Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Death

ব্যর্থতা

সংবিধান তাঁদের সংরক্ষণের অধিকার দিয়েছে, শিক্ষার অধিকারকে সর্বজনীন করেছে। আইন বলেছে যে, মলবাহকদের অন্য পেশায় পুনর্বাসন দিতে হবে।

শুধু আইনে কিছুই পাল্টায় না।

শুধু আইনে কিছুই পাল্টায় না।

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৪১
Share: Save:

কেন্দ্রের ‘প্রহিবিশন অব এমপ্লয়মেন্ট অ্যাজ় ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড দেয়ার রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাক্ট, ২০১৩ অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তিকে বিপজ্জনক ম্যানহোল, সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের কাজে নিযুক্ত করা বেআইনি। তার পরও, স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পার করেও, দেশে এই কাজে প্রতি বছর বহু মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল কমিশন ফর সাফাই কর্মচারিজ় প্রদত্ত পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ১৯৯৩ সালে যখন আইন করে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং নিষিদ্ধ হয়, তখন থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গোটা দেশে ম্যানহোল বা সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে মৃতদের সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে রয়েছে তামিলনাড়ু। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে দশম স্থানে, মৃতের সংখ্যা ২৩। গত কয়েক মাসেও সেপ্টিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে এই রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে একাধিক শ্রমিকের। সম্প্রতি তামিলনাড়ু সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং নিষিদ্ধ করেছে। বলা হয়েছে, কোনও ‘ব্যতিক্রমী’ পরিস্থিতিতে এই কাজে লোক নিয়োগ করা হলেও সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ, সরকারই স্বীকার করে নিল যে, শুধু আইনে কিছুই পাল্টায় না; পাল্টায়নি তিন দশক পরেও।

অথচ, ২০১৩ সালে সাফাইকর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা এবং তাঁদের পুনর্বাসন আইনে মানববর্জ্য পরিষ্কারের প্রক্রিয়াকে যন্ত্রচালিত এবং পূর্বে ওই কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের অন্যত্র নিয়োগের কথা বলা হয়। পরে এই কুপ্রথাকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতও। তার পরেও এমন কুপ্রথা চলতে পারে কী ভাবে, তা-ও বহু ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সরকারি দফতরের নজরদারিতে? এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করতে হবে ভারতীয় মননে বহু গভীরে প্রোথিত মনুবাদী বর্ণব্যবস্থায়। বংশানুক্রমে যাঁরা মলবহনের মতো অসম্মানজনক পেশার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ, দলিত। ফলে, আইন তাঁদের অসম্মান থেকে নিষ্কৃতি দিলেও সমাজ সেই অধিকারকে গুরুত্ব দেয় না। সমাজের চোখে তাঁদের বর্ণ-পরিচিতি এই পেশাটিকে ‘স্বাভাবিক’ করে তোলে। আজও যাঁরা মলবহনের পেশায় যুক্ত, তাঁরা প্রায় ব্যতিক্রমহীন ভাবে দলিত বর্গের মানুষ। পঁচাত্তর বছরের স্বাধীনতাও তাঁদের সম-মানুষের মর্যাদা এনে দিতে পারেনি, ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে এই লজ্জা অসহনীয়।

সংবিধান তাঁদের সংরক্ষণের অধিকার দিয়েছে, শিক্ষার অধিকারকে সর্বজনীন করেছে। আইন বলেছে যে, মলবাহকদের অন্য পেশায় পুনর্বাসন দিতে হবে। কিন্তু, তার পরও কাজের বাজারের কার্যত সব দরজাই তাঁদের জন্য বন্ধ হয়ে থাকে। এই ব্যর্থতা রাষ্ট্রের— ব্যর্থতা শুধু এই মানুষদের জন্য সম্মানজনক বিকল্প পেশার ব্যবস্থা করতে না পারা নয়; ব্যর্থতা রাষ্ট্র এবং বাজারের প্রক্রিয়া থেকে জাতিভেদপ্রথার বিষকে দূর করতে না পারা। মলবাহকদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে, অথবা এখন অতি স্বল্পসংখ্যক মানুষ এই পেশায় রয়েছেন, এই ক্ষেত্রে কোনও যুক্তিই গ্রহণযোগ্য নয়। এই কুপ্রথার বিরুদ্ধে অবস্থানের মূল মন্ত্র হওয়া উচিত ‘জ়িরো টলারেন্স’। এক জন মানুষও এই পেশায় থাকতে বাধ্য হলে তা রাষ্ট্রের সমূহ ব্যর্থতা।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy