—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোভিডে ভারতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা কত— তা নিয়ে বিতর্ক ইতিপূর্বেও দেখা গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই দাবি করেছিল, কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত পরিসংখ্যানে বিস্তর গরমিল। ভারতে মৃতের সংখ্যা এর অন্তত দশ গুণ। সম্প্রতি সেই বিতর্ককেই আরও খানিক জোরদার করল আন্তর্জাতিক জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্স-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষা। সেখানে গবেষকরা দাবি করেছেন, অতিমারির প্রথম বছরে সরকারি হিসাবে ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা যত দেখানো হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যাটি তার চেয়ে অন্তত আট গুণ বেশি। শুধু তা-ই নয়, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অতিমারি ভারতের জনস্বাস্থ্যের অসাম্যকে আরও চওড়া করেছিল। যেমন— এই সময়পর্বে ভারতে মেয়েদের মৃত্যুর হার পুরুষদের তুলনায় অধিক ছিল। ২০১৯-২০২০ সালের মধ্যে পুরুষদের গড় আয়ুষ্কাল হ্রাস পেয়েছিল ২.১ বছর, কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে একই সময়পর্বে তা হ্রাস পায় ৩.১ বছর। উল্লেখ্য যে, পৃথিবীতে অতিমারিতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুরুষরা মেয়েদের তুলনায় এগিয়ে, কিন্তু ভারত অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে তার উল্টো পথে হেঁটেছে।
সমীক্ষার অন্যতম গবেষক জানিয়েছেন, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি যাতে ওই নির্দিষ্ট সময়কালে পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের গড় আয়ুষ্কাল অধিক হ্রাস পাওয়ার সঠিক কারণ জানা যায়। তাঁদের অনুমান, মেয়েদের স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা না পাওয়া, আর্থিক ক্ষেত্রে অসাম্য প্রভৃতি এর অন্যতম কারণ। অনুমানটি যুক্তিসঙ্গত। ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়েও এক লক্ষণীয় লিঙ্গবৈষম্য বর্তমান। বিশেষত দরিদ্র পরিবারে অন্য বিষয়গুলির মতো চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও পুরুষরাই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এই চিত্রকে অতিমারি আরও প্রকট করেছিল মাত্র। তথ্য বলছে, ভারতে অতিমারির প্রথম তিন মাসে তিন জন পুরুষ পিছু এক জন মহিলার সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। অর্থাৎ, মেয়েদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা যথেষ্ট কম হয়েছিল। এই প্রবণতা বজায় ছিল পরের বছর ডেল্টা সংক্রমণের সময়েও। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থার সুবিধা, শুশ্রূষা থেকেও বঞ্চিত থেকে যায় তারা। মৃত্যুহার বেশি হওয়ারও সম্ভাব্য কারণ এটি।
সর্বোপরি, প্রথম পর্যায়ে বাড়িতে বসে সরকারি উদ্যোগে কোভিড পরীক্ষা, নিভৃতবাসে থাকার সুযোগ ক’জন মেয়ে পেয়েছে? একই অসাম্য দেখা গিয়েছিল কোভিড টিকার ক্ষেত্রেও। সরকারের টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরেও দু’-একটি ব্যতিক্রম বাদে অধিকাংশ রাজ্যেই মহিলারা বহু পিছিয়ে ছিল। বাড়ি থেকে টিকাকরণ কেন্দ্রের দূরত্ব বেশি থাকায় অনেকেই টিকা নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। অন্য যুক্তিও ছিল অবশ্য, মহিলারা যে-হেতু বাড়িতেই থাকেন, তাই তাঁদের টিকার প্রয়োজনীয়তা কম। সুতরাং, সমীক্ষায় বর্ণিত অসাম্য অপ্রত্যাশিত নয়। বরং প্রয়োজন, লিঙ্গভেদে এবং ঐতিহাসিক ভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে অসাম্যের চিত্রটির সত্যতা অনুসন্ধানে তথ্যপ্রমাণ পর্যবেক্ষণ। নিঃসন্দেহে সেই কাজ জটিল, তাতে সরকারি ব্যর্থতা ও মিথ্যাচারও বেআব্রু হয়ে পড়ে। আপাতত সমগ্র সমীক্ষাটিকেই ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার পথটিই বেছেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy