ফাইল চিত্র।
দুর্গাপূজা বাংলার ঐতিহ্য, গর্ব। সম্প্রতি ইউনেস্কোর বিচারে কলিকাতার দুর্গাপূজা আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও লাভ করিয়াছে। ঐতিহ্যের পাশাপাশি এই পূজার আর্থিক দিকটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বহু মানুষের রুজিরুটির সংস্থান হয় এই উৎসবকে ঘিরিয়া। সম্ভবত সেই কারণেই ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাইবার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলিয়াছিলেন, বিশ্বের সমস্ত বাঙালির কাছে এই পূজা উৎসব অপেক্ষা আরও অধিক কিছু। সুতরাং, ঐতিহ্য এবং অর্থনীতি— দুই সূত্রকেই একত্রে শিল্পমহলের সম্মুখে তুলিয়া ধরিতে চাহিতেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আগামী এপ্রিলে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজ়নেস সামিট-এ বাংলার দুর্গোৎসবকে ‘শো-কেস’ করিবার পরিকল্পনা হইয়াছে, যাহাতে লগ্নি টানিবার পথ সহজ হয়।
এই উদ্যোগ স্বাগত। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করিয়া যে বিরাট আর্থিক কর্মকাণ্ড ঘটে, তাহাকে বিশ্বের দরবারে তুলিয়া ধরা হইলে পর্যটন মানচিত্রে বাংলার জায়গাটি উজ্জ্বলতর হইবে। তাহা রাজ্যের অর্থনীতির পক্ষেও কল্যাণকর হইয়া উঠিতে পারে। বিদেশের উদাহরণ দ্রষ্টব্য। ভেনিসের কার্নিভাল, অ্যামস্টারড্যামের টিউলিপ উৎসব, বার্লিনের বিয়ার উৎসব, স্পেনের লা টোমাটিনা আঞ্চলিক ঐতিহ্যকে তুলিয়া ধরিবার পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করিবার কাজটিও সাফল্যের সঙ্গে করিতেছে। সেই সম্ভাবনা বাংলার দুর্গাপূজার মধ্যেও প্রভূত পরিমাণে বর্তমান। যাহা নাই, তাহা হইল সমগ্র উৎসবটির মধ্যে এক সুবিন্যস্ত পরিকল্পনার ছাপ। যত্রতত্র মণ্ডপ, রাস্তা অবরুদ্ধ করিয়া পূজা, যানযন্ত্রণা, শব্দদূষণ ইত্যাদি কোনও ঐতিহ্যবাহী উৎসবের অঙ্গ হইতে পারে না। বাংলার উৎসবকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করিতে হইলে অবিলম্বে এই সকল অনাচার বন্ধ করিতে হইবে। উৎসবের দিনে রাজপথের ভিড় বা উচ্ছ্বাস যাহাতে বল্গাহীন না হইয়া পড়ে, তাহা নিশ্চিত করাও একান্ত প্রয়োজন। দৃষ্টি দিতে হইবে পর্যাপ্ত গণপরিবহণ, হোটেল-রেস্তরাঁয় খাবারের গুণমান, চিকিৎসার সুব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন দিকের প্রতি। সরকারই সমস্ত বন্দোবস্ত করিবে, তাহা নহে। কিন্তু এই সকল ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রটি যাহাতে প্রস্তুত হয়, সেই ব্যবস্থাটি সরকারকেই করিতে হইবে। মনে রাখা প্রয়োজন, আঞ্চলিকতার খোলস ছাড়িয়া যখনই বৈশ্বিক হইবার পথে পা বাড়াইবে দুর্গাপূজা, তখনই সেই উৎসবের চরিত্রে এক আমূল পরিবর্তন দরকার। তাহা পরিকাঠামোর ক্ষেত্রেও, এবং সেই পরিবর্তনকে বরণ করিয়া লইবার উপযুক্ত মানসিকতার মধ্যেও।
প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র দুর্গাপূজা নহে, বিশ্ব দরবারে তুলিয়া ধরিবার ন্যায় ঐতিহ্য কলিকাতার বড় কম নাই। কিন্তু অধিকাংশই যথাযথ পরিকল্পনা এবং নান্দনিকতার সংমিশ্রণের অভাবে এত দিনেও যথেষ্ট প্রচার পায় নাই। কলিকাতার চিন্তাভাবনার মধ্যে, ধর্মাচরণের মধ্যে, শিক্ষা-সংস্কৃতির জগতে এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বর্তমান। সকলকে লইয়া পথ হাঁটিবার ঐতিহ্য। নবজাগরণের ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে সফল ভাবে তুলিয়া ধরিবার বড় প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাহা হয় নাই। শহর আলোয় সাজিয়াছে, গঙ্গার ঘাটের সৌন্দর্যায়ন হইয়াছে। কিন্তু শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাসটি লোকচক্ষুর অন্তরালেই রহিয়া গিয়াছে। কলিকাতা মানে শুধুই দুর্গাপূজা নহে, কলিকাতা এক সমৃদ্ধ বৌদ্ধিক চর্চার কেন্দ্রও বটে। এই শহর এবং রাজ্য সরকার সেই তথ্যটি যেন বিস্মৃত না হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy