ফাইল চিত্র।
বঙ্গে চাকুরি করিতে হইলে বাংলা ভাষাটি শিখিয়া লইতে হইবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থানকে অকুণ্ঠ ভাবে স্বাগত জানানো বিধেয়। কেহ প্রশ্ন করিতে পারেন, ইহা কি ক্ষুদ্র প্রাদেশিকতা নহে— মহারাষ্ট্রে কেবল মরাঠিদের জন্য চাকুরি, বা হরিয়ানায় শুধুমাত্র ভূমিপুত্রদের জন্য চাকুরির সিংহভাগ সংরক্ষণের দাবির সহিত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ফরমানটির কি কোনও চরিত্রগত ফারাক আছে? ফারাক অতি স্পষ্ট— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শর্তে অন্তর্ভুক্তি আছে, প্রত্যাখ্যান নাই। কোন প্রার্থী কোন রাজ্যের, বা কোন ভাষাভাষী, তিনি তাহা বিবেচনা করিবার কথা বলেন নাই। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয়তার ধর্ম মানিয়া তিনি প্রত্যেক নাগরিকের জন্য রাজ্যের চাকুরির দরজা খোলা রাখিয়াছেন। শুধু বলিয়াছেন যে, সেই চাকুরি করিতে হইলে বাংলা ভাষা শিখিয়া লইতে হইবে। দাবিটি অত্যন্ত স্বাভাবিক। রাজ্যের প্রধানতম ভাষাকে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব ও মর্যাদা দেওয়া জরুরি। কিন্তু, শুধু সেটুকুই নহে— যে চাকুরিতে নিয়মিত রাজ্যের মানুষের সহিত কথা বলিতে হইবে, সেখানে সিংহভাগ মানুষের মুখের ভাষাটি না জানিলে কাজ করা অসম্ভব। তাহাতে কাজ আটকাইয়া যায়, মানুষ প্রাপ্য পরিষেবা হইতে বঞ্চিত হন। তাহা চলিতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গে চাকুরি করিতে হইলে বাংলা ভাষায় সড়গড় হওয়া আবশ্যিক। যে ভাষাভাষীই হউন না কেন, বাংলা ভাষা শিখিয়াই এই রাজ্যে চাকুরি করিতে হইবে।
বাংলার ছেলেমেয়েরা এই রাজ্যেই কাজ করুক, ভিনরাজ্যে যাইবার প্রয়োজন নাই— মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থানটি অবশ্য একই রকম সমর্থনযোগ্য নহে। পশ্চিমবঙ্গ হইতে সর্বস্তরের কাজেই পরিযাণ ঘটে— মেধা বা প্রযুক্তিনির্ভর ‘হোয়াইট কলার’ চাকুরিতেও যেমন, আবার দক্ষ, অর্ধদক্ষ বা অদক্ষ শ্রমিকের কাজেও তেমনই। এত মানুষ ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে যান, কারণ এই রাজ্যে কাজ নাই। যথেষ্ট সংখ্যায় কাজ নাই, অথবা যথেষ্ট আকর্ষণীয় কাজ নাই। ইহা অর্থশাস্ত্রের চাহিদা-জোগানের বজ্রকঠোর যুক্তি— কোনও রাজনীতি বা কোনও আবেগেই এই যুক্তিকে কাটা অসম্ভব। মুখ্যমন্ত্রী যদি চাহেন যে, রাজ্যের তরুণ প্রজন্ম এই রাজ্যেই চাকুরি করুন, তবে তাহার একটিই পথ— রাজ্যের শিল্পায়নে মনোযোগী হওয়া। বৃহৎ শিল্পের বিভিন্ন স্তরে কর্মসংস্থান হউক, অনুসারী শিল্প গড়িয়া উঠুক, লগ্নি আসুক— আপনা হইতেই রাজ্যের ছেলেমেয়েরা রাজ্যেই আকর্ষণীয় চাকুরি পাইবে। যত দিন না সেই ব্যবস্থা হইতেছে, তত দিন অবধি মুখের কথায় চিঁড়া ভিজিবে না।
বৃহত্তর প্রশ্নটি হইল, বাঙালি যদি ভিনরাজ্যে চাকুরি করিতে যায়, তাহাতে ক্ষতি কী? দেশের যে কোনও প্রান্তে চাকুরি করিবার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের আছে। সেই চাকুরির ক্ষেত্রে যেন কাহাকে কোনও রকম অসুবিধার সম্মুখীন না হইতে হয়, তাহা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসনের কর্তব্য। প্রবাসে অসুবিধা হইতে পারে ভাবিয়া ঘরেই নুন-ভাতের ভরসায় থাকিয়া যাইতে হইবে, ইহা যুক্তি হইতে পারে না। বরং, মুখ্যমন্ত্রী যদি বারে বারেই সেই কথা বলিতে থাকেন, তবে তাহার অন্য একটি বিপদ আছে। রাজ্যের সকলে রাজ্যেই কাজ পাইতেছেন, এই কথাটি প্রতিষ্ঠা করিতে পরিযায়ী শ্রমিকের বাস্তবটিকে তখন রাজ্য সরকার ক্রমেই অস্বীকার করিতে চাহিবে। ফলে, কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের স্বার্থরক্ষা করিবার কেহ থাকিবে না। এই পরিস্থিতিটি কাম্য নহে। মূলত যে রাজ্যগুলিতে বাঙালি শ্রমিকরা কাজের খোঁজে যান, সেখানকার সরকারের উপর তাঁহাদের দেখভালের জন্য চাপ তৈরি করা অনেক বেশি জরুরি। যে রাজ্যেই কাজ করুন না কেন, বঙ্গসন্তানের স্বার্থরক্ষার দায়িত্বটি বাংলার সরকারের। বঙ্গবাসীমাত্রেই যেন জানেন যে, বিপদে পড়িলে রাজ্য সরকারকে তাঁহারা পার্শ্বেই পাইবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy