—প্রতীকী ছবি।
সহপাঠী, সমবয়সিদের হেনস্থা করে আনন্দ লাভের উৎকট ইচ্ছাটি বহু প্রাচীন। সাহিত্যে তার বহু নমুনা পাওয়া যায়। মহাভারত-এর আখ্যানে আছে, দরিদ্র দ্রোণাচার্যের পুত্র বালক অশ্বত্থামাকে তার ধনী বন্ধুরা দুধের বদলে পিটুলিগোলা খাইয়েছিল। সে-ও তো হেনস্থারই এক রূপ। টম ব্রাউন’স স্কুল ডেজ় বইতে রাগবি বোর্ডিং স্কুলে পড়তে এসে ফ্ল্যাশম্যানের হাতে টম আর তার বন্ধু হ্যারি ইস্টের নাস্তানাবুদ হওয়ার ঘটনাগুলিও স্মরণীয়। সমবয়সিকে উত্ত্যক্ত করা, শারীরিক নির্যাতনকে ‘ছেলেমানুষি’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। কারণ, ক্ষেত্রবিশেষে তার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই হিংসা এবং আক্রোশের প্রমাণ মেলে। বহু বিদ্যালয়ে নিয়মিত এই ধরনের হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি এই ধারায় রাশ টানতে উদ্যোগী হলেন শহরের সরকারি স্কুলশিক্ষকদের একাংশ। সরকারের কাছে তাঁদের প্রস্তাব, স্কুলে কাউন্সেলর নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করানো হোক।
প্রস্তাবটি স্বাগত। বিশেষত সাম্প্রতিক কালের পরিপ্রেক্ষিতে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রছাত্রীরা র্যাগিং করে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই সেই হিংস্রতার বীজ বোনা হয় স্কুলে থাকতে। সুতরাং, সংশোধনের কাজটিও সেখানেই শুরু হওয়া বিধেয়। ছাত্রছাত্রীরা দিনের একটি বড় অংশ স্কুলে থাকে, এবং স্কুলের সঙ্গে শিক্ষার যোগ তাদের চেতন ও অবচেতনে বর্তমান। ফলে, স্কুলের পরিসরে বুলিং-এর কুফল বিষয়ে শিক্ষা পেলে তা শিশুদের মনের গভীরে ছাপ ফেলবে। স্কুলের পরিসরটি আরও একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, নিপীড়ক ও নিপীড়িত, উভয় গোত্রের শিশুর সামনেই যদি এই নিপীড়নের অন্যায্যতা আলোচিত হয়, এবং তার সমগ্রিক কুফল ব্যাখ্যা করা হয়, তা হলে যে শিশুটি নিপীড়নের শিকার, সে ভরসা পাবে; অন্য দিকে যে শিশুটি ‘বুলি’ করছে, তার জন্যও আড়াল থাকবে না। প্রত্যক্ষ ভাবে নিপীড়নে যোগ দেয় না, এমন অনেক শিশুরও প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকে এই কাজে। সমস্যাটি প্রকাশ্যে আলোচিত হলে সেই প্রবণতাও কমবে বলেই আশা। তৃতীয়ত, স্কুলের শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষের জন্যও এই কাউন্সেলিং জরুরি— ছোটদের কাজ বলেই যে তা গৌণ সমস্যা নয়, বহু শিক্ষক এই কথাটি জানেন না বা মানেন না। তাঁদের ভুলও ভাঙা দরকার। যে ছেলেমেয়েরা বুলি করতে অভ্যস্ত, তাদের শাস্তি দিয়ে বা তিরস্কার করে নয়, তাদের আচরণের মধ্যে নিহিত অন্যায়টি ধরিয়ে দিয়ে তাদের সংশোধনের সুযোগ করে দেওয়াই যে সমাধানের পথ, এই কথাটিও প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন।
স্কুলের পরিসরে যারা সহপাঠীদের হেনস্থা করে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই পারিবারিক স্থিতির অভাব দেখা যায়। কারও ক্ষেত্রে পারিবারিক অশান্তি তৈরি করে বিপুল অনিশ্চয়তা; কেউ বা পরিবারের কাছে তার কোনও কাজেরই কোনও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায় না। কোনও পরিবারে বাবা ও মা, দু’জনেই অতি ব্যস্ত থাকায় সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। অভিভাবকের আচরণে প্রকট বা প্রচ্ছন্ন হিংস্রতাও অনেক শিশুকে হিংস্র করে তোলে। বহু অভিভাবকই এই সমস্যাগুলি সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নন; যাঁরা সচেতন, তাঁদের মধ্যেও অনেকেই সমাধানের পথটি জানেন না। অভিভাবকদের কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে যদি সেই সচেতনতা তৈরি হয়, তা হলে বহু শিশুর শৈশব রক্ষা পেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy