
অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
ওয়াকফ বিলের মাধ্যমে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর ‘আক্রমণের’ চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম)-এর প্রধান তথা হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির। তাঁর দাবি, “এর মাধ্যমে মুসলিমদের উপর আক্রমণের চেষ্টা চলছে। মোদী সরকার এই চেষ্টা করছে।” ওয়াইসির বক্তব্য, অন্য ধর্মীয় বোর্ডগুলি যে ভাবে কাজ করে, তার থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের বিরোধী বলে দাবি মিম প্রধানের।
ওয়াকফ বিল নিয়ে লোকসভায় আলোচনা চলছে এখনও। এরই মধ্যে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর দাবি, এই বিলের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের প্রান্তিক শ্রেণিতে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের ব্যক্তিগত আইন এবং সম্পত্তির অধিকারের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র হিসাবে বিলটিকে ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ রাহুলের।
তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের কোথাও উল্লেখ কি উল্লেখ রয়েছে যে ওয়াকফ বোর্ডের পাওয়া টাকা বিধবা মুসলিম মহিলা, শিশু এবং অনাথদের জন্য খরচ করা হবে?” এর পরেই বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “বিরোধীরা ১২ ঘণ্টা ধরে চিৎকার করে যাচ্ছেন, কিন্তু এমন কিছু দেখাতে পারেননি।” বিজেপি সাংসদের দাবি, নতুন বিলে নরেন্দ্র মোদীর সরকার নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছে এই বিষয়ে। সেখানে এই টাকা বিধবা, দরিদ্র এবং অনাথদের জন্য ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
কল্যাণের মতো ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-র সদস্য ছিলেন শিবসেনা (উদ্ধব) শিবিরের সাংসদ অরবিন্দ সাবন্তও। তাঁর দাবি, জেপিসিতে প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে আলোচনা হয়নি।
ওয়াকফ বিল নিয়ে লোকসভায় আলোচনা চলছে এখনও। এরই মধ্যে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করলেন কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। কেন্দ্রের ওয়াকফ বিলকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে নিশানা করেন তিনি। এই বিলের মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ খড়্গের। সমাজমাধ্যমে তাঁর দাবি, বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘুদের ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ বলে বিবেচনা করে আসছে। এই বিলের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তির উপর নিশানা করা হচ্ছে বলে দাবি কংগ্রেস সভাপতির। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এই বিলটি পেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
লোকসভায় বিজেপি এবং তাদের জোটশিবির ওয়াকফ বিল নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ শানিয়েছে। বিরোধীরাও পাল্টা অভিযোগ তুলেছে, এই বিলের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অধিকারকে নিশানা করছে সরকার। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ তোলেন, এই বিল সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় আচার পালনের সাংবিধানিক অধিকারকে লঙ্ঘন করে।
২০১৩ সালের ওয়াকফ আইনের সমালোচনা করলেন বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য। তাঁর বক্তব্য, ২০১৩ সালের ওয়াকফ আইনের মাধ্যমে কংগ্রেস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইনরূপী’ একটি দৈত্য তৈরি করেছিল। যেখানে ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই সব ক্ষমতা ছিল। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ছিল না সেখানে। তিনি বলেন, “আইনের ৪০ নম্বর ধারায় মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ড ইচ্ছামতো যে কোনও জমি দখল করার সুবিধা পেয়েছে। যাদের এই বিষয়ে আপত্তি ছিল, তারা ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে পারতেন। এই ট্রাইব্যুনালটি ছিল একটি ‘কাঙারু কোর্ট’-এর মতো। এখানে যা নির্দেশ দেওয়া হত, সেটিই চূড়ান্ত ছিল। তার বিরুদ্ধে আবেদন করা যেত না।”
ওয়াকফ বিল নিয়ে আলোচনায় বিরোধীদের বিঁধলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে অন্যের জমি দান করে দেওয়া যায় না। দান একমাত্র নিজের জমিই করা যায়।’’ সংসদে একটি তালিকা হাতে নিয়ে শাহ জানালেন, কোন কোন জমি ওয়াকফকে দান করা হয়েছে। শাহের বক্তব্য, তার মধ্যে মন্দিরের জমি যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে অন্যান্য ধর্মীয় স্থান এবং সরকারের জমি। এর পরেই বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘একজন মুসলিম তো চ্যারিটি কমিশনার হতেই পারেন। তাঁকে ট্রাস্ট দেখতে হবে না, আইন অনুযায়ী ট্রাস্ট কীভাবে চলবে, সেটা দেখতে হবে। এটা ধর্মের কাজ নয়। এটা প্রশাসনিক কাজ। সব ট্রাস্টের জন্য কি আলাদা আলাদা কমিশনার থাকবে? আপনারা তো দেশ ভাগ করে দিচ্ছেন। আমি মুসলিম ভাই-বোনদের স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের ওয়াকফ বোর্ডে কোনও অমুসলিম থাকবে না। এই আইনে এমন কিছু নেই।’’
ওয়াকফের জমি নিয়ে কংগ্রেস দুর্নীতি করেছে। সংসদে এমনই মন্তব্য করলেন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর। তাঁর অভিযোগ, সংশোধিত ওয়াকফ বিল নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তির কারণ ওই দুর্নীতি। এই বিল পাশ হয়ে গেলে তাদের নানা দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে।
লোকসভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের উপর বিতর্ক চলাকালীন উদ্ধব সেনা সাংসদ অরবিন্দ সাবন্ত প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সরকার কি মন্দির কমিটিতে অহিন্দুদের থাকার অনুমতি দেবে? কারণ তারা ওয়াকফ বোর্ড কমিটিতে অমুসলিমদের স্থান দেওয়ার চেষ্টা করছে?’’
কেন্দ্রের মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ দফতরের মন্ত্রী লালন সিংহের দাবি, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি নির্যাতিত মুসলিম এবং মহিলাদের ক্ষমতায়ণের কথা বলে। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধীরা তাঁদের ক্ষমতায়ণের বিরুদ্ধে কি?’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের বিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যেখানে ওয়াকফকে যে কোনও জমি দাবি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন,‘‘এটা কোন ধরনের আইন ছিল যেখানে ওয়াকফকে যে কোনও জমির মালিকানা পেতে অনুমতি দেয়?’’
ডিএমকে সাংসদ এ রাজা ওয়াকফ বিলের বিপক্ষে বলতে ওঠেন। তিনি মোদী সরকারকে আক্রমণ করে জানান, বিলের বিপক্ষে ভোটাভুটিতে অংশ নেবে তাঁদের দল।
শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওয়াকফ সংশোধনী বিলের আড়ালে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ভাগ করতে চাইছে। যদি ওরা একতাই চায়, তা হলে বিলে কেন ভাগের চেষ্টার কথা? সম্প্রদায়ের উপর ভিত্তি করে ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে শ্রেণিবিভাগ শাসকদলের খারাপ উদ্দেশ্যই ইঙ্গিত করে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওয়াকফ বিল হল সরকারি মাধ্যম দিয়ে ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের একটি প্রচেষ্টা। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি অযৌক্তিক। ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের মেরুদণ্ড।’’
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি এই বিলকে একেবারেই সমর্থন করছি না। এই বিল অসাংবিধানিক। তৃণমূলের তরফে আমরা এই বিলের বিরোধিতা করছি।’’ তিনি জানান, বিজেপির আনা এই বিলে মুসলমানদের অধিকার খর্ব হচ্ছে। এই বিল অসাংবিধানিক। কল্যাণের দাবি, ওয়াকফ বিলের নেপথ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। ভোটাভুটি হলে এই সংশোধনী বিলের বিপক্ষে ভোট দেবে তৃণমূল।
এসপি প্রধান তথা সাংসদ অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘বিজেপি সরকারের নতুন রণনীতি ওয়াকফ বিল। ভাগাভাগির জন্য এই বিল এনেছে বিজেপি। মুসলমান সম্প্রদায়কে পৃথক করে ফেলার চেষ্টা। আমরা বিলের বিপক্ষে ভোট দেব।’’ অখিলেশের আরও মন্তব্য,‘‘যখন দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে, তখন সরকার কেন একে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে? বিরোধিতা সত্ত্বেও কেন পাশ করানোর জন্য জোর দিচ্ছে?’’
‘‘বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রীও আগে ইদের উৎসবে যোগ দিতেন। হঠাৎ কী হল জানি না। আমাদের সংবিধান কি এই শিক্ষা দেয়?’’ বললেন অখিলেশ। তিনি আরও বলেন, ‘‘যখনই বিজেপি কোনও বিল আনে নিজেদের ব্যর্থতা চাপা দেওয়ার জন্য আনে।’’
সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অখিলেশ যাদব ওয়াকফ বিল নিয়ে বলতে গিয়ে নোটবন্দির প্রসঙ্গ তুললেন। তাঁর দাবি, একের পর এক ব্যর্থতা দিয়ে এই বিল তৈরি হয়েছে। বিজেপি শুধু একটি পুরনো ঘটনার কথা ভাবে। অযোধ্যার কথা।
সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, ‘‘আজ, আমাদের দেশে মোট ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা ৪.৯ লক্ষ থেকে বেড়ে ৮.৭২ লক্ষ হয়েছে। যদি এই পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি সঠিক ভাবে পরিচালিত হত, তা হলে কেবল মুসলমানদের জীবনকেই উন্নত করবে না, সমগ্র দেশের ভাগ্যকেও বদলে দেবে...।’’
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ পাশ করাতে গিয়ে ইউপিএ সরকারের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন রিজিজু। বক্তৃত করতে গিয়ে পাল্টা কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। দাবি করলেন, সংসদকে বিভ্রান্ত করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
গৌরব বলেন, “এই বিল সংবিধানকে অবজ্ঞা করতে চায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অপদস্থ করতে চায় এবং ভারতের সমাজকে বিভক্ত করতে চায়।”
রিজিজুর দাবি, মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করছে না সংশোধিত বিল। একই সঙ্গে তিনি জানান, কেবল ওয়াকফ সম্পত্তির দেখভাল সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই কাজ করছে নতুন বিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy