ফাইল চিত্র।
গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পঞ্জাব সফরে যে অঘটন ঘটিয়াছিল তাহার কার্য এবং কারণ দুইই আপাতত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচার্য। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সত্যই বিঘ্ন ঘটিয়াছিল কি না, ঘটিলে কাহার দায়ভাগ কতখানি, এই ঘটনার পিছনে গভীরতর ষড়যন্ত্র ছিল কি না, ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর হয়তো ক্রমে প্রকাশিত হইবে, হয়তো বা সকল হট্টগোল অচিরেই কালের কৃষ্ণগহ্বরে অন্তর্হিত হইবে। আপাতত দেশের নাগরিকদের সম্মুখে রহিয়াছে বিবিধ জল্পনা ও অভিযোগ, যাহার অনুপ্রেরণা আসিতেছে প্রধানত শাসক শিবির হইতে। কেহ ‘গুরুতর বিচ্যুতি’র গম্ভীর বার্তা ঘোষণা করিতেছেন, কেহ প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে যজ্ঞে বসিতেছেন, কেহ বা সান্ধ্য আসরে প্রতিপক্ষকে তারস্বরে গালি দিতেছেন। লক্ষণীয়, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাহানির আশঙ্কাটি যাঁহার উচ্চারণে একেবারে শুরুতেই আভাসিত হইয়াছিল, তাঁহার নাম নরেন্দ্র মোদী— ‘বাঁচিয়া ফিরিতে পারিবার জন্য’ তিনি পঞ্জাবের (কংগ্রেস সরকারের) মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাইয়াছিলেন। এমন উক্তিতে যে গোত্রের ব্যঙ্গ নিহিত থাকে তাহা দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোভা পায় কি না, ভারতবাসী হয়তো আজ আর তাহা লইয়া চিন্তিত হইবেন না, তাঁহারা বিস্তরে পাথর হইয়াছেন; তবে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রশাসনের প্রতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর এমন কটাক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারতের পক্ষে অনুকূল তো নহেই, উদ্বেগজনকও বটে।
যে কোনও নাগরিকের অবাধ চলাচলের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। তদুপরি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান, তাঁহার পদটির কারণেই মূল্যবান; তিনি আপন সময় কী ভাবে ব্যবহার করিয়া থাকেন তাহা ভিন্ন প্রশ্ন, কিন্তু দেশের কোথাও তাঁহার চলার পথ এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হওয়া কাম্য নহে। এই কারণে, এবং এই নির্দিষ্ট অর্থে, পঞ্জাবে যাহা ঘটিয়াছে, প্রধানমন্ত্রীকে পনেরো হইতে কুড়ি মিনিট যে ভাবে পথে বসিয়া থাকিতে হইয়াছে, তাহা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এই ঘটনার সূত্রে যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাইবার অধিকারকেই অস্বীকার ও নিন্দা করিবার চেষ্টা চলিতেছে, তাহা নির্ভেজাল অপচেষ্টা। গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনও ক্ষমতাসীন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকার প্রতিটি নাগরিকের আছে। নরেন্দ্র মোদী বা তাঁহার সতীর্থরা হয়তো ব্যক্তিগত বা মতাদর্শগত শিক্ষা এবং দীক্ষার কারণে তাহা মানিতে পারেন না, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, এমনকি প্রশ্নকেও ‘আরবান নকশাল’ জাতীয় রাষ্ট্রদ্রোহের প্রমাণ বলিয়াই গণ্য করেন, কিন্তু তাহাতে গণতন্ত্রেরই অমর্যাদা ঘটে, যেমন অমর্যাদার অগণন দৃষ্টান্ত গত সাড়ে সাত বৎসরে তৈয়ারি হইয়াছে। পঞ্জাবের ঘটনায় শাসকদের বিচিত্র প্রতিক্রিয়ায় সেই তালিকায় আরও একটি দৃষ্টান্ত সংযোজিত হইল।
অথচ, এই কার্যত প্রতিবর্ত-ক্রিয়ার বাহিরে আপনাকে বাহির করিয়া গণতান্ত্রিক আদর্শের বিধান অনুসারে বিক্ষোভের মোকাবিলা করিতে পারিলে নরেন্দ্র মোদী পঞ্জাবে এক নূতন ইতিহাস রচনা করিতে পারিতেন। তাঁহার বিরুদ্ধে, তাঁহার নীতি ও আচরণের বিরুদ্ধে যাঁহাদের ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ তাঁহাদের মুখোমুখি দাঁড়াইয়া— অথবা দূরে দাঁড়াইয়াই— প্রধানমন্ত্রী তাঁহাদের সহিত একটি কথোপকথনে যাইতে পারিতেন, কথোপকথনের সুযোগ না থাকিলে অন্তত আলোচনার আহ্বান জানাইতে পারিতেন। অন্তর হইতে গণতান্ত্রিক হইবার দাবি করিলে হয়তো তাঁহার প্রতি অবিচার হইবে, কিন্তু নিছক রাজনৈতিক কৌশল হিসাবেও উদার আচরণের একটি সুবর্ণসুযোগ তাঁহার মিলিয়াছিল। সেই সুযোগ তিনি হেলায় হারাইলেন। অথবা, কে জানে, গণতান্ত্রিক আচরণের সুযোগকে তিনি সুযোগ বলিয়া মনেই করেন না, তিনি যাহা করিবার তাহাই করিয়াছেন। কে জানে গরল কিনা প্রকৃত পানীয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy