Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
COP27 Conference Egypt

কথামাত্র

ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে তৈরি হওয়া জ্বালানি সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ‘পরিবেশ সচেতন’ গোষ্ঠীও কয়লার ব্যবহার বাড়িয়েছে।

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩৮
Share: Save:

মিশরের শার্ম এল-শেখ’এ জলবায়ু সম্মেলনের সূচনালগ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বলেছিলেন, “আমরা পরিবেশ নরক-গামী হাইওয়েতে গাড়ি চালাচ্ছি, আর আমাদের পা অ্যাক্সিলারেটরের উপরে চাপ দিচ্ছে।” সম্মেলনের সমাপ্তির পর স্পষ্ট, সেই গাড়ি অন্তত এ যাত্রায় থামেনি। এই সম্মেলনের প্রাপ্তির অতি শীর্ণ তালিকার শীর্ষে রয়েছে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল সৃষ্টির সিদ্ধান্তটি। তবে, আপাতত তা খাতায়-কলমেই— যে কমিটি গঠিত হয়েছে, আগামী বছরের সম্মেলনে সেই কমিটি এই বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করবে। কোন দেশ এই তহবিলে কত টাকা দেবে, কোন দেশ তা পাবে আর কে পাবে না, সমস্ত প্রশ্নই এখনও অমীমাংসিত, আলোচনার স্তরে। ফলে, সংশয় হওয়া স্বাভাবিক যে, লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল নিয়ে এই বিপুল আলোচনা এবং উত্তেজনা কি এক গোত্রের কৌশল, যাতে সম্মেলনের যাবতীয় শক্তি সেই খাতেই খরচ হয়ে যায়, উন্নত দেশগুলির দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার সুযোগই না থাকে? বিবিধ কারণে এই সংশয় উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। উন্নত বিশ্ব পরিবেশ বিষয়ে তাদের ঐতিহাসিক দায়টি স্বীকার করতে নারাজ— তার প্রকৃষ্টতম উদাহরণ, ২০১৫ সালে বছরে ১০,০০০ কোটি ডলারের পরিবেশ তহবিল গঠনের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সাত বছর পরেও তা অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছে। বস্তুত, সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক যে, লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের ভবিষ্যৎও ভিন্নতর হবে না।

সম্মেলনে আইপিসিসি-র ষষ্ঠ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট-এর বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, ২০১৯ সালে কার্বন নিঃসরণের যে বৈশ্বিক মাত্রা ছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে তার ৪৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। যা বলা হয়নি, তা হল, ২০২৫ সালের মধ্যে পিক এমিশন বা বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছতে হবে, এবং তার পর থেকে অতি দ্রুত কমাতে হবে নিঃসরণের মাত্রা। পরিবেশ রাজনীতির যে মৌলিক বিভাজিকা, অর্থাৎ শিল্প বিপ্লব-পরবর্তী পর্যায়ে আজকের উন্নত দেশগুলি যে ভাবে দ্রুত আর্থিক বৃদ্ধির পথে হেঁটেছিল, বর্তমান উন্নয়নশীল দুনিয়াকে সেই অধিকার দিতে হবে, এবং তার দায় বহন করতে হবে উন্নত বিশ্বকে, যাতে তাদের ঘোর আপত্তি— এই বৈঠকেও সেই বিরোধের কোনও সমাধানসূত্র মিলল না। সত্যিই যদি কার্বন নিঃসরণের মাত্রাকে সহনীয় ও সুস্থায়ী স্তরে রাখতে হয়, তা হলে উন্নত দুনিয়াকে তুলনায় অনেক বেশি হারে নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেই প্রতিশ্রুতি স্বভাবতই মেলেনি। বরং, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে তৈরি হওয়া জ্বালানি সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ‘পরিবেশ সচেতন’ গোষ্ঠীও কয়লার ব্যবহার বাড়িয়েছে। সার্বিক ভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি বর্জনের পরিবর্তে ‘ধারাবাহিক ব্যবহার হ্রাস’, ‘পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্রমব্যবহার’ ইত্যাদি বলার মধ্যেই প্রচেষ্টা সীমিত থেকেছে। ফলে আশঙ্কা হয়, পরিবেশ-নরকের পথে যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ থেকে দুনিয়াকে রক্ষা করতে গেলে কত টাকা প্রয়োজন, এই সম্মেলনের রিপোর্টে তার একটি হিসাব মিলেছে— ২০৫০ সালে যদি ‘নেট জ়িরো’ নিঃসরণের মাত্রায় পৌঁছতে হয়, তবে আজ থেকে ২০৩০ অবধি প্রতি বছর পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির পিছনে অন্তত চার লক্ষ কোটি ডলার ব্যয় করা প্রয়োজন। তার পাশাপাশি, গোটা দুনিয়াকে ‘লো কার্বন’ অর্থব্যবস্থার দিকে নিয়ে যেতে বছরে প্রয়োজন আরও চার থেকে ছ’লক্ষ কোটি ডলার। প্রশ্ন হল, এই টাকা দেবে কে? উন্নত বিশ্ব এই দায় বহনে কতখানি ইচ্ছুক, তার নিদর্শন বছরে ১০,০০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনে ব্যর্থতার মধ্যেই রয়েছে। ফলে আশঙ্কা হয়, প্রতি বছরের মতো এ বারের পরিবেশ সম্মেলনও শুধুমাত্র ‘কথা গেঁথে গেঁথে’ করতালি নেওয়ার মধ্যেই সীমিত থাকল।

অন্য বিষয়গুলি:

COP27 Conference Egypt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE