Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Dengue

সিঁদুরে মেঘ

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক করেছেন। কিন্তু ডেঙ্গি দমনের প্রচারে যত ঢাকঢোল বাজে, প্রকৃত কাজ হয় সামান্যই।

আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিন গুণ।

আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিন গুণ।

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ০৫:৪৬
Share: Save:

ডেঙ্গি বাড়ছে শহরে। কলকাতা পুরসভার পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ২০২১ সালের জানুয়ারির গোড়া থেকে জুলাইয়ের শেষ অবধি শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা যত ছিল, এই বছর ওই একই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিন গুণ। সম্প্রতি এই রোগে এক কিশোরের মৃত্যুও ঘটেছে। মনে রাখা প্রয়োজন, ডেঙ্গি মরসুম শেষ হতে এখনও ঢের বাকি। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের অবধারিত ফল হিসাবে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া এখন সম্বৎসরের সঙ্গী, তবুও ডেঙ্গির চরম পর্যায় হিসাবে জুলাই-অগস্ট থেকে অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়কালকে ধরা হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী আশঙ্কা, এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গির যে প্রকোপ দেখা গিয়েছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। অ-কাজ ও ঢিলেঢালা মনোভাব অব্যাহত থাকলে আগামী তিন মাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

অবশ্য, ডেঙ্গি নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশ-সতর্কবার্তার অভাব নেই। অভাব নেই থানাগুলিকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলায়, পুরসভার ঘন ঘন বৈঠকে, কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রেও। অভাব শুধুমাত্র, সেই কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নির্মাণ, মাঠে নেমে কাজের গতি এবং সদিচ্ছার ক্ষেত্রে। কোনও ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে সেখানে পুর-তৎপরতা বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়, অন্যত্র সাধারণত ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েই দায়িত্ব পালন হয়। বিধাননগরে ডেঙ্গি দমনে পুরসভার পক্ষ থেকে জঙ্গল সাফ করা, ফাঁকা জমির মালিককে নোটিস ধরানো, খাটালের মালিকদের সতর্ক করা-সহ একাধিক পদক্ষেপের কথা জানানো সত্ত্বেও, প্রতিশ্রুতির বছর ঘোরার আগেই আবর্জনার স্তূপ, ঝোপজঙ্গলের পরিচিত ছবি ফের ফিরে এসেছে। একই রকম উদাসীনতার চিত্র শহরের থানাগুলিতেও। থানাগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রশাসনিক নির্দেশ সত্ত্বেও থানার সামনে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত গাড়ি, বাতিল টায়ারে জল জমে মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হয়, ফুলের টবে জল দাঁড়িয়ে থাকে, আবর্জনার স্তূপও জমে। নির্দেশ পালন করানোর দায়িত্ব যাঁদের হাতে, তাঁরাই যদি এত অ-সচেতন হন, তবে সাধারণের মধ্যে সচেতনতা জন্মাবে কী করে?

অবশ্য ডেঙ্গি নিয়ে এ-হেন গয়ংগচ্ছ মনোভাব নতুন নয়। পতঙ্গবাহিত রোগ ঠেকাতে বছরে তিন-চারটি মাসের উদ্যোগ যে যথেষ্ট নয়, এ কথা বহু বার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক করেছেন। কিন্তু ডেঙ্গি দমনের প্রচারে যত ঢাকঢোল বাজে, প্রকৃত কাজ হয় সামান্যই। মশার লার্ভা খুঁজে ধ্বংসের কাজে ড্রোনের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সত্ত্বেও কেন সংক্রমণে রাশ টানা যাচ্ছে না, তা বুঝতে পুর-প্রশাসনের আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন। এবং প্রয়োজন উপযুক্ত পরীক্ষাগারের সংখ্যাবৃদ্ধি ও পতঙ্গবিদ নিয়োগের। একই সঙ্গে, সরকারকে একটি প্রশিক্ষিত বাহিনী গড়ে তুলতে হবে, যাঁরা সারা বছর প্রতি বাড়ি ঘুরে জমা জল ও মশার আঁতুড়ঘরগুলি ধ্বংসের কাজটি করবেন। জনস্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদেরও বিভিন্ন পুরসভা, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে কাজ করতে হবে। কথাগুলি নতুন নয়, বহু আলোচিত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই অবিলম্বে সেই পুরনো পাঠ ঝালিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy