Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Uttarakhand

অবিবেচনা

বিপর্যয়ের ধরনটি অপ্রত্যাশিত নহে। উষ্ণায়নের প্রভাবে গলিতেছে হিমবাহ, বৃদ্ধি পাইতেছে মেঘভাঙা বৃষ্টির প্রাবল্য।

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২১ ০৮:১৯
Share: Save:

পরিবেশের প্রতিশোধ ভয়ঙ্কর। সে দীর্ঘ দিন মানুষের অত্যাচার মুখ বুজিয়া সহে। কিন্তু রুদ্ররূপ ধারণ করিলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও তাহার সম্মুখে নতজানু হয়। যেমনটি হইল এই বৎসর, দুর্গাপূজার পর। প্রকৃতির রোষে তছনছ হইল সাজানো শহর, সেতু, রাস্তা। অক্টোবর মাস, উৎসবের মরসুম। পর্যটকরা ভিড় জমাইয়াছিলেন উত্তরাখণ্ডে, উত্তরবঙ্গের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে। বিপর্যয় নামিয়াছে। প্রবল বৃষ্টি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে একাধিক স্থান। উত্তরাখণ্ড হইতে কফিনবন্দি অবস্থায় ঘরে ফিরিয়াছেন পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েক জন পর্যটক। যাঁহারা সুস্থ শরীরে ফিরিয়াছেন, তাঁহাদের অভিজ্ঞতাও ভয়ঙ্কর। হিমালয় বুঝাইয়া দিয়াছে, পাহাড় খেপিয়া উঠিলে তাহার সম্মুখে মানুষ কতখানি অসহায়।

বিপর্যয়ের ধরনটি অপ্রত্যাশিত নহে। উষ্ণায়নের প্রভাবে গলিতেছে হিমবাহ, বৃদ্ধি পাইতেছে মেঘভাঙা বৃষ্টির প্রাবল্য। এই আশঙ্কার কথা বিজ্ঞানীরা বারংবার শুনাইয়াছেন। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিবার ব্যবস্থাটিও অত্যাধুনিক হইয়াছে। পূজার কিছু পরই যে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে দুর্যোগ শুরু হইবে, তাহার পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু পর্যটকরা সতর্ক হন নাই। এমনকি টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ধস নামিবার সংবাদেও দার্জিলিং, গ্যাংটকের রাস্তায় গাড়ির সারি চোখে পড়িয়াছে। অথচ, খাতায়-কলমে প্রশাসনের তরফে সেই সময় পাহাড়ে উঠিবার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হইয়াছিল। ভ্রমণ আনন্দের, কিন্তু জীবনের বিনিময়ে তো নহে। সেই কথাটা কি তাঁহারা বোঝেন নাই? প্রবল বৃষ্টি, ভাঙা রাস্তা, ধসের মধ্য দিয়া যাঁহারা আনন্দ সন্ধানে চলিলেন, তাঁহাদের সেই আনন্দের ব্যবস্থা করিতে স্থানীয় মানুষগুলি যে নিজেদের বিপন্ন করিতেছেন, সেই বোধটুকুও কি অন্তর্হিত হইয়াছিল? মনে রাখা প্রয়োজন, হিমালয় অঞ্চল স্বভাবতই ধসপ্রবণ। সেই স্থানে গাছ কাটিয়া সড়ক, সেতু, রেললাইন নির্মিত হইলে, অথবা কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হইলে পাহাড়ের স্থিতি নষ্ট হয়। অথচ, সেইখানেই একের পর এক পর্যটনকেন্দ্র গড়িয়া উঠিয়াছে। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পরিকাঠামোর উন্নতির নামে প্রকৃতির উপর নিরন্তর বুলডোজ়ার চলিতেছে। ইহা সরকারের অবিবেচনা নিঃসন্দেহে। কিন্তু পর্যটকরাও সেই দায়িত্ব এড়াইয়া যাইতে পারেন কি?

বস্তুত, পর্যটনের নামে যে বেপরোয়া উল্লাস এবং কাণ্ডজ্ঞান বর্জনের হিড়িক পড়িয়াছে, তাহা অত্যন্ত উদ্বেগের। পরিবেশ সুস্থ রাখা দূরস্থান, নিজের এবং নিজ পরিবারের নিরাপত্তাটুকুও নিশ্চিত করিতে এক শ্রেণির পর্যটকের প্রবল অনীহা। প্রায় পরিকাঠামোহীন প্রত্যন্ত অঞ্চল ভ্রমণে শিশু এবং পরিবারের বৃদ্ধ সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে, বিপর্যয় ঘটিলে উদ্ধার পাওয়া ক্ষেত্রবিশেষে অ-সম্ভব বোধ হয়। পরিবেশের প্রতিও তাঁহারা একই রকম উদাসীন। যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলিয়া, জঙ্গল অপরিচ্ছন্ন করিয়া তাঁহারা প্রকৃতিকে ধ্বংস করেন। মনে রাখিতে হইবে, ভ্রমণ শুধুমাত্র নেশা নহে। তাহা দায়িত্ববোধের শিক্ষাও দেয়। নিজের প্রতি দায়িত্ববোধ, পারিপার্শ্বিকের প্রতি দায়িত্ববোধ। পর্যটক যদি সেই দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন না হন, তবে বারংবার তাঁহারা এ-হেন বিপর্যয়ের শিকার হইবেন। শুধু সরকারকে দোষারোপ করিয়া পরিত্রাণ মিলিবে তো?

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarakhand Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy