E-Paper

দুর্লভ দৃষ্টান্ত

লক্ষণীয় স্কুলের পরিকাঠামোর বিষয়টিও। উস্তির দুই বালক স্কুলে ফিরতে পেরেছে স্কুলে হস্টেল আছে বলে। বহু ছেলেমেয়ে হস্টেলে থাকার সুযোগ না পেলে পড়াশোনা করতে পারবে না।

An image of classroom

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৪৫
Share
Save

যে সময়ে রাজ্যের শিক্ষাজগতের দিকে তাকাতেও ভয় আর লজ্জা পান সচেতন নাগরিক, তেমন এক সময়ে সমাজে শিক্ষকের ভূমিকা কী, তা ফের মনে করালেন উস্তির দুই শিক্ষক, নীপা বসু ও সঞ্জয় দাস। বছর দশেকের দুই বালককে শ্রম থেকে শিক্ষায় ফেরালেন তাঁরা। দুঃস্থ পরিবার, অসুস্থ অভিভাবকের ভার বালকদেরই বহন করতে হচ্ছে, জানতে পেরে ওই দুই শিক্ষক উদ্যোগী হয়ে, পিতাকে বুঝিয়ে, বালক দু’টিকে ফিরিয়ে নেন স্কুলে। তাদের স্থান হয়েছে স্কুলেরই হস্টেলে। এই প্রতিবেদনের সত্যি গল্পটি সহজ মানবিকতার কাহিনি— একের অসহায়তায় অপরের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, তাকে নতুন জীবনের সন্ধান দেওয়া। বহু মানুষ এমন চেষ্টা করেন, কেউ একক উদ্যোগে, কেউ বা সংগঠিত ভাবে। এমন প্রতিটি কাহিনিই অমূল্য, কারণ এগুলিই শত দারিদ্র-ক্লেশকে অতিক্রম করে সমাজকে ধরে রাখে, জাতির ভিত্তি গঠন করে দেয়। তবে কেবল মানুষের প্রতি মানবিকতার প্রতি দায় নয়, ওই দুই শিক্ষক সময়ের দাবির প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা স্বীকার করেছেন। কোভিড ভারতে জনস্বাস্থ্যের যত ক্ষতি করেছে, ততই বিপর্যস্ত করেছে স্কুলশিক্ষাকে। অভিভাবকের কর্মহীনতা এবং অসুস্থতা, এবং সেই সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত, এই দুইয়ের ফলে অগণিত শিশু স্কুলছুট হয়েছে। এদের কী করে ফেরানো যাবে স্কুলে, সেই প্রশ্নটি শিক্ষা দফতর এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত এড়িয়েছে। নানা অসার ঘোষণা হয়েছে, নানা বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান মিলেছে। কিন্তু বাস্তব এই যে, সর্বত্রই শিশুশ্রমিকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। শিশু দু’টিকে স্কুলে ফিরিয়ে বস্তুত ওই দুই শিক্ষক এক বৃহত্তর ব্যর্থতার প্রতি দেশকে সজাগ করলেন।

সামনে নিয়ে এলেন শিক্ষকের দায়বদ্ধতাকেও। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন, এগুলিই শিক্ষকের প্রধান কাজ ঠিকই, গত দুই দশকে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্কুল-ভিত্তিক বিবিধ শিশুকল্যাণ কার্যসূচির তদারকি। সর্বশিক্ষা মিশন, এবং পরে শিক্ষার অধিকার আইন স্কুলের বাইরের শিশুর প্রতি শিক্ষকের দায়বদ্ধতার কথাও বলে— স্কুল ড্রপ আউট ছাত্রদের ফিরিয়ে এনে, ‘ব্রিজ কোর্স’ পড়িয়ে তাকে শ্রেণি-উপযোগী পাঠগ্রহণের যোগ্য করাও শিক্ষকের কাজ। তবে অধিকাংশ সময়ে এ কাজগুলি হয় বড় জোর খাতায়-কলমে। সরকারি ব্যবস্থা যেখানে অপারগ বা অনিচ্ছুক, সেখানে শিক্ষকদের উদ্যোগ আরও বেশি প্রয়োজন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে আবদ্ধ না থেকে, শিক্ষক সংগঠনগুলি যদি এগিয়ে আসে, নিজেদের সদস্যদের নিয়োজিত করে স্কুলছুটকে স্কুলে ফেরানোর কাজে, সমাজ আরও লাভবান হবে। ছাত্রছাত্রীর কল্যাণ কি শিক্ষক-স্বার্থেরই অপর পিঠ নয়?

লক্ষণীয় স্কুলের পরিকাঠামোর বিষয়টিও। উস্তির দুই বালক স্কুলে ফিরতে পেরেছে স্কুলে হস্টেল আছে বলে। বহু ছেলেমেয়ে হস্টেলে থাকার সুযোগ না পেলে পড়াশোনা করতে পারবে না। অতি-দুঃস্থ পরিবারের সন্তান, পরিযায়ী শ্রমিকের সন্তান, যে শিশুদের অভিভাবক নেই অথবা অভিভাবক কোনও কারণে শিশুর যত্ন-সুরক্ষায় অক্ষম, তাদের আশ্রয়ও প্রয়োজন। সরকারি স্কুলগুলির উপরের তলাটিতে হস্টেল করার একটি কর্মসূচি সর্বশিক্ষা মিশনে গৃহীত হয়েছিল, কিন্তু তা যথেষ্ট প্রসার পায়নি। এ কাজটিকে এ বার অগ্রাধিকার দিতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Child Education Child Labour School Teachers Education system

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।