জল পান করিবার পূর্বে তাহার পরিস্রুততা লইয়া সাধারণত নিঃসংশয় হইয়া লন মানুষ। কিন্তু প্রতি বার শ্বাস লইবার পূর্বে তিনি কি নিশ্চিত থাকিতে পারেন শ্বাসবায়ুর বিশুদ্ধতা লইয়া? বিশ্বের দূষণচিত্র বলিতেছে, ভারত-সহ বহু দেশেই বায়ুদূষণ যে বিপজ্জনক মাত্রা স্পর্শ করিয়াছে, তাহাতে প্রতি বার শ্বাসের সঙ্গে একটু করিয়া বিষ প্রবেশ করিতেছে নাগরিকদের শরীরে। সঙ্গে ঢুকিতেছে নানাবিধ রোগজীবাণু। সুতরাং, ভাল থাকিবার জন্য পরিস্রুত পানীয় জলের সঙ্গে বিশুদ্ধ বায়ুও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর পক্ষ হইতেও কথাটি পুনরায় স্মরণ করাইয়া দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু ইহা তো বহু আলোচিত। নূতন করিয়া এই সতর্কবাণীর প্রয়োজন কী? প্রয়োজন কারণ, সম্প্রতি বাতাসের মাধ্যমে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস ছড়াইবার তত্ত্বটি জোরদার হইতেছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক জার্নাল ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রেও বলা হইয়াছে, ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ থাকিলে জ্বরজারি, শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ অর্ধেক কমিয়া যাইবে। অনুমান, কোভিডের ন্যায় অতিমারির তীব্রতাও কিছু কমিতে পারে।
কিন্তু ইহা তো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। বাস্তব বলিতেছে, চাহিলে নিজের জন্য পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা সাধারণ মানুষ করিতে পারেন, পারেন না নিজের জন্য বিশুদ্ধ বায়ুর জোগান নিশ্চিত করিতে। ঘরে ব্যবহার্য জল পরিস্রুত করিবার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে। ঘরের বাহিরে পা রাখিলে নিজ ব্যবহারের জলটুকু ক্রয় করিয়া লওয়া যায়। তদুপরি, নাগরিকদের নিকট পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছাইবার জন্য সরকারের নানা প্রকল্পও আছে। সর্বোপরি আছে সচেতনতা। অপরিশোধিত জল পান করিবার বিপদ সম্বন্ধে অল্পবিস্তর সকলেই সচেতন। কিন্তু সেই সচেতনতা দূষিত বায়ুর ক্ষেত্রে অনেকাংশেই নাই। পরিস্রুত জলের দাবিতে নাগরিক পথে নামেন। বিশুদ্ধ বাতাসের দাবিতে আন্দোলনের চিত্র দুর্লভ। মনে রাখিতে হইবে, অর্থের দ্বারা বিশুদ্ধ বায়ু ক্রয় করা নিতান্ত অসম্ভব না হইলেও অতি কঠিন। কাজেই, বায়ু দূষিত হইলে তাহা দরিদ্রকেও আঘাত করিবে, ধনীকেও ছাড়িবে না। ধনীরা উন্নততর বায়ু পরিশোধক যন্ত্র, জৈব বলয়ের সুরক্ষার সাময়িক ব্যবস্থা করিতে পারিবেন মাত্র। সার্বিক ভাবে পরিত্রাণ পাইবেন না। বাতাস সাম্যবাদে বিশ্বাসী।
যে কোনও মূল্যে বায়ুদূষণ হ্রাস করিতে হইবে। কাহারও একক প্রচেষ্টায় তাহা সম্ভব নহে। অগ্রসর হইতে হইবে প্রত্যেক দেশের সরকারকে। বায়ুদূষণের পরোক্ষ প্রভাবেই যে উষ্ণায়নের হার বৃদ্ধি পাইতেছে, তাহা কাহারও অজানা নহে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাইয়া বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হারে লাগাম পরাইতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তিও সম্পন্ন হইয়াছে। সেই সকল চুক্তির শর্তাবলি যাহাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সরকার যথাযথ পূরণ করে, সেই নজরদারির ভার জনগণের। এক পঞ্চদশ-বর্ষীয় কিশোরী যেমন এক প্রবল শক্তিধর দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ভ্রান্ত জলবায়ু নীতির বিরুদ্ধে গলা তুলিবার সাহস দেখাইয়াছিল, প্রয়োজনে সেই পথ অনুসরণ করিতে হইবে। বিশুদ্ধ বায়ু সেবনের অধিকার সকলের। সরকার তাহা বিস্মৃত হইলে, মনে করাইবার ভারটি জনগণকে লইতে হইবে বইকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy