তাহলে সত্যিই একটি নতুন ‘অসুখ’ এসে গিয়েছে পৃথিবীতে, যার নাম ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার আন্তর্জাতিক রোগতালিকায় একে ব্যবহারগত অসুখ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অসুখের উপসর্গগুলিও উল্লেখ করা হয়েছে। মাথাধরা, বমি ভাব, অনিদ্রা, মেজাজ খারাপ, ধৈর্য ও মনোযোগের অভাব, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ইত্যাদি। নেশারই সমতুল্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে এই অসুস্থতাকে। এর থেকে ক্রমে মেরুদণ্ডের অসুখও হওয়া স্বাভাবিক, আশঙ্কা। মানসিক যে অসুখগুলি নির্ণীত হয়েছে, তার থেকে বোঝা যায় যে, এই ‘অসুখ’ কেবল শরীর-মনেই আটকে থাকার নয়, জীবনেও ছড়িয়ে পড়ার বিপুল সম্ভাবনা। পড়াশোনার ক্ষেত্রে ‘অসুস্থ’ শিশু বা কিশোরের অনেক সঙ্কট হওয়ার কথা। স্বাভাবিক ভাবেই তার থেকে কেরিয়ার ও জীবনপথও পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা। অর্থাৎ, এখন আমরা যাকে কেবল সাময়িক বিনোদন হিসেবে দেখছি, হয়তো তা-ই হয়ে দাঁড়াতে পারে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ-নির্ধারক সঙ্কট। দুর্ভাগ্য যে, যে হেতু এখনও হয়তো মাত্র এক গেমিং-প্রজন্মই বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছে, সকলের কাছে এই ভয়ানক উদ্বেগজনক বিষয়টি তেমন ভাবে বোধগম্য হচ্ছে না। শিশুদের হাতে এখনও অভিভাবকরা অকাতরে তুলে দিচ্ছেন গেমিং-এর সম্ভার, নিশ্চিন্ত থাকছেন তাদের সময় কাটানোর বিনোদন নিয়ে। বিশ্বময় ডাক্তার এবং প্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে যথেষ্ট চিন্তিত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট প্রমাণ করছে, তাঁদের উদ্বেগ মোটেই অকারণ নয়। এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে দশ বছরের পরীক্ষণ-সাপেক্ষে— কথাটি অতীব উল্লেখযোগ্য।
বুঝতে অসুবিধা নেই, কোভিড-সঙ্কট এখানেও এক বিরাট কুপ্রভাব রেখে গিয়েছে। কোভিডের সময় অনলাইন শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইন বিনোদন ছাড়াও শিশুজীবন বা কিশোরজীবনের গত্যন্তর থাকেনি। অভিভাবকদের সেই বিপদ আটকানোর পথটিও দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। বিগত ২০১৯ সালে হু-নির্দেশিত সেই ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’ তাই এখন রীতিমতো মহারোগের আকার ধারণ করেছে। বাস্তবিক, অবস্থাগতিকে এই ‘ডিসঅর্ডার’টির বিরাট বিস্তৃতির কারণেই এখন আবার নতুন করে হু-র সতর্কবাণী শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি যে আর হেলাফেলার নয়, সমস্ত দুনিয়াকেই তা স্বীকার করতে হবে।
অবশ্যই এক এক দেশে এই অসুখের এক এক রকম বিস্তার। ব্রিটেনে নাকি ভিডিয়ো-গেমাররা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি সময় ব্যয় করে। অতিমারির সময়ে বহু পরিবার থেকে এই গেমিং-নেশার কথা ডাক্তারদের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর গেমিং ডিসঅর্ডার শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, এখন তার চিকিৎসার চাহিদা তুঙ্গে। ভারতেও এই অসুখের বিস্তার খুব কম নয়। প্রসঙ্গত এই খেলা যে হেতু অফলাইনেও সম্ভব, ভারতের মতো দেশে যেখানে নেট সংযোগের সমস্যা বিস্তর, সেখানেও গেমিং অসুখের প্রাদুর্ভাবের কমতি নেই। তামিলনাড়ুতে গেমিং-এর কারণে ছোটদের ডিমেনশিয়ার খবর ইতিমধ্যেই প্রচারমাধ্যমে উঠে এসেছে। এক দিকে যেমন গেমিং দক্ষতাকে কেন্দ্র করে ভারতকে প্রযুক্তি-দুনিয়ায় এগোতে হবে, তেমনই সুস্থ থাকার পথটি যাতে বিনষ্ট না হয়, তাও দেখতে হবে। সাঁড়াশি সঙ্কট। কিন্তু সাঁড়াশির দু’টি মুখই সমান জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy