Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
TMC

সংশোধন?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও এ-হেন বাণী শোনা গেল তাঁর তৃতীয় দফার শাসনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে।

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২২ ০৪:৩৯
Share: Save:

পুরাতন বরষের সাথে পুরাতন অপরাধ যত’ ইত্যাদির জন্য ক্ষমা চাইবার রীতি রবীন্দ্রনাথই দেখিয়ে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও এ-হেন বাণী শোনা গেল তাঁর তৃতীয় দফার শাসনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে। শোনা গেল, ‘শুধরে নেব’র মতো জরুরি শব্দবন্ধ। যে কোনও শব্দবন্ধ তখনই অর্থবহ হয়ে ওঠে, যখন তা সত্য-অর্থ’সহ উচ্চারিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক গত এক বছরে এত বহুবিধ কারণে বিক্ষুব্ধ, বিষণ্ণ ও অবসন্ন বোধ করেছেন যে, এখন তাঁরা আর ‘ধ্বনি’র জন্য শব্দগুলি শুনতে চান না— শব্দের পিছনের ‘অর্থ’টিকে চোখের সামনে সংঘটিত হতে দেখতে চান। তৃতীয় বারের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেন ‘শুধরে নেব’, নাগরিক বলতে পারেন যে, ‘শোধরানো’র বিষয় এত বেশি এবং এত জরুরি যে তাঁদের দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়। এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি আগে থেকেই মন্দ ছিল, কিন্তু আপাতত তা ভদ্রসমাজের সহ্যের সীমায় উপনীত হয়েছে। দেশের মধ্যে অন্যতম প্রধান বিশৃঙ্খল রাজ্য বলে পশ্চিমবঙ্গ ‘খ্যাতি’ কুড়িয়েছে। একে নিছক ‘শত্রুর প্রচার’ বলে মুখ্যমন্ত্রী উড়িয়ে দিতে পারেন না। বিরোধীদের বক্তব্যকে ‘চক্রান্ত’ এবং সমালোচকদের সমালোচনাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে বাতিল করে দিতে পারেন না। প্রচারমাধ্যমে সত্যানুগ রিপোর্ট তাঁর নিজের অপছন্দসই হলে তাকে ‘কুৎসা’ বলে অবজ্ঞা ও ব্যঙ্গ করতে পারেন না। নাগরিকের এই সব দাবি মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছচ্ছে কি?

প্রথম বর্ষপূর্তিতে এই কথাও মনে করিয়ে দিতে হয় যে, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার সহ্যাতীত চেহারাটি পাল্টাতে হলে কয়েকটি কাজ নেত্রীকে সত্বর করতে হবে। প্রথমত, অস্ত্রের ব্যাপক সহজপ্রাপ্যতার উৎস সন্ধান এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এবং সেই কাজে কোনও রাজনৈতিক সমঝোতার আঁচ পেলে তাকে সমূলে উৎখাত করা। দ্বিতীয়ত, পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা ফিরিয়ে আনা। আবারও সেই এক কথা— রাজনৈতিক ভাবে পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা দ্রুত শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে প্রতিষ্ঠা করা। সিপিএম আমলেও অনাচার হত বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নিশ্চয় মনেও রেখেছেন যে, সেই অনাচার চালিয়ে যাওয়ার দায়ে সিপিএমকে কত কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে।

তৃতীয় কথা। আজকের পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, চূড়ান্ত অপরাধ-প্রবণতা— আক্রমণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, হত্যার এই বিপুল সংখ্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির। উন্নয়নের দিশাহীন, শিল্পোদ্যোগরহিত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোভিড-নিষ্পেষিত সমাজে মানুষ ক্রমশই অন্ধকারে আরও বেশি করে নিক্ষিপ্ত হচ্ছেন। ‘সিন্ডিকেট’-এর তোলা-যজ্ঞ এখন রাজ্যের যুবগোষ্ঠীর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রতিশ্রুতিময় পথ। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য— প্রশাসন এই সমস্ত ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা না আনলে বিশৃঙ্খলা থেকে প্রতিকারের পথও মিলতে পারে না। সম্প্রতি শিল্পবাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বহু প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছেন। তিনি জানেন নিশ্চয়ই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে উন্নয়ন উদ্যোগের সম্পর্কটি কতখানি দ্বিমুখী— এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা উন্নয়ন উদ্যোগকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে। শৃঙ্খলা তো কোনও বিশেষ ক্ষেত্রের বিষয় নয়, সার্বিক পরিবেশের প্রশ্ন। কথাটা যে কত বড় সত্যি, পশ্চিমবঙ্গ এখন হাড়ে হাড়ে জানে। শাসনকালের একাদশতম বৎসরের শেষে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে তাই একটিই কথা নাগরিক জানাতে চান: তাঁর দল গত বার বড় ব্যবধানে জিতে এসেছে, তাই এই দফার প্রথম বর্ষপূর্তিতে কেবল নিজের বক্তব্য পেশ করাই একমাত্র কাজ নয়, কান পেতে রাজ্যবাসীর কথা শোনাই তাঁর প্রথম কর্তব্য।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Mamata Banerjee Rabindranath Tagore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy