Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

ডিজিটালেই আস্থা?

ইহা ঘটনা যে, অতিমারি-উত্তর দুনিয়ায় শিক্ষা সম্ভবত আর কখনও সম্পূর্ণ অফলাইন হইবে না, অনলাইন ব্যবস্থা অপরিহার্য হইবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১৯
Share: Save:

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করিয়াছেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে ডিজিটাল অসাম্য কমিতেছে দেশে। তাঁহার দাবিতে সত্য-মিথ্যার দুধজলের হিসাব কষা দেশবাসী বহু যাতনায় ছাড়িয়া দিয়াছে। কিন্তু, শিক্ষা এমনই একটি বস্তু, যাহার গুরুত্ব এমনকি প্রজন্মের গণ্ডিতেও সীমাবদ্ধ নহে— তাহা প্রজন্মান্তরেও প্রভাব ফেলে। সুতরাং, ডিজিটাল শিক্ষায় অসাম্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সত্যাসত্য বিচার প্রয়োজন— আরও প্রয়োজন অসাম্য হ্রাস করিবার প্রকৃত পথের সন্ধান করা। বিভিন্ন সমীক্ষা এবং সংবাদ প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, গত দুই বৎসরে দেশে ডিজিটাল অসাম্য বাড়িয়াছে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অনৃতভাষণটি এমনই স্পষ্ট যে, তাহা লইয়া অধিক কালক্ষেপ অনর্থক। কিন্তু, প্রশ্নটি শুধু অতীত বা বর্তমানের নহে— প্রশ্ন মূলত ভবিষ্যতের। প্রধানমন্ত্রী জানাইয়াছেন যে, তিনি শিক্ষার ক্ষেত্রে ডিজিটাল পথেই হাঁটিতে চাহেন। তাঁহার বক্তব্য, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা সীমাহীন থাকিবার কারণে, তাহা বহু ছাত্রছাত্রীর নিকট পৌঁছাইতে পারিবে। গ্রামের গরিব, দলিত, অনগ্রসর শ্রেণিকেও ইহার আওতায় আনা সম্ভব হইবে। প্রশ্ন হইল, ভারত এই কাজটি করিতে পারিবে কি?

ইহা ঘটনা যে, অতিমারি-উত্তর দুনিয়ায় শিক্ষা সম্ভবত আর কখনও সম্পূর্ণ অফলাইন হইবে না, অনলাইন ব্যবস্থা অপরিহার্য হইবে। কিন্তু, ভারতে ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমগুলি এখনও সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের নিকট সহজলভ্য নহে। সন্তানের পড়াশোনার জন্য একটি স্মার্টফোন ক্রয় করিবার সামর্থ্য অনেক পরিবারেরই নাই। আবার যাঁহাদের হাতে একটি ফোন আছে, তাঁহাদের একাংশের পক্ষেও নিয়মিত ডেটাপ্যাক ক্রয় করিয়া অনলাইন ক্লাস চালানো অসম্ভব। দরিদ্র পরিবারে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ডেটাপ্যাক ইত্যাদি এখনও বিলাসিতার নামান্তর। সুতরাং, কেন লকডাউনে বহু শিশু চিরতরে পঠনপাঠন বন্ধ করিয়া জীবিকার্জনে নিযুক্ত হইয়াছে, বুঝিতে কষ্ট হয় না। পরিকাঠামোগত সমস্যাও ভয়ঙ্কর। প্রান্তিক অঞ্চলের বহু শিক্ষার্থী এখনও যথাযথ ইন্টারনেট পরিষেবার বাহিরেই রহিয়া গিয়াছেন। ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ তাঁহারা পাইবেন কী উপায়ে? মোট পড়ুয়ার প্রায় কুড়ি শতাংশ যদি নিম্নমানের ইন্টারনেট সংযোগের কারণে শিক্ষার সুযোগ হইতে বঞ্চিত হন, সংখ্যার বিচারে তাহা উদ্বেগের বইকি!

সুতরাং কী করা হইয়াছে, তাহার ঢাক পিটানো বন্ধ রাখিয়া এই ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে কী করা প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা করিতে হইবে। ইন্টারনেট ক্রমে বিদ্যুতের ন্যায় অপরিহার্য হইয়া উঠিতেছে। তাই অবিলম্বে ‘প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ’-এর ন্যায় ‘প্রতি ঘরে ইন্টারনেট’-এর কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভেদরেখাটি মুছিবার নহে। ইহার সঙ্গেই দেখিতে হইবে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা যাহাতে একটি ডিজিটাল মাধ্যমের অভাবে থমকাইয়া না যায়। প্রয়োজনে তাহার জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ করিতে হইবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার চমকে অভ্যস্ত। বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাহা প্রায়শই মুখ থুবড়াইয়া পড়ে। শিক্ষার ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র যাহাতে সেই চমকেই আবদ্ধ না থাকে, নিশ্চিত করিতে হইবে। ‘সকলের জন্য শিক্ষা’র অধিকারটি সংবিধানপ্রদত্ত। তাহার সঙ্গে কোনওরূপ আপস নহে।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Central Government Digital Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy