Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta Pavlov Hospital

অ-মানবিক

পাভলভের মতো রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে স্বাস্থ্য দফতর তৎপর হয়েছে, আশার কথা। কিন্তু তৎপরতায় এত সময় লাগল কেন?

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২২ ০৫:৩৫
Share: Save:

নানা সময়ে পাভলভ মানসিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের রিপোর্ট সেই অভিযোগগুলিতেই যেন সিলমোহর দিল। তাঁদের রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে, রোগীদের দেখাশোনার জন্য নিযুক্ত নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্তব্যে গাফিলতি করছেন। রোগীদের যে খাবার পরিবেশিত হয়, তা-ও নিম্নমানের। খাবার পরিবেশন করা হয় অপরিচ্ছন্ন পাত্রে। এবং সর্বাপেক্ষা ভয়ঙ্কর হল, হাসপাতালের অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে দু’টি ঘরে ১৩ জন রোগীকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যদিও ইতিপূর্বে কেরল হাই কোর্ট কোনও মানসিক রোগীকে নির্জন কুঠুরিতে না রাখার সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল।

পাভলভের মতো রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে স্বাস্থ্য দফতর তৎপর হয়েছে, আশার কথা। কিন্তু এ-হেন তৎপরতায় এত সময় লাগল কেন? পাভলভ নিয়ে অভিযোগ তো নতুন নয়। তা সত্ত্বেও এত দিনে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হয়নি কেন? গত বছর এই হাসপাতালেই গলায় ডিম আটকে এক যুবকের মৃত্যু ঘটেছিল। অভিযোগ উঠেছিল, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যুবকটি যখন ছটফট করছে, সেই সময় কোনও নার্স সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। অব্যবস্থার এর চেয়ে ভয়ঙ্কর উদাহরণ আর কী হতে পারে? দেখা গিয়েছে, পাভলভ সম্পর্কে যখনই কোনও অভিযোগ ওঠে, তখনই এখানে রোগীর সংখ্যাধিক্যের প্রসঙ্গটি তোলা হয়। অনস্বীকার্য, এই সরকারি হাসপাতালে শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সেই কারণে রোগীদের প্রতি নজরদারি করার যথেষ্ট কর্মী থাকবে না, রোগীদের আধপেটা খাইয়ে রাখা হবে? রোগীর সংখ্যাধিক্য ঘটলে কেন তার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়নি, অথবা হাসপাতালের চাপ কমানোর ব্যবস্থা করা হয়নি, সেই প্রশ্নও থেকেই যায়। বছর চারেক আগে স্বাস্থ্য দফতরের তৈরি এক কমিটি রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল, পাভলভ-সহ বেশ কিছু হাসপাতালে নিয়মিত রোগীদের পরীক্ষা করা হয় না। হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যক শুগার, প্রেশার মাপার যন্ত্র, অক্সিমিটার নেই। অথচ দাবি করা হয়, রাজ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। সব মানসিক হাসপাতালে বিভিন্ন খাতে টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছে। তার পরেও যে ছবিটি পাল্টায় না, তা সবিশেষ উদ্বেগের।

বস্তুত, মানসিক রোগীদের প্রতি হাসপাতালের এই অবহেলার চিত্রটি সমাজের এক বৃহত্তর অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নির্দেশ করে। যে দৃষ্টিভঙ্গিতে মানসিক রোগীকে ‘মানুষ’ বলেই মনে করা হয় না। তাই হয়তো বাড়ির ‘পাগল’ ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের অন্ধকার ঘরে রোগীদের বন্ধ রাখার মানসিকতা কোথাও যেন এক হয়ে যায়। তাঁরা অপরিচ্ছন্ন থাকলে, নোংরা বিছানায় শুলে নজর দেওয়ার প্রয়োজনটুকুও অনুভূত হয় না। পরিজন-পরিত্যক্ত, অসহায়, একাকী মানসিক রোগীর পক্ষে প্রতিবাদী হয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলেই হয়তো অবহেলা চলতে থাকে দিনের পর দিন। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, মনের অসুখও এক ধরনের ‘অসুখ’। এবং অন্য রোগীদের মতো মনোরোগীদেরও যথাযথ চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেটুকুও যে এত দিনে নিশ্চিত করা গেল না, তা ঘোর লজ্জার। মানুষকে ‘মানুষ’ মনে না করার লজ্জা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta Pavlov Hospital Mental Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE