বর্ষাকাল আসন্ন। ভারী বৃষ্টিতে কলকাতার সুপরিচিত জলচিত্রটি এই বছরও যে অপরিবর্তিত থাকবে, সে আশঙ্কাটি বৈশাখী বৃষ্টিতেই তীব্রতর হল। সামান্য বৃষ্টিতেই যে কলকাতা ভেসে যায়, এবং ক্ষেত্রবিশেষে জল নামতে সপ্তাহ গড়িয়ে যায়, তার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক এবং থার্মোকল। পুরসভার নানা সমীক্ষায় তা স্পষ্ট। জলনিকাশি নালা এবং গালিপিটগুলি প্লাস্টিক পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির জল সহজে বেরোতে পারে না। দুর্ভোগ বাড়ে নাগরিকের। সুতরাং, এই বছর কলকাতা পুরসভা শহরের জলচিত্র পরিবর্তনের শপথ নিয়েছে। বলা হয়েছে, বর্ষার আগে থেকেই শহরের কিছু বাজারে প্লাস্টিকে নিষেধাজ্ঞার নিয়মটি কার্যকর করা হবে। বিক্রেতাদেরও প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
উদ্যোগ সাধু। কিন্তু বিপদের চরিত্রটি যেখানে জানা, ভান্ডারে অস্ত্রও মজুত, তা সত্ত্বেও পরিত্রাণ কেন মেলে না, সহজে বোধগম্য হওয়ার নয়। দেশের সর্বত্র ৫০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আগেই জারি হয়েছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে যে প্রশাসনিক কড়াকড়ির প্রয়োজন ছিল, এত বর্ষা পার করেও কলকাতায় তা নজরে পড়েনি। বিক্ষিপ্ত ভাবে যে উদ্যোগ হয়েছে, তা চরিত্রগত ভাবে স্থানীয় এবং সাময়িক। দোকানে-বাজারে সহজলভ্য সমস্ত প্লাস্টিক ব্যাগের ঘনত্ব ৫০ মাইক্রনের বেশি কি না, জানার উপায় নেই। এই শিথিলতার সুযোগে সমস্ত ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগই বাজারে ব্যবহৃত হয়েছে। কলকাতার অবস্থান এবং তার গামলাসদৃশ আকৃতির কারণে জমা জল দ্রুত নামার সুযোগ পায় না। অতঃপর প্লাস্টিক জমলে পরিণতি কী হতে পারে, তা নতুন করে উপলব্ধির বিষয় নয়। গত বছর কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের একটি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল, ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন, আমদানি, মজুত রাখা, বিক্রি এবং ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। মাহেন্দ্রক্ষণ সমাগত, কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে আশাবাদী হওয়ার উপায় নেই।
পরিবেশ, এবং জনস্বার্থে গৃহীত কোনও উদ্যোগের মূলে থাকে প্রশাসনিক সদিচ্ছা। এইখানেই এই শহরে এবং সামগ্রিক ভাবে রাজ্যেও এক বিরাট ফাঁক থেকে যাচ্ছে। কালক্রমে সেই ফাঁক ভরাট করছে সঙ্কীর্ণ নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি। প্লাস্টিক নিয়ে কড়াকড়ি করলে তা ক্রেতা-বিক্রেতার বড় অংশের অসন্তোষের কারণ হতে পারে। সম্ভবত সেই জন্যই প্রতি বর্ষার আগে নিয়ম করে প্লাস্টিকের প্রসঙ্গটি ওঠে এবং বর্ষা-শেষে ফের হিমঘরে ঢুকে যায়। এই কাজ কোনও এক নির্দিষ্ট ঋতুর জন্য নয়, সারা বছরের— পুরপ্রশাসন কি তা জানে না? সত্য যে, প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু উৎসে এর ব্যবহার না আটকালে শুধু প্রক্রিয়াকরণে সমাধান হবে না। প্রসঙ্গত, বর্ষাকাল ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ারও সময়। জমা জলেই মশা বংশবিস্তার করে। সুতরাং, অবিলম্বে প্লাস্টিক সরিয়ে নিকাশি নালা-নর্দমাগুলি পরিষ্কার করার সঙ্গেই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবেশী সিকিম অনেক আগেই প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে পেরেছে। পশ্চিমবঙ্গ এত দিনেও যে পারল না, তা সবিশেষ লজ্জার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy