বাংলায় প্রসূতিমৃত্যুর হার এখনও সর্বভারতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। তাই সরকারি হাসপাতালে তৈরি হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের একটি দল, যা সদ্যপ্রসূতিদের উপর বারো ঘণ্টা বিশেষ নজর রাখবে। যদিও সরকারি ব্যবস্থায় প্রায়ই পরিকল্পনা গ্রহণে যতটা তৎপরতা দেখা যায়, রূপায়ণে অতটা নয়, তবু এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হয়। কারণ, এই নির্দেশিকার সুপারিশগুলির দিকে চাইলে ইঙ্গিত মেলে, সরকারি চিকিৎসার কিছু কিছু ফাঁক চিহ্নিত করে সেগুলির প্রতিকারের একটি চেষ্টা রয়েছে। যেমন, সদ্যপ্রসূতির উপর নজরদারির জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়নি— প্রসূতি বিভাগেই তাঁদের শয্যাগুলি রাখা হচ্ছে, এবং সেগুলি থাকবে নার্সদের আসনের কাছাকাছি। আপাতদৃষ্টিতে সামান্য মনে হলেও, ব্যবস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ। কোনও রোগীকে বিচ্ছিন্ন করলে তাঁর জন্য আলাদা করে কর্মীর ব্যবস্থা করতে হয়, যা সরকারি হাসপাতালে করা কঠিন। এবং নিজেদের বসার জায়গাটিতেই যে হেতু অধিকাংশ সময়ে নার্সরা থাকেন, নথিপত্রের কাজগুলি তাঁদের অনেকখানি মনোযোগ টেনে রাখে, তাই সদ্যপ্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দ্রুত নির্ণয় করার জন্য নার্স আর রোগীর মধ্যে দূরত্ব বস্তুত জীবন আর মৃত্যুর দূরত্বে পরিণত হতে পারে। প্রসূতি বিভাগে একাধিক নার্স উপস্থিত থাকলেও যে প্রসূতিরা সর্বদা যথাসময়ে, যথাযথ মনোযোগ পান না, সে কথাটি প্রকারান্তরে স্বীকার করছে এই নির্দেশিকা।
কিন্তু, এত বিলম্ব কেন? কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুসারে প্রতিটি প্রসূতিমৃত্যুর কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করা হয়, এবং কী করে তা প্রতিরোধ করা যেত, তার সন্ধান চলে। হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থায় এমন ফাঁকগুলি যে থেকে গিয়েছে, তা কি আগে চোখে পড়েনি? না কি এমন সুপারিশ আগেও লেখা হয়েছে, কিন্তু কার্যকর হয়নি? ইতিপূর্বে রোগীর নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে অনেক সরকারি আধিকারিক চিকিৎসাব্যবস্থাকে তৎপর ও দায়বদ্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন, কিন্তু প্রতিহত হয়েছেন। অভিযোগ, সম্প্রতি জেলা থেকে অকারণে কলকাতায় রোগী ‘রেফার’ করার প্রথা রুখতে গিয়ে বদলি হয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। অথচ, যাত্রাপথ দীর্ঘ হলে ঝুঁকিগ্রস্ত প্রসূতি ও শিশুর প্রাণহানিও হতে পারে। যে ব্যবস্থাগুলি নাগালের মধ্যে, সেগুলিও যদি করা যেত তা হলে হয়তো জাতীয় নমুনা সমীক্ষায় (এসআরএস ২০১৭-২০১৯) পশ্চিমবঙ্গে প্রসূতিমৃত্যুর হার (এক লক্ষে ১০৯) সর্বভারতীয় হারের (এক লক্ষে ১০৩) চাইতে বেশি হত না।
তাই প্রসূতিমৃত্যু প্রতিরোধ করতে হলে কেবল সরকারি হাসপাতালে প্রসব-উত্তর চিকিৎসাকে জোরদার করাই যথেষ্ট নয়। অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকি যাঁদের আছে, সেই গর্ভবতীদের আগাম চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থায় তৎপরতা চাই। আক্ষেপ, গর্ভবতী মায়েদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের উপর অন্যান্য কাজের চাপ এত বেশি যে, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য অবহেলিত হচ্ছে। সর্বোপরি, পশ্চিমবঙ্গে নাবালিকা বিবাহ ও অকালমাতৃত্ব আশানুরূপ হারে কমেনি, বলছে জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা। বরং অতিমারিতে কিছু বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলছে। নাবালিকা প্রসূতির প্রাণের ঝুঁকি সর্বাধিক। অতএব কেবল প্রসব-কেন্দ্রিক পরিষেবা যথেষ্ট নয়। চাই সার্বিক, নিবিড় উন্নয়ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy