নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল গোলযোগ মোটেই সইতে পারছেন না। ফাইল ছবি।
কথা বলা যাবে না, শব্দ করা যাবে না... নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল গোলযোগ মোটেই সইতে পারছেন না। গোল বাধিয়েছে বিবিসি, ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন নামের তথ্যচিত্রটি তৈরি করে, বিষয় দু’দশক আগের গুজরাত দাঙ্গা। প্রথম পর্বটি এরই মধ্যে ব্রিটেনে সম্প্রচারিত, তাতে দেখানো হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর রাজনীতিতে আসা, বিজেপি দলে তাঁর উত্থান ও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া অবধি যাত্রাপথ; পরের পর্বে কী থাকবে তা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং, মোদী সরকার প্রমাদ গনেছে, তথ্যচিত্রের লিঙ্ক ভারতে না দেখাতে নির্দেশ দিয়েছে ইউটিউব-টুইটারকে, সমাজমাধ্যমে এই সংক্রান্ত মন্তব্য তুলে নিতে বলেছে, এমনকি সেইমতো মোছা হয়েছে বিরোধী দলের সাংসদের টুইটও। বিদেশের ছবি তৈরি আটকানো গেল না যখন, দেশের মানুষের কাছে প্রাণপণে সেই ছবি ও তা নিয়ে আলোচনা ঢাকাচাপা দেওয়ার চেষ্টা— তা ‘সেন্সরশিপ’-এর নামান্তর হলেও।
বর্তমান সরকারের এ-হেন প্রতিক্রিয়া এত দিনে ভারতবাসীর কাছে আদৌ অপরিচিত নয়। বিজেপির, বিশেষত নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যেতে পারে, এমন কোনও কিছুই সামনে আসতে দেওয়া যাবে না, সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরুদ্ধ স্বরটিকে নির্মূল করতে হবে, এই হল ছক। দেশের মাটিতে এই লক্ষ্যে এগোনোর ছকটি এত দিনে পরিচিত: বিরুদ্ধবাদীকে দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া আজ প্রচলন হয়ে দাঁড়িয়েছে— মোদীবিরোধিতাকে ভারতবিরোধিতার প্রতিশব্দ হিসাবে সমাজমনে গেঁথে দিতে অনেকাংশে সফল এই সরকার। মুশকিল হল, বিদেশ তথা বহির্বিশ্বের ক্ষেত্রে এই জবরদস্তি খাটানো যায় না, যে কারণে বিবিসি-র তথ্যচিত্র নিয়ে মোদী সরকার চরম অস্বস্তিতে পড়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২০০২-এর গুজরাত-কাণ্ডে নরেন্দ্র মোদীকে ‘ক্লিন চিট’ দিলেও, দাঙ্গা হিংসা ও গণহত্যার কাঁটা যে দুই দশক পরেও সমানে বিঁধছে, সরকারের তথ্যচিত্র-প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট: বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিবৃতি দিচ্ছেন এ ছবিতে নৈর্ব্যক্তিকতার অভাব আছে, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী বলছেন এ হল ‘প্রোপাগান্ডা’, ভারতে সংখ্যালঘু-সহ সকল সম্প্রদায়ের যে ইতিবাচক উন্নতি হচ্ছে তার বিরুদ্ধে বিদেশি অপপ্রচার। ভারতবিরোধিতা নামের সেই একই কুমিরছানা তুলে ধরার অভ্যাস অব্যাহত, বিজেপির বিচারে এ বার বিবিসি-ও ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর সদস্যপদ পেল, প্রযোজকরা যতই এ ছবির জন্য সরেজমিন অনুসন্ধানের কথা, এমনকি ছবিতে বিজেপি নেতাদেরও সাক্ষাৎকার তথা মতামত থাকার কথা বলুন না কেন।
একটি বিষয় এর থেকে স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রিত্বের ন’বছর পরও নরেন্দ্র মোদীর পিছু ছাড়েনি অতীত। তাঁর প্রধানমন্ত্রী তথা ভারত-‘মসিহা’ ভাবমূর্তির ঘাড়ে চেপে রয়েছে দাঙ্গা ও সংখ্যালঘু-নিধনের ইতিহাস। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন: ক্ষমতা বড় বালাই। ভোট বাড়ানোর লক্ষ্যে ইদানীং সংখ্যালঘু সমর্থন কুড়োনোর কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মন পেতে ‘স্নেহ মিলন’ তথা ‘সৌহার্দ যাত্রা’র পরিকল্পনা চলছে, ঠিক এই সময়ে তথ্যচিত্র পুরনো ক্ষত খুঁচিয়ে তুললে সমূহ বিপদ— তাঁর দল ও সরকার বিলক্ষণ জানে। এই সবই উপশম অসম্ভব জেনে ক্ষতের অস্তিত্ব ঢাকাচাপা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy