আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানালেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। গত কাল সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানি ছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই অনুরোধ। সহজবোধ্য যে, তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসককুল বিচলিত হবেন। বিচার এবং নিরাপত্তার দাবিতে তাঁদের বিক্ষোভ প্রদর্শনও তাই। সত্য যে, সমস্ত চিকিৎসক একই সঙ্গে কর্মবিরতিতে অংশ নেননি। অংশগ্রহণকারীদের অভাব পূরণ করতে অন্য চিকিৎসকেরা এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু, সরকারি হাসপাতালে প্রতি দিন রোগীর চাপ যতখানি থাকে, স্বাভাবিক অবস্থাতে দিন-রাত পরিষেবা দিয়েও চিকিৎসকেরা কুলিয়ে উঠতে পারেন না, সেখানে তাঁদের একটা বড় অংশের কর্মবিরতির প্রভাব সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসা-পরিষেবার উপর পড়তে বাধ্য। বাস্তবেও রোগীদের ‘ছুটি করিয়ে’ অন্যত্র নিয়ে যাওয়া, চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ, সবই ঘটেছে।
বিনামূল্যে সুচিকিৎসার জন্য নাগরিকদের এক বৃহৎ অংশ এই সরকারি হাসপাতালগুলির উপরেই নির্ভরশীল। তাঁদের অধিকাংশেরই এমন আর্থিক সঙ্গতি নেই যে, অন্যত্র চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। সুতরাং, যে সমস্ত রোগীকে সুষ্ঠু চিকিৎসা না-পাওয়ার আশঙ্কায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাঁদের পরবর্তী চিকিৎসা কোথায় হবে, আদৌ তা হবে কি না, প্রশ্ন থেকেই যায়। বেসরকারি ক্ষেত্রের অবস্থা তুলনায় ভাল। যদিও সর্বভারতীয় স্তরে চিকিৎসকদের যে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছিল, তাতে কম সময়ের জন্য হলেও বেসরকারি ক্ষেত্র প্রভাবিত হয়েছিল। কিন্তু সরকারি ক্ষেত্রের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। কারণ, এই হাসপাতালগুলিতে যাঁরা পরিষেবা পান, তাঁদের অধিকাংশই দরিদ্র এবং প্রান্তিক স্তরের মানুষ। চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে আসা, এবং সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়ায় তাঁদের দৈনন্দিন রোজগারে কোপ পড়ে। সর্বোপরি, রোগীর স্বার্থ রক্ষাই যেখানে চিকিৎসকদের অগ্রাধিকার, সেখানে আর জি কর-সহ সমস্ত সরকারি হাসপাতালে দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরে আসা একান্ত কাম্য। চিকিৎসকরা অবশ্যই তাঁদের দাবিগুলি তুলে ধরুন, কিন্তু তার বিনিময়ে কোনও রোগী যেন চিকিৎসা পাওয়ার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সেটাও নিশ্চিত করা তাঁদেরই দায়িত্ব।
এই ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনেরও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সে ভূমিকা শুধুমাত্র করজোড়ে চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আবেদনেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। চিকিৎসকদের মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে, এত দিন সেগুলিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কেন? যে চিকিৎসকদের দিনে-রাতে একটানা ডিউটি করতে হয়, তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামকক্ষ, শৌচালয় নেই— এমনটা কি কোনও সভ্য রাষ্ট্রের চিত্র? হাসপাতাল চত্বরে বহিরাগতদের অবাধ অনুপ্রবেশ, নিরাপত্তার অভাব— কথাগুলি তো নতুন নয়। রোগী-মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যথেচ্ছ হাসপাতাল ভাঙচুর, নার্স-ডাক্তারের উপর হামলা, কর্তব্যরত চিকিৎসককে শারীরিক নিগ্রহ— সবই ইতিপূর্বে ঘটেছে। এ সব আটকাতে নির্দিষ্ট আইনও আছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে কি? সরকারি প্রতিশ্রুতি আর এ রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাস্তবচিত্র— দুইয়ের মধ্যে বিশাল ফাঁক বর্তমান। তরুণী চিকিৎসকের মর্মান্তিক মৃত্যু আরও এক বার সেই ফাঁককে বেআব্রু করে দিয়ে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy