Advertisement
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Potato Price

রাজনীতির ফসল

ওড়িশার খাদ্যমন্ত্রী কৃষ্ণচন্দ্র পাত্র বিধানসভায় বলেছেন, ওড়িশার বিজেপি সরকারকে অপদস্থ করতেই আলু পাঠানো বন্ধ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫২
Share: Save:

বাজারে নতুন আলু না আসা পর্যন্ত পড়শি রাজ্যে আলু পাঠানো হবে না, ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ফলে আলুর দাম চড়েছে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, অসম-সহ নানা রাজ্যে। ওড়িশার খাদ্যমন্ত্রী কৃষ্ণচন্দ্র পাত্র বিধানসভায় বলেছেন, ওড়িশার বিজেপি সরকারকে অপদস্থ করতেই আলু পাঠানো বন্ধ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের নির্দেশে সে রাজ্যের মুখ্য সচিব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিবের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। মনোজ পন্থ সমাধান খোঁজার আশ্বাস দিয়েছেন বটে, তবে এ রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না জানিয়ে দিয়েছেন যে, এখনও অন্তত চল্লিশ দিন রাজ্যের সীমান্ত পেরোতে পারবে না আলুর ট্রাক। এটা অপ্রত্যাশিত নয়, ইতিপূর্বেও আলুর দাম চড়তে শুরু করলেই কড়া হাতে ভিন রাজ্যে আলুর গতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন মমতা। আলু, পেঁয়াজ, টমেটো ভারতীয়দের হেঁশেলে ‘অত্যাবশ্যক’ বলেই পরিগণিত হয়। অন্যান্য আনাজ, বা দুধ-ডিমের মূল্যস্ফীতি নিয়ে আক্ষেপ শোনা গেলেও, আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়লে সেই ক্ষোভ দ্রুত পরিণত হয় জনরোষে। কোনও সরকার সেই রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে চায় না। পেঁয়াজ উৎপাদনে ঘাটতির জেরে কেন্দ্রীয় সরকার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ থেকে ৪ মে, ২০২৪ পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ রেখেছিল এই কারণেই। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে আটকে দিচ্ছে আলুর ট্রাক।

রাজনীতির নিরিখে ক্রেতাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সংখ্যায় চাষি বা ব্যবসায়ীর তুলনায় তাঁদের পাল্লা ভারী। কিন্তু অর্থনীতির প্রশ্নটির ওজনও খুব কম নয়। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী রাজ্য। এ রাজ্যের উৎপাদনের চল্লিশ শতাংশই যায় অন্যান্য রাজ্যে। অর্থাৎ ভিন রাজ্যের ক্রেতা পশ্চিমবঙ্গের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বাজারের লেনদেনের ভিত্তি ব্যবসায়ীর বিশ্বাসযোগ্যতা ও সুনাম। রাজনৈতিক নির্দেশের অভিঘাতে দীর্ঘ দিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। ২০১৪-১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ আলু সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ করার ফলে তৎকালীন বিজেডি সরকার ওড়িশাকে আলুতে স্বনির্ভর করার জন্য ‘পট্যাটো মিশন’ ঘোষণা করে। হিমঘরের অভাবে সেই উদ্যোগ তখন সফল হয়নি। সম্প্রতি বিজেপি সরকার ফের ওই প্রকল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে আটান্নটি হিমঘর নির্মাণ ও উচ্চমানের আলুবীজ সরবরাহ করছে। এ কি অশনিসঙ্কেত নয়? বাজারের সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদি। শিরে সংক্রান্তি সামাল দিতে সরকারের আকস্মিক হস্তক্ষেপ, এবং তার ফলে এতগুলি রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের আলুর ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলা কি সুবিবেচনা? আলুর দাম কমল মানেই রাজ্যবাসীর টাকা বাঁচল, হিসাবটা অত সরলও নয়। অতিরিক্ত উৎপাদন হলে ভিন রাজ্যে রফতানির জন্য পরিবহণে ভর্তুকি দিতে হয় রাজ্য সরকারকে। ২০১৯-২০২০ সালে তার পরিমাণ ছিল ৯৬ লক্ষ টাকা। এ-ও রাজ্যবাসীরই টাকা।

আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের বাজারের চাহিদা মেটানোর মতো যথেষ্ট আলু মজুত রয়েছে। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা হিমঘর থেকে আলুর ট্রাক বার করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পরে সেই সিদ্ধান্ত মুলতুবি রেখেছেন। অভিজ্ঞতা বলে, এমন চাপ আর পাল্টা-চাপের পালা চলতে চলতেই নতুন ফসল উঠবে, বাজারে আলুর চাহিদা কমবে। পড়শি রাজ্যে আলুর ট্রাক ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে গোলযোগ থিতিয়ে আসবে। আরও এক বছর বিষয়টি চলে যাবে চোখের আড়ালে। তবে আলু পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম অর্থকরী ফসল হলেও, তার বীজ থেকে বিপণন, সর্বত্র অভাব রয়েছে উপযুক্ত নীতির। চাহিদা অনুসারে ফসলের উৎপাদন, মজুত ও বাজারে জোগান, ভিন রাজ্যে রফতানির সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন, এগুলি সরকারেরই কাজ। সীমান্ত থেকে আলুর ট্রাক ফেরানো, কয়েক হাজার কুইন্টাল ফসলের অপচয়, প্রতিবেশী রাজ্যের ক্ষোভ উৎপাদন, এগুলি সুব্যবস্থার লক্ষণ নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Potato Politics Export Potato Price Price Hike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy