Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Malaria and Dengue Cases

ধারাবাহিক বিপদ

পরিবেশগত ভাবে পশ্চিমবঙ্গের আর্দ্র আবহাওয়া মশার বংশবিস্তারের পক্ষে আদর্শ। কিন্তু মনুষ্যকৃত কারণটিও কম দায়ী নয়।

An image of  waterlogging

পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ হিসাবে প্রশাসনের তরফে প্রায়শই জনগণের অ-সচেতনতার কথা শোনা যায়। প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৩ ০৫:০৩
Share: Save:

কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আর আপৎকালীন অবস্থা নয়— বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ঘোষণা যখন বিশ্ববাসীর কাছে আশ্বাসবাণী বয়ে আনছে, ঠিক সেই সময়ই ভারতে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার চিত্রটি এ দেশের জনগণ এবং প্রশাসনের সবিশেষ অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। ওয়ার্ল্ড ম্যালেরিয়া রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্তের মধ্যে ৮৩ শতাংশ এবং ম্যালেরিয়ার কারণে মোট মৃত্যুর সংখ্যার মধ্যে ৮২ শতাংশই ভারতে ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের ছবিটি ঠিক একই রকম বিবর্ণ। ‘ন্যাশনাল ভেক্টর-বোর্ন ডিজ়িজ় কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর তথ্য বলছে, পতঙ্গবাহিত রোগের ক্ষেত্রে ভারতের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। গত বছর এ রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ ছিল।

পরিবেশগত ভাবে পশ্চিমবঙ্গের আর্দ্র আবহাওয়া মশার বংশবিস্তারের পক্ষে আদর্শ। কিন্তু মনুষ্যকৃত কারণটিও কম দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকালেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি এবং ত্রুটিপূর্ণ নিকাশির কারণে জল জমার সমস্যা কলকাতার মতো শহরাঞ্চলের চিরন্তন। উপরন্তু প্লাস্টিক জমে নিকাশির মুখগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা অচিরেই মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়। পতঙ্গবাহিত রোগাক্রমণ ঠেকাতে এই দিকগুলি নিয়ে নতুন করে ভাবা প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে নিকাশিব্যবস্থার কিছুটা হাল ফেরানো উচিত ছিল। তা হয়নি। তা ছাড়া, পতঙ্গবাহিত রোগ সম্প্রতি ক্যালেন্ডার মেনে হানা দেয় না। পরিবর্তিত আবহাওয়ায় সারা বছরই প্রায় এই রোগের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। সুতরাং, মরসুমি সরকারি উদ্যোগে এই রোগ প্রতিহত করা অসম্ভব। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারংবার সারা বছর ডেঙ্গি দমন কর্মসূচি পালনের উপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু তার জন্য যে সার্বিক এবং সুষ্ঠু কার্যকর পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল, তা এখনও দেখা যায়নি। ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গের ডেঙ্গি সংক্রমণই তার প্রমাণ।

পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ হিসাবে প্রশাসনের তরফে প্রায়শই জনগণের অ-সচেতনতার কথা শোনা যায়। নিঃসন্দেহে তা গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। কিন্তু প্রশাসনও কি যথেষ্ট সচেতন? ইতিপূর্বে মশার আঁতুড়ঘর চিহ্নিত করতে ড্রোন ওড়ানো হয়েছে। ফাঁকা জমিতে আবর্জনা জমে থাকলে নির্মাণের অনুমোদন না দেওয়ার শাস্তি ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কোনওটিই যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি। বস্তুত এই বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপগুলির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিহত করার জন্য পৃথক প্রশিক্ষিত বাহিনী গড়ে তোলা, যাঁরা সারা বছর বাড়ি বাড়ি ঘুরে মশার আঁতুড়ঘর ধ্বংস এবং জ্বরের রোগীর তথ্য সংগ্রহের কাজটি করবেন। জনস্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদেরও বিভিন্ন পুরসভা, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে কাজ করতে হবে। এ কথা শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভারতে এই কাজটি এখনও সবিশেষ অবহেলিত। নিয়মিত কর্মী ছাড়া পতঙ্গবাহিত রোগের ক্ষেত্রে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে অন্য দফতর থেকে কর্মী এনে পরিস্থিতি সামলানো নির্বুদ্ধির পরিচায়ক। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ঘর করা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সে কথা বুঝবে কবে?

অন্য বিষয়গুলি:

Malaria Dengue West Bengal awareness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy