Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Untimely Rain

বৃষ্টিবদল

জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিসংখ্যান ঘিরে আশঙ্কা জাগা স্বাভাবিক। মরু অঞ্চলের বন্যা কি সেই পরিবর্তনেরই ইঙ্গিতবাহী?

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:১০
Share: Save:

ধরন বদলাচ্ছে বৃষ্টিপাতের। ভারতের মতো ভূপ্রকৃতিগত ভাবে বৈচিত্রপূর্ণ দেশের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন অনেকাংশে তীব্র এবং স্পষ্ট। সেখানে মরুদেশ ভাসছে অতিবৃষ্টিতে, আর সুজলা সুফলা বলে চিহ্নিত অঞ্চল সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত পাচ্ছে না। পরিসংখ্যান বলছে, এই বছরে বর্ষাকালে পশ্চিম রাজস্থানে স্বাভাবিকের থেকে সত্তর শতাংশের অধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। বালিয়াড়ির দেশ পশ্চিম রাজস্থানের জন্য এমন পরিসংখ্যান বিস্ময়কর বইকি। অতিবৃষ্টির কারণে রাজস্থানে বন্যা পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে, গাঙ্গেয় বঙ্গেও এই বছর বর্ষার প্রথম দু’টি মাসে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল লক্ষণীয়। তীব্র গরমে দগ্ধ হয়েছে গাঙ্গেয় বঙ্গ। বর্ষার ঘাটতি মিটেছে শেষ দু’মাসে। বর্ষা বিদায়ের কালে আপাতত বৃষ্টির হিসাব-খাতায় খানিক উদ্বৃত্তই দেখা গিয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে যে তা ছন্দ মেনে হয়নি, রেখচিত্র দেখলে স্পষ্ট হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিসংখ্যান ঘিরে আশঙ্কা জাগা স্বাভাবিক। মরু অঞ্চলের বন্যা কি সেই পরিবর্তনেরই ইঙ্গিতবাহী? ইতিপূর্বে বিজ্ঞানীরা বারংবার জলবায়ু পরিবর্তনের যে বৈশিষ্ট্যগুলির উপর জোর দিয়েছিলেন, তার অন্যতম বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হওয়া। সেই ছন্দপতন দু’-এক বছরের জন্য নয়, দীর্ঘ দিনের। মরু অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের এ-হেন বৃদ্ধিও এই বছরেই শুধুমাত্র দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরাই জানিয়েছেন, এই বৃদ্ধির সূচনা সেই ২০০০ সাল থেকেই। তার কারণ হিসাবে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা তিব্বতের উচ্চচাপ বা বিপরীত ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেছেন। সেই উচ্চচাপে কোনও বদল ঘটলে তার প্রভাব পড়ে ভারত ভূখণ্ডের বর্ষার উপর। অন্য দিকে, গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার চরিত্র পরিবর্তিত হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে দীর্ঘ দিন ধরেই। জুন থেকে সেপ্টেম্বর অবধি যে বর্ষার সক্রিয় থাকার কথা, গত বেশ কিছু বছরে সেই সময়সীমা বিঘ্নিত হয়েছে বার বার। কখনও বর্ষা দেরিতে ঢুকছে, শেষের দিকে অতিবৃষ্টিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল, কখনও আবার সময়ে প্রবেশ করলেও তার গতি অতি ধীর। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিকাজ।

মরসুমি বৃষ্টিপাত ঘড়ি ধরে, হিসাব মেনে চলবে না, অস্বীকারের উপায় নেই। চার মাস ধরে বর্ষা একই রকম সক্রিয় থাকবে, এমনটাও হয় না। কিন্তু সে সব সম্ভাবনাকে ধরেও যে চিত্রটি মিলছে, তাতে নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। প্রথম দু’মাসের ঘাটতি শেষ দু’মাসে জোরালো বৃষ্টি পুষিয়ে দিতে পারে ঠিকই, হিসাবের খাতাটিও বলতে পারে যে, বর্ষা এ বার মোটের উপর স্বাভাবিক, কিন্তু তাতে প্রকৃত চিত্র ঢাকা পড়ে না। যে চিত্র বলে গাঙ্গেয় বঙ্গে সত্যিই বর্ষা তার চরিত্র বদল করছে কি না, সে বিষয়ে আরও নিবিড় চর্চা হওয়া প্রয়োজন। কারণ, বর্ষার বৃষ্টির উপর গাঙ্গেয় বঙ্গের কৃষিকাজ অনেকাংশে নির্ভরশীল। শুধুমাত্র বৃষ্টিপাতই নয়, ভারতের আবহাওয়ায় নানাবিধ পরিবর্তনের লক্ষণ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। অল্প সময়ে তীব্র বৃষ্টি, শীতের মরসুমে ঠান্ডা না-পড়ার মতো সমস্যাগুলিকে আর ব্যতিক্রম বলে ভাবার উপায় নেই। বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে ভারতের পরিবর্তনগুলিকে এক সুতোয় বাঁধা আবশ্যক। এবং নাগরিকদেরও নিয়মিত সেই পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন। আগামী দিনে তাঁদের যাপনচিত্রটি কেমন হতে চলেছে, তার জন্য প্রস্তুত থাকার অধিকার নাগরিকের নিশ্চয়ই আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

rainfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy