মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটির ‘নিজস্ব রং’ বলে কিছু রয়েছে, এমন কথা আগে শোনা যায়নি। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি প্রশ্ন করেছেন, উত্তরবঙ্গে বাড়ির ছাদ রং করতে কেন রাজ্যের নিজস্ব রং ব্যবহার করা হচ্ছে না? সংবাদে প্রকাশ, নবান্নে একটি প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে, উত্তরবঙ্গের বাড়ির ছাদে লাল এবং গেরুয়া রঙের টিন ব্যবহার হচ্ছে, মেট্রো স্টেশনের গায়ে গেরুয়া রং লাগানো হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন টিন সরবরাহকারীদের জানাতে যে, লাল বা গেরুয়া রাজ্যের রং নয়। পূর্ত দফতরকে ‘নবান্নের রং’ সকলকে পাঠানোর নির্দেশ দিতে বলেছেন। নবান্নের রং নীল-সাদা, যা আবার তৃণমূল দলটির রং বলেও পরিচিত। এর ব্যবহার সর্বত্র ছড়ানোর চেষ্টা অনেক দিনই চলছে— প্রশাসনিক ভবন, সরকারি স্কুল, রাজপথের রেলিং-সহ নানা নগরসজ্জায় নীল-সাদা অনেক দিন ধরেই ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি, বাড়ির রং নীল-সাদা করলে কর-এ ছাড় মিলবে, এমন ঘোষণাও করা হয়েছিল। তার পরেও নীল-সাদা রং রাজ্যের বসতবাড়িতে তেমন ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না বলে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ। রাজ্যবাসীর কাছে অবশ্য এটা আশার কথা— কিছু কর বাঁচানোর বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক যে তাঁদের স্বাতন্ত্র্য বিসর্জন দিতে রাজি নন, ব্যক্তিগত পছন্দের পরিসরে রাজনৈতিক অনুশাসনের প্রবেশ তাঁরা বর্জন করছেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ। কিন্তু প্রকৃত প্রশ্ন দু’টি। এক, ‘রাজ্যের রং’ বলে আদৌ কিছু হতে পারে কি না, আর দুই, যদি বা হয়, তা প্রশাসন নির্ধারণ করতে পারে কি? সে এক্তিয়ার কি সরকারের শীর্ষব্যক্তির রয়েছে?
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতার এক্তিয়ার কতখানি, তাঁর ক্ষমতার সীমার শেষ কোথায়, সে প্রশ্নের উত্তরটা এই প্রসঙ্গে এক বার আলোচনা করে নেওয়া দরকার, যদিও ঠিক জায়গায় সেই ‘উত্তর’ পৌঁছবে কি না, সন্দেহ বিস্তর। ইতিহাস দেখিয়েছে, একটি জাতির পরিচয় নির্মাণের তাগিদের পিছনে, জাতি তথা রাজ্যের মানুষের মধ্যে ঐক্য এবং সংহতির বোধ তৈরি করতে, কোনও বিশেষ দিবস পালন, কোনও বিশেষ গান সমস্বরে গাওয়ার মূল্য অনস্বীকার্য। তাই পয়লা বৈশাখকে বাংলার রাজ্য দিবস, কিংবা ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি রাজ্য সঙ্গীত বলে গ্রহণ করতে বাধা থাকে না। কোনও রাজ্যের বিচিত্র, বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রাজ্যের ফুল, পাখি বা প্রাণী রাজ্যের সরকার নির্ধারণ করে একই উদ্দেশ্যে— কোনটি রাজ্যের ঐতিহ্য, সকলের দ্বারা বিশেষ ভাবে রক্ষণীয়, তা নির্দেশ করতে। কিন্তু এই নিরিখেও রাজ্যের রঙের ধারণাটি আপত্তিকর। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রকৃতি বা সংস্কৃতিগত ঐতিহ্যের কোনও একটি বৈশিষ্ট্যকে সকলের জন্য মূল্যবান বলে নির্দেশ করা হচ্ছে না। বরং জোর করা হচ্ছে এমন দু’টি রং ব্যবহার করতে, যা দলীয় কার্যসূচি ও প্রচারে ব্যবহার হয়। দলাদলির যে রাজনীতি রাজ্যকে নিয়ত বিভাজিত, বিপর্যস্ত করছে, তার কোনও একটি রংকে অবিকল্প বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা সমর্থনের যোগ্য নয়। সরকারি প্রকল্পে প্রাপ্ত আবাসের স্বত্বাধিকারী নাগরিক, সরকার নয়। নাগরিক তাঁর পছন্দের রঙে বাড়ির ছাদ, দেওয়াল, সব কিছু রাঙাতে পারেন। সরকারের কিছুই করার নেই, নাগরিকের পছন্দের রং জোগানো ছাড়া। রাজনীতিতেই হোক, বা বাড়ির ছাদে-দেওয়ালে, বহু রঙে আঁকতে হবে রাজ্যের ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy