Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Pradhan Mantri Awas Yojana

রাজনৈতিক আবাস

প্রশ্ন হল, এই ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’-কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার জন্য মিটিং-মিছিল এবং সভাই যথেষ্ট ছিল— তার জন্য ১০,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করার প্রয়োজন ছিল কি?

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩ ০৭:২২
Share: Save:

একুশ তারিখে শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি টাকা না দেয়, তবে রাজ্য সরকারই সেই টাকা দেবে, কিন্তু ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগেই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে অনুমোদিত ১১.৩৬ লক্ষ বাড়ি তৈরি হবে। নবান্ন সূত্র থেকে হিসাবও মিলল— রাজ্য সরকারই যদি বাড়ি তৈরির টাকা দিয়ে দেয়, তাতে সরকারের খরচ হবে দশ হাজার কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, বিভিন্ন দফতরের তহবিলে যে টাকা উদ্বৃত্ত পড়ে রয়েছে, সব একত্রিত করে ব্যবস্থা হবে এই দশ হাজার কোটি টাকার। আশঙ্কা হয়, মুখ্যমন্ত্রী বুঝি রাজ্য সরকারের কর্তব্য ভুলেছেন— রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পর্ক মান-অভিমানের নয়, ‘পাল্টা দেওয়া’রও নয়— কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের যা প্রাপ্য, তা জোগাড় করে আনাই রাজ্য সরকারের কাজ। যুগের পর যুগ রাজ্যের মন্ত্রী-আমলারা সেই কাজটিই করেছেন। গত কয়েক বছরে ‘কেন্দ্রের টাকা চাই না, নিজেরাই করে নেব’ গোছের যে নীতি রাজ্য সরকার নিয়েছে, তাতে ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের মানুষেরই। সেই কারণটি বুঝতে অর্থশাস্ত্রে পিএইচ ডি ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। রাজ্য সরকারের হাতে যে টাকা আছে— এবং মনে রাখা ভাল যে, রাজ্যের রাজকোষ সর্বদাই বাড়ন্ত— তার সঙ্গে বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের আদায় করে আনা টাকা যোগ হলে রাজ্যে উন্নয়ন খাতে ব্যয় বাড়ত। তাতে প্রত্যক্ষ লাভ যেমন হত, তেমনই রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণও বাড়ত। এই সহজ অঙ্কটিকে রাজনীতির ঘোলা জলে নিমজ্জিত করে কী লাভ হচ্ছে, সেই খোঁজ করা প্রয়োজন।

১০,০০০ কোটি টাকা অঙ্কটি ঠিক কতখানি? ২০২৩-২৪ সালের রাজ্য বাজেটকে মাপকাঠি ধরে যদি হিসাব কষা যায়, তবে এই অঙ্কটি এই বাজেটে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ খাতে মোট বরাদ্দের ৬৭ গুণ; শিক্ষা, ক্রীড়া, শিল্প ও সংস্কৃতি খাতে মোট মূলধনি ব্যয়বরাদ্দের আট গুণের বেশি; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে মোট বরাদ্দের ৫৪%। অর্থাৎ, টাকার অঙ্কটি সামান্য নয়। কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভা নির্বাচনের আগে এই টাকা ছাড়তে টালবাহানা করছে কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরটি রাজনৈতিক— বাড়ি তৈরি হলে তার দরুন কৃতজ্ঞতা বিজেপির বদলে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে জমা পড়বে, সেই আশঙ্কা বিজেপি নেতৃত্বের বিলক্ষণ রয়েছে। প্রসঙ্গত, কংগ্রেস-শাসিত রাজ্য ছত্তীসগঢ়েও আবাস যোজনার কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পৌঁছয়নি। এই রাজনৈতিক ক্ষুদ্রতা অতি দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু ভারত এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। রাজ্যের বিজেপি নেতারাও বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকে দেওয়ার বড়াই করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রের থেকে টাকা পেতে গেলে রাজ্যেও বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে, এই কথাটি বলার মধ্যে দেশের গঠনকাঠামোর প্রতি কতখানি অশ্রদ্ধা নিহিত থাকে, নেতারা ভেবে দেখতে পারেন। তবে, দেশের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা যে সাধনার ফল, অধিকাংশ রাজনীতিকেরই তাতে রুচি নেই।

কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’-কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার জন্য মিটিং-মিছিল এবং সভাই যথেষ্ট ছিল— তার জন্য ১০,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করার প্রয়োজন ছিল কি? পিএম কিসান থেকে জাতীয় কর্মসংস্থান যোজনা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান অবশ্য এই রকমই— কেন্দ্র টাকা দিতে না চাইলে রাজ্য সরকারই সেই খরচ করবে। কিন্তু, পাশাপাশি কেউ একটি অন্য সন্দেহও করতে পারেন— যদি কেন্দ্রের টাকা খরচ না করা হয়, তবে কেন্দ্রীয় নজরদারিরও আর প্রশ্ন থাকে না, ফলে দুর্নীতি আরও লাগামছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। লোকসভা ভোটের আগে এই বিপুল পরিমাণ টাকা রাজ্য সরকার খরচ করলে তা শেষ অবধি উদ্দিষ্ট কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেই হিসাব রাখার দায়িত্বও কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অস্বীকার করতে পারেন না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy