ফাইল চিত্র।
নথি জালিয়াতি, প্রতারণা, অপরাধের ষড়যন্ত্র— এ সব অপরাধের প্রমাণ মিলেছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন সচিবও। বিচার বিভাগীয় তদন্তে প্রাপ্ত এই তথ্যগুলি হয়তো অপ্রত্যাশিত নয়, তবু তা রাজ্যবাসীকে আহত, বিপন্ন করে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শিক্ষামন্ত্রিত্বের সময়ে সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে কম শোরগোল হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের রিপোর্ট দেখিয়ে দিল, আইনকে নস্যাৎ করা এ রাজ্যে যেন বাঁ হাতের খেলা। স্কুল সার্ভিস কমিশনের কর্মীদের দৌলতে দু’শোরও বেশি শিক্ষক পরীক্ষা না নিয়েই সরকারি স্কুলের নিয়োগপত্র পেয়েছেন, ভুয়ো সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে অনায়াসে নিয়োগ হয়েছে, বহু পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র নষ্ট করা হয়েছে। কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান কত সহজে, কত দিন ধরে সরকারি বিধিলঙ্ঘন করে যেতে পারে, সারা দেশের কাছে তার দৃষ্টান্ত স্থাপনে ‘এগিয়ে বাংলা’। বাগ কমিটি এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান-সহ বেশ কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, ফৌজদারি ধারায় ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে কলকাতা হাই কোর্টের কাছে।
হাই কোর্ট বাগ কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করবে, অথবা আরও তদন্তের নির্দেশ দেবে, তা ভবিষ্যৎ বলবে। ইতিপূর্বে হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ নিয়োগ দুর্নীতির রহস্য উদ্ঘাটনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল, যা আপাতত স্থগিত রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তদন্তের দায়িত্ব যার উপরেই ন্যস্ত হোক না কেন, এই প্রশাসনিক বিপর্যয়ের পিছনে রাজনৈতিক তর্জনী কাজ করছে কি না, তা জানা চাই। সে উত্তর হয়তো অনেক আগেই মিলত, যদি না রাজ্য সরকার বার বার বিচারের স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করত। স্কুল সার্ভিস কমিশনের কর্মীদের ঘৃণ্য দুর্নীতির চাইতেও জঘন্য যদি কিছু হয়, তবে তা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার সরকারি প্রচেষ্টা। শিক্ষক, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি— সর্বস্তরের কর্মীদের নিয়োগে বিধিভঙ্গের অভিযোগগুলি নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট, এ দিকে স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে গিয়েছে রাজ্য সরকার। এই অপকৌশলে ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপ করেছেন— তাঁর নির্দেশগুলি এবং ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশগুলি বিবেচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছেন। এই ঘটনা বঙ্গ-প্রশাসনের কলঙ্কটিকা। অস্বচ্ছতাকে প্রশ্রয় দিতে, দোষীকে আড়াল করতে সরকারের এত তৎপরতা, এত অপব্যয়, ছাত্রছাত্রীদের প্রতি এমন উদাসীনতা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা জাগাতে বাধ্য। সম্প্রতি তৃণমূল সরকার ঘোষণা করেছে, দীর্ঘ দিন নিয়োগ স্থগিত থাকায় শূন্য শিক্ষক পদগুলিতে এ বার নিয়োগ হবে। কিন্তু ওই পদগুলি শূন্য থাকার দায় কার? বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাম্প্রতিক কালে নিযুক্ত হয়েছেন বলে তার দায় এড়াতে পারেন না, কারণ তাঁরই দলের সরকার ওই শূন্যতার রূপকার।
শিক্ষক নিয়োগে এই দুর্নীতিতে সর্বাধিক আহত সম্ভবত ‘আইনের শাসন’-এ বাস করার প্রত্যাশা। নির্বাচিত সরকার রাজধর্ম পালন করবে, এই ধারণা যেন এক অলীক বিশ্বাসে পরিণত হচ্ছে। ভরসা আইনের দীর্ঘ বাহুর শক্তি। ভারতে অতি প্রবলও বার বার ধূলিলুণ্ঠিত হয়েছে আদালতের একটি রায়ে। হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওম প্রকাশ চৌটালা স্কুলশিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অপরাধে দশ বছর কারাবাসে দণ্ডিত হয়েছিলেন সিবিআই আদালতে। দণ্ডিত হন উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও। এ রাজ্যেই বা অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে না কেন? সুবিচার আর বিলম্বিত না হয়, এই আজ প্রত্যাশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy