই ‘অ্যালার্ট’ পেলেন এমন সময়ে, যখন সামনে অনেকগুলি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, এবং অদূরেই জাতীয় নির্বাচন। অনুমান করা যায়, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এঁদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত গতিবিধির উপর নজর রাখা এবং সেই মর্মে ‘হুমকি’ পাঠানোর ঘটনায় কোন পক্ষের স্বার্থ কী ভাবে পূর্ণ হতে পারে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান গণতন্ত্রে বসে দেশের সরকারের বিষয়ে উপর্যুপরি এই অভিযোগ বলে দেয়, গণতন্ত্র বস্তুটি নরেন্দ্র মোদী সরকারের সাড়ে নয় বছরের শাসনে কোন তলানিতে অবনমিত হয়েছে।
ঠিক দশ বছর আগে রাষ্ট্রের গোপন নজরদারির কার্যবিধি বিষয়ে এডওয়ার্ড স্নোডেনের অসমসাহসিক অনুসন্ধান প্রকাশ্য হয়েছিল। সে কথা বহুজনবিদিত। তবে একটি তথ্য হয়তো ততটা বহুজ্ঞাত নয়। আমেরিকার তরুণ নাগরিক স্নোডেন কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধিতার বোধ থেকে এই অনুসন্ধান শুরু করেননি, বরং রীতিমতো সরকার-অনুগত নাগরিক ছিলেন তিনি। কী ভাবে গণতন্ত্রের আড়াল অবলম্বন করে তাঁর দেশের সরকার নিজের সঙ্কীর্ণ স্বার্থ
চরিতার্থ করে, সেই সত্যের ক্রম-উপলব্ধিই তাঁকে সরকারের শত্রু করে তুলেছিল। আজকের ভারতের নেতামন্ত্রীরাও হয়তো ভুলে যাচ্ছেন যে, যত বেশি এই ধরনের নজরদারির তথ্য প্রকাশ্য হবে, বিরোধিতা তলে তলে ততই গভীর ও ব্যাপ্ত হয়ে উঠবে। এবং বৃহত্তর অর্থে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্যের
প্রতি আস্থাও এর ফলে অনেকখানি ধ্বস্ত হবে। সেই ক্ষতি— গভীরতর, ব্যাপ্ততর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy