ঘটনার বহমান স্রোত যদি হয় জীবন, তাহা হইলে যে পলি সে ফেলিয়া যায় তাহাই সংস্কৃতি, বলিয়াছিলেন এক দার্শনিক। আর একটু অগ্রসর হইয়া বলা চলে, সেই অমেয় ভান্ডার হইতে কোন বস্তু আহরণ করিয়া জাতির আত্মপরিচয় নির্মাণ করা হইবে, তাহা নির্ণয় করে রাজনীতি। কৃষ্ণাঙ্গী কবি মায়া অ্যাঞ্জেলুর প্রতিকৃতি সম্বলিত মুদ্রা প্রকাশ করিয়া আমেরিকা প্রমাণ করিল, সহস্র সমস্যা সত্ত্বেও এই বৃহৎ গণতন্ত্রের রাজনীতি জীবনীশক্তি হারায় নাই। জাতির সংঘাতপূর্ণ অতীতকে অস্বীকার না করিয়া, তাহা হইতে ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করিবার সাহস দেখাইয়াছে আমেরিকার প্রশাসন। নাগরিক অধিকার এবং মানুষের মর্যাদা পাইবার জন্য আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের যে দীর্ঘ লড়াই, তাহার অন্যতম মুখ মায়া অ্যাঞ্জেলু। তাঁহার কবিতা শতসহস্র অসম্মান ও আঘাতের সম্মুখে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইবার বার্তা বহন করিতেছে। মায়ার মৃত্যুর পর বারাক ওবামা বলিয়াছিলেন, তিনি আমাদের সময়ের উজ্জ্বলতম আলোগুলির অন্যতম। মায়া লিখিয়াছিলেন, তোমার “বাক্য দিয়া বিদ্ধ করিতে পারো, দৃষ্টি দিয়া ছিন্নভিন্ন করিতে পারো, ঘৃণা দিয়া হত্যা করিতে পারো, কিন্তু বাতাসের মতো ফের উঠিয়া আসিব আমি।” তাঁহার জীবনেও সেই প্রত্যয়ের প্রকাশ— সত্তরের দশকের হলিউডে যে কৃষ্ণাঙ্গরা প্রথম পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা হিসাবে কাজ শুরু করেন, মায়া তাঁহাদের অন্যতম।
আমেরিকার রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির পরিসরে বিপুল বিরোধিতার সম্মুখে এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা নিরন্তর যুঝিয়া আপন প্রতিভা ও উৎকর্ষের স্বাক্ষর রাখিয়াছিলেন। কোয়ার্টার মুদ্রায় তাঁহার প্রতিকৃতি সকলের হাতে সেই সাফল্যের স্মারক পৌঁছাইয়া দেয়, যাহা অতীতকে সংস্কৃতি করিয়া তোলে। বৈষম্য, পীড়ন, বঞ্চনার ইতিহাস কোন জাতির নাই? কিন্তু তাহার অবসান যাঁহারা করিয়াছেন, সমাজের উপেক্ষাকে অগ্রাহ্য করিয়া যাঁহারা নিজের জন্য, আপন জনগোষ্ঠী ও দেশের জন্য নূতন দিগন্তের উন্মোচন করিয়াছেন, তাঁহাদের সম্মান করিলে বুঝিতে হইবে, জাতি অতীতের হিংসা ও বৈষম্যের প্রতিস্পর্ধী সংস্কৃতি নিজেই রচনা করিতেছে। আমেরিকার টাঁকশাল সিদ্ধান্ত লইয়াছে, পর পর চার বৎসর পঁচিশ সেন্ট-এর মুদ্রায় কৃতী মহিলাদের প্রতিকৃতি মুদ্রিত হইবে, প্রতি বৎসর পাঁচটি মুদ্রা প্রকাশিত হইবে। বিজ্ঞান, সামাজিক আন্দোলন, শিল্প, এমন নানা কর্মক্ষেত্র হইতে যেমন সেই মহিলারা নির্বাচিত হইয়াছেন, তেমনই তাঁহাদের মধ্যে রহিয়াছেন কৃষ্ণাঙ্গ, নেটিভ ইন্ডিয়ান, এশীয় মহিলারাও।
এই বৈচিত্রও আমেরিকার ঐতিহ্য, সামাজিক প্রভাবের দ্বারা নির্ধারিত মূলস্রোতের সংস্কৃতি যাহাকে প্রায়ই উপেক্ষা করিতে চায়। রাষ্ট্র তাহাকে স্মরণ করাইল। এই দৃষ্টান্ত সকল রাষ্ট্রকেই উৎসাহিত করিতে পারে। বহু রাষ্ট্র মুদ্রায় কোনও এক জন ব্যক্তিরই প্রতিকৃতি ব্যবহার করে। ভারতে মহাত্মা গান্ধী, চিনে মাও জে দং অথবা দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলার মুখের ছবি সকল মুদ্রাতেই মিলিবে। ডাকটিকিট প্রকাশিত করিয়া স্মরণযোগ্য ব্যক্তি অথবা ঘটনাকে সম্মান করিবার প্রথা অধিক প্রচলিত। কিন্তু প্রথাগত চিঠির ব্যবহার কমিতেছে, মুদ্রার ব্যবহারও, তাই নূতন প্রজন্মের নিকট সংস্কৃতির কোন সম্পদ তুলিয়া ধরা সম্ভব, কী উপায়ে, তাহা চিন্তা করা প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy