রবীন্দ্র সেতু তথা হাওড়া ব্রিজ।
হাওড়া ব্রিজের গায়ে বসবে জায়ান্ট ভিডিয়ো স্ক্রিন, সূক্ষ্ম তার দিয়ে এমন ভাবে তৈরি যা চর্মচক্ষে দৃশ্যমান নয়, সেতুর সৌন্দর্য ঢাকবে না। কাছেই মিলেনিয়াম পার্ক থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে আধুনিকতর প্রযুক্তির দৃশ্যশ্রাব্য উপস্থাপনা, ব্রিজের উপর খেলা করবে লেসার আলো, দেখা যাবে কলকাতা হাওড়া দু’জায়গা থেকেই। মহানগরের অভিজ্ঞান রবীন্দ্র সেতু তথা হাওড়া ব্রিজের নৈশ সৌন্দর্য আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে এই প্রস্তাব করেছে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান চিঠিতে লিখেছেন জাতীয় ঐতিহ্যবহ স্থাপত্য হিসেবে হাওড়া ব্রিজের গুরুত্বের কথা, বিশেষত ব্রিজ ঘিরে নৈশ প্রদর্শন ও পর্যটনের সম্ভাবনার কথাও। কলকাতার দুর্গাপুজো সম্প্রতি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে, আশি ছুঁই-ছুঁই হাওড়া ব্রিজকেও বিশ্বের চোখে আরও বেশি সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে সাংস্কৃতিক লাভ শহর, রাজ্য তথা দেশেরই, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এই সবই হবে, যদি প্রস্তাব পাশ হয়। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা আসলে দ্বিতীয় পর্যায়, প্রথম পর্যায়টি এখনই বিদ্যমান, শহরবাসী এখনকার ব্রিজের যে আলোকসজ্জা েদখে মুগ্ধ হন তা ব্রিজের আইনি অভিভাবক ‘রবীন্দ্র সেতু কমিশনার’দের মঞ্জুর করা অর্থে হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের সৌন্দর্যায়নের খরচ পাঁচ বছর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়-সহ প্রায় ৩৬ কোটি টাকা, সেই অর্থ বা পরিকাঠামো অপ্রতুল বলেই কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে অর্থসাহায্য চাইতে হচ্ছে। সরকারি অর্থসাহায্য কঠোর নিয়মনির্দিষ্ট, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের এই জাতীয় ক্ষেত্রে কোনও প্রকল্প বা ভান্ডার না থাকলে অর্থসহায়তা পাওয়া মুশকিল। উপরন্তু আছে সরকারি দফতরে লাল ফিতের ফাঁস। সুদূর পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহরে একটি সেতু ও তার সৌন্দর্যায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে দিল্লির বড়কর্তাদের অবহিত করাটাই তাই এক চ্যালেঞ্জ, প্রাক্-পরিকল্পনা ও প্রস্তাবকে হতে হবে নিখুঁত ও বিশদ, যুক্তি ও আবেগকে হতে হবে সুবিন্যস্ত। আশা করা যায়, বন্দর-আধিকারিকরা তা করেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজি করানোর এই দ্বিতীয় ও সমধিক জরুরি কাজটিতে কি রাজ্য সরকার কোমর বেঁধে যোগ দিতে পারে না? কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কো-স্বীকৃতি পেল, হাওড়া ব্রিজ নিয়েও কি রাজ্য সরকারের উদ্যোগ করা উচিত নয়? ইউনেস্কো-তালিকায় বিশ্বের সেতুর সংখ্যা খুব বেশি নয়, ফ্রান্স স্পেন ইটালি ব্রিটেন বসনিয়া ও হার্জ়েগোভিনার কিছু সেতু বিশ্বসম্মান পেয়েছে। হাওড়া ব্রিজও কেবলই এক সেতু নয়, শুধুই এক স্থাপত্যবিস্ময়ও নয়— কলকাতা, হাওড়া তথা সমগ্র বাংলার মানুষের আর্থ-সামাজিক ইতিহাসেরও সে ধারক ও বাহক, একটি জাতিগোষ্ঠীর স্বপ্ন ও সংস্কৃতির অভিজ্ঞান। তাকে সুন্দরতর করে তুলতে পোর্ট ট্রাস্টের যে পরিকল্পনা, রাজ্য সরকারকে তার পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করা দরকার। বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি পেতে হাওড়া ব্রিজের গৌরবময় অতীত-ইতিহাসের পাশে তার সুসজ্জিত ও রক্ষিত বর্তমানের উপস্থাপনাও প্রয়োজন, সে জন্যই পোর্ট ট্রাস্টের প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন জরুরি। হাওড়া ব্রিজের স্বীকৃতি ভারত-সংস্কৃতিরই সম্মান, পোর্ট ট্রাস্টের প্রস্তাবের সহমর্মী হয়ে রাজ্য তা কেন্দ্রকে বোঝাক। দুর্গাপুজোর বিশ্বসম্মান লাভের আনন্দ-আবহে রাজ্য সরকারের পরবর্তী স্বপ্নগন্তব্য হোক— হাওড়া ব্রিজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy