Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Terrorism

ব্যর্থতার ফল

হামলা হইয়া যাইবার পরের ধরপাকড়ে নহে, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নটি নির্ভর করে নিরন্তর ইন্টেলিজেন্স-এর উপর।

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২১ ০৫:৪৭
Share: Save:

ওয়েব সিরিজ়ের গল্প হিসাবে চমৎকার, সন্দেহ নাই। বেশ কয়েক জন বিদেশি জেহাদি যুবক খাস কলিকাতায় ঘাঁটি গাড়িয়া আছে কয়েক বৎসর। তাহারা শহরের রাস্তায় ঘুরিয়া বেড়ায়, হরেক অপরাধমূলক পরিকল্পনা করে। এমনকি, ঘরে ঘরে বোমার কারখানা প্রতিষ্ঠার খোয়াবও দেখে, তাহার বাস্তবায়নের জোগাড়যন্ত্রও করে। দেশের বেশ কিছু নাগরিক তাহাদের সাহায্য করিয়া থাকে। তবে, ওয়েব সিরিজ় হইতে বাস্তব যেখানে ভিন্ন পথ ধরে, তাহা গোয়েন্দাদের নজরদারি। জঙ্গিরা শ্বাস ফেলিলেও যেখানে সেলুলয়েডের গোয়েন্দারা খবর পাইয়া যান, সেখানে বাস্তবের অপরাধীরা বেপরোয়া ঘুরিয়া বেড়ায়, গোয়েন্দাদের টনকও নড়ে না। কলিকাতায় সম্প্রতি জামাত-উল মুজাহিদিন বাংলাদেশের জঙ্গিদের যে কার্যকলাপের কথা প্রকাশ্যে আসিয়াছে— যাহার সহিত আল কায়দা বা হরকত-উল জেহাদ আল-ইসলামি’র ন্যায় জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগের কথা শোনা যাইতেছে— তাহা ভয়ঙ্কর। শুধু এই কারণে নহে যে, এই জঙ্গিরা কলিকাতার বুকে সন্ত্রাসের কারখানা খুলিয়া বসিয়াছিল; এই কারণেও যে, এক দিন-দুই দিন নহে, বেশ কয়েক বৎসর ধরিয়া তাহাদের এই কার্যকলাপ কার্যত পুলিশ-গোয়েন্দাদের নাকের ডগায় চলিয়াছে, কেহ টেরটুকুও পায় নাই। এই নিরুপদ্রব নিশ্চিন্তিটুকু জঙ্গিরা নির্ঘাত উপভোগ করিয়া থাকে।

হামলা হইয়া যাইবার পরের ধরপাকড়ে নহে, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নটি নির্ভর করে নিরন্তর ইন্টেলিজেন্স-এর উপর। অর্থাৎ, কোথায় কী চলিতেছে, সে বিষয়ে তথ্যসংগ্রহ; দুই আর দুইয়ে চার হইতেছে না কি বাইশ, তাহা বিচার করা; এবং, সেই তথ্যের উপর ভর করিয়া অপরাধ সংঘটিত হইবার পূর্বেই তাহাকে থামাইতে পারা— অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখিবার সহজ পাঠ ইহাই। ফলাফল বলিতেছে যে, অন্তত পশ্চিমবঙ্গে সেই প্রক্রিয়ায় বিপুল খামতি থাকিয়া গিয়াছে। স্মরণে রাখিতে হইবে যে, বর্তমান ঘটনাক্রমই প্রথম নহে— সাড়ে ছয় বৎসর পূর্বে এই রাজ্যেই খাগড়াগড় কাণ্ড হইয়া গিয়াছে। এবং, তাহার আগে ও পরে বহু বার বহু সন্ত্রাসী যোগসূত্র ধরা পড়িয়াছে। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গের দিকে যে নজর বাড়ানো প্রয়োজন, এই রাজ্যে কোথাও কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটিতেছে কি না, সে দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন— এই কথা অনস্বীকার্য। যে ভঙ্গিতে হরিদেবপুরের জঙ্গিরা কলিকাতায় ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল, কার্যকলাপ চালাইতেছিল, এবং দেশেরই কিছু মানুষের সহযোগিতা পাইতেছিল, তাহাতে রাজ্যবাসীর উদ্বিগ্ন হইবার যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে।

গোয়েন্দাদের এই ব্যর্থতার প্রত্যক্ষ ফল অভ্যন্তরীণ শান্তি বিঘ্নিত হইবার বর্ধিত আশঙ্কা; কিন্তু পরোক্ষ ফলও মারাত্মক। প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গকে বহির্দেশীয় জঙ্গিদের ‘অভয়ারণ্য’ প্রতিপন্ন করিয়া যে রাজনৈতিক প্রচারটি চলে, তাহা আরও গতিশীল হইবার আশঙ্কা। ঘটনা হইল, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের পক্ষে এই জঙ্গি কার্যকলাপের আঁচ পাওয়াই অসম্ভব, তাহাকে ঠেকাইবার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু, রাজনৈতিক বয়ানে সাধারণ মানুষই দোষী সাব্যস্ত হইবেন। দ্বিতীয়ত, এই জঙ্গিরা যে হেতু একটি বিশেষ ধর্মীয় পরিচয় বহন করে, ফলে গোয়েন্দাদের এই ব্যর্থতা অনেককেই নিজেদের অন্ধ বিদ্বেষের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার সুযোগ করিয়া দিবে। ‘কে জানে বাবা জঙ্গি কি না’— এই অজুহাতে বৈষম্যমূলক আচরণ বাড়িবার আশঙ্কা থাকিতেছেই। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক নেতারা যে হেতু কূটনৈতিক স্বার্থের কথা ভাবিয়াও দেখেন না— এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ন্যায় ওজনদার নেতারাও নহেন— এই জঙ্গি-যোগকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করিবার অত্যুৎসাহে কোনও নেতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহিত সম্পর্ক আরও বিষাইয়া তুলিতে পারেন, সেই আশঙ্কাও থাকিতেছে। ব্যর্থতার ফল ভয়ঙ্কর।

অন্য বিষয়গুলি:

Terrorism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy