Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Online Education

বিকল্প শিক্ষা

অনলাইন শিক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর ব্যাপ্তি। অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষাকে বহু ছাত্রের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই প্রক্রিয়ায়।

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২২ ০৪:৩৬
Share: Save:

অতিমারির বিপত্তি পেরিয়ে সবেমাত্র স্কুলগুলি খুলেছিল। স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছিল ছাত্রছাত্রীরাও। কিন্তু তালা খুলেই ফের তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ বার কারণ তীব্র গরম। গরমের হাত থেকে ছাত্রছাত্রীদের রেহাই দিতে কলকাতা শহরের সিবিএসই এবং সিআইএসসিই বোর্ডের বেশ কিছু বেসরকারি স্কুলও কয়েক দিন ক্লাসঘর বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস চালু করার পরিকল্পনা করছে। তাদের মতে, করোনাকালে যে হেতু ছাত্রছাত্রীরা অনেক দিনই অনলাইন ক্লাস করেছে, ফলে এখন তাদের এই প্রক্রিয়ায় ক্লাস করতে অসুবিধে হবে না। কথাটি ইঙ্গিতবহও। করোনা-উত্তর দুনিয়ায় শিক্ষা সম্ভবত আর কখনও যে পুরোপুরি অফলাইন থাকবে না, অনলাইন ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে উঠবে, কথাটির মধ্যে যেন সেই অমোঘ বার্তাটিই লুকিয়ে আছে।

অনলাইন শিক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর ব্যাপ্তি। অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষাকে বহু ছাত্রের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। কোনও ডিজিটাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে সেখানে আসনসংখ্যা প্রথাগত ক্লাসরুম ব্যবস্থার চেয়ে বেশি হওয়াই স্বাভাবিক, ফলে অনেক ছাত্রছাত্রী সেই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও কিছু দিন পূর্বে তাঁর এক বক্তব্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে ডিজিটাল পথে হাঁটার উপরেই জোর দিয়েছেন। তা ছাড়া, এর অন্য ইতিবাচক দিকগুলিও রয়েছে। যেমন, ডিজিটাল মাধ্যমে যে কোনও জায়গা থেকে বা পরিস্থিতিতে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। কোনও বিষয়ের উপরে তথ্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা থাকলে যে কেউ সেটির নাগাল পেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অফলাইন শিক্ষার তুলনায় অনলাইন শিক্ষায় খরচও কম। শিক্ষা সকলের অধিকার। সংবিধান এই অধিকার প্রদান করেছে। তাই প্রথাগত শিক্ষাপ্রক্রিয়া কোনও ভাবে ব্যাহত হলে বিকল্প পথ তৈরি রাখা জরুরি ছিল। সেই বিকল্প পথ বুঝতে যে অতিমারি পরিস্থিতি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল, সেটাই আশ্চর্যের।

কিন্তু এটাও ঘটনা যে, আমাদের দেশে ডিজিটাল শিক্ষার সুফল গ্রহণ করার মতো পরিস্থিতি সব স্তরের শিক্ষার্থীর মধ্যে নেই। বহু ক্ষেত্রে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে আর্থিক কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্মার্টফোনই জোগাড় করতে পারেনি। যাদের কাছে স্মার্টফোন ছিল, তাদের অনেকের হয়তো ডেটাপ্যাক কেনার সামর্থ্য ছিল না। যেখানে অতিমারির কারণে অনেক দরিদ্র পরিবারই দরিদ্রতর হয়েছে, সেখানে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপ বিলাসিতার শামিল। পরিবারের হাল ধরতে কত শিক্ষার্থীকে আনাজ বিক্রি কিংবা কারখানার কাজে যোগ দিতে হয়েছে। ফলে স্কুলছুটের সংখ্যা বেড়েছে। তা ছাড়া পরিকাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে। বিশ্ব জুড়ে যে সব দেশ সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে, সেই তালিকায় একেবারে উপরের দিকে থাকলেও দেশের সব জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবার গতি এক নয়। শহরাঞ্চলে যত দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা মেলে, গ্রামাঞ্চলে তার নামমাত্র মেলে কি না সন্দেহ। তা ছাড়া, অনলাইন মাধ্যমে ল্যাবরেটরির পরীক্ষানিরীক্ষা কিংবা প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু এত সমস্যা সত্ত্বেও প্রথাগত শিক্ষার সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে ডিজিটাল মাধ্যম ছাড়া গতি নেই। যে কোনও নতুন জিনিসের শুরুতে হলে প্রচুর সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেইগুলির সমাধান করলে চলার পথটি মসৃণ হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত দেশে ইন্টারনেট পরিষেবার পরিকাঠামো আরও উন্নত করা। গ্যাস, বিদ্যুতের মতোই ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়া, যাতে প্রত্যন্ত গ্রামের পড়ুয়ারাও তা ব্যবহার করতে পারে। একমাত্র তবেই শিক্ষালাভের পথটি সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Online Education Education system India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy