প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
সব জয় এক নয়। কিছু কিছু জয়ে একটি প্রখর বার্তা থাকে। এ বারের চারটি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে তিনটি রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির বিরাট বিজয়ের মধ্যে তেমন একটি বার্তা পড়তে পাওয়া সম্ভব। সেটি হল, বিজেপি এই মুহূর্তে এই রাজ্যগুলির রাজনীতিতে— নির্বিকল্প। এবং তিনটি ক্ষেত্রেই রাজ্যবাসীর কাছে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে। এও বিতর্কের ঊর্ধ্বে যে, কংগ্রেস-শাসিত রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে, এবং বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে বিজেপির এই তুমুল বিজয় প্রথমত এবং প্রধানত নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্ব, যে কৃতিত্বের নাম এখন মুখে মুখে দাঁড়িয়েছে ‘মোদী কি গ্যারান্টি’। প্রথম থেকেই একা তাঁর নামে প্রচার চালানোর এই রণকৌশলে একটি ঝুঁকি নিহিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী সেই ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং সফল হয়েছেন। সাড়ে নয় বছর ক্ষমতাদণ্ড ধারণের পর, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সামনে দাঁড়িয়ে, ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল, দুই পক্ষের কাছেই এই সাফল্য একটি মহাকায় স্বস্তিচিহ্ন। গণতান্ত্রিক দেশে ভোটকে যদি সত্যিই যুদ্ধ হিসাবে দেখতে হয়, তা হলে বিজেপির রণকৌশলের উৎকর্ষ এই মুহূর্তে সংশয়াতীত।
লক্ষণীয়, চারটি রাজ্যের মধ্যে যে একটিতে কংগ্রেস জয়ী, সেটিই কিন্তু উত্তর ভারতের বাইরে। উত্তরে যেখানে ‘মোদীয়’ বিজেপির যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী তো নেই-ই, তাঁদের বিজয়রথের ঘোড়ার দৌড়ের পথটি খানিক এবড়োখেবড়ো করে দেওয়ার ব্যবস্থাও বিরোধীদের ক্ষমতার অতীত, তার বিপরীতে তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের জয় তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর। তবে, খুঁটিয়ে দেখলে সেখানেও মোদীমন্ত্রকে ব্যর্থ বলা যাবে কি? সে রাজ্যেও বিজেপির আসন এ বার বেড়েছে। ফলে দেশের বিন্ধ্য-উত্তর বলয়ের বাস্তবের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের এই বহু-আলোচিত ফারাকটি কত দিন থাকবে, সেটিও কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠছে। তবে কিনা, এই ভোটের মধ্যে কেউ ২০২৪-এর কোনও ইশারা খুঁজতে চাইলে তাঁকে দু’টি কথা মনে রাখতেই হবে। এক, দক্ষিণের আসনসংখ্যা উত্তরের অপেক্ষা অনেকটা কম; দুই, লোকসভায় বিজেপির আধিপত্য দক্ষিণের উপর নির্ভরশীল নয়। অতএব, তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের সাফল্য নরেন্দ্র মোদীর স্বস্তিকুশলের বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না।
বাস্তবিক, এই ফলাফল একই সঙ্গে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা এবং/সুতরাং ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে হিমালয়সমান প্রশ্ন তুলে দিল। জোটের কার্যকারিতা এখন গভীর সঙ্কটে। এই পরিস্থিতির বড় দায় কংগ্রেস অস্বীকার করতে পারে না। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ প্রচারকালে আগাগোড়া দলকোন্দলে এবং পরনিন্দায় নিবিষ্ট থেকে নিজের দলের নেতৃত্বের বিরোধিতা করেছেন। ভেবেছেন, রাহুল গান্ধী প্রমুখের বক্তব্যের বিপরীতে গিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির হিন্দুত্বের লেজ ধরে বিজেপির প্রথম শ্রেণির হিন্দুত্ববাদকে টেক্কা দেওয়া যাবে। সঙ্গে সঙ্গে অখিলেশ যাদবের মতো জোটসঙ্গীকে খামোকা অপমান করতেও পিছপা হননি। রাজস্থানে অশোক গহলৌত ও সচিন পাইলটের তিক্ত শত্রুতার কুনাট্য রচিত হয়েছে নিয়মিত ভিত্তিতে। গহলৌত সরকারের বহু সুকাজ এই আন্তর্দলীয় বিশৃঙ্খলার আবর্তে হারিয়ে গিয়েছে। রাহুল গান্ধী ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী দুই জনেই এ বার পরিশ্রমী প্রচার চালিয়েছেন, কিন্তু সেই প্রচারের আবেগকে ধরে রাখার কোনও চেষ্টা রাজ্য কংগ্রেসের তরফে দেখা যায়নি। ছত্তীসগঢ়ে ভূপেশ বাঘেল সরকারের কৃতিত্ব শেষবেলায় ম্লান করে দিয়েছে দলীয় দুর্নীতি কেলেঙ্কারি। হয়তো বা ধস নেমেছিল তার আগেই, প্রচারের আলোক-ধ্বনির অন্তরালে। সামগ্রিক ভাবে কংগ্রেসকে দেখে সেই পুরনো প্রবাদটিই বলতে হয়: ফাঁকি দিয়ে মহৎ কার্য সাধন হয় না। ‘হাই কমান্ড’ কি উপলব্ধি করছেন যে, অবিমৃশ্যকারী রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁকির ফাঁক গলে নিঃশেষ হয়ে যেতে বসেছে দেশব্যাপী বিরোধী পরিসরের আশা এবং আকাঙ্ক্ষা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy