—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সরকারি নীতির ফলে হিতে বিপরীত ঘটেছে ভারতের কৃষিক্ষেত্রে, এমন আশঙ্কাকে আরও গাঢ় করল একটি গবেষণাপত্র। চাষিদের সুরক্ষায় বাজার দরের চাইতে বেশি টাকায় চাল, গম কেনে সরকার। বেশি দাম পাওয়ার আশায় চাষিও আরও বেশি উৎপাদনের দিকে ঝোঁকেন— গবেষকদের হিসাব, প্রয়োজনের চাইতে ত্রিশ শতাংশ বেশি চাল ও গম উৎপাদন করে ভারত। ধান ও গম, দু’টি শস্যের উৎপাদনেই প্রচুর জল লাগে, তাই ভূগর্ভের জলের উত্তোলন হচ্ছে বেশি। পরিস্থিতি এমনই যে, উত্তর ভারতের যে সব এলাকায় ষাটের দশকে ‘সবুজ বিপ্লব’ ঘটেছিল, এবং এখনও যেগুলি ভারতের শস্যের প্রধান উৎপাদক, সেই এলাকাগুলি মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পঞ্জাবের ভূগর্ভের জলের স্তর গড়ে আট ফুট নেমেছে, কোনও কোনও জায়গায় তা ত্রিশ ফুট নীচেও নেমেছে। মধ্যপ্রদেশে বেড়েছে শুকনো কুয়োর সংখ্যা। দু’টি রাজ্যেই সরকারি ভর্তুকিতে ক্রয়ের ফলে শস্যের উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। অতএব ভর্তুকির ফল কী হচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তার দরকার রয়েছে। চাষিদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে কী ভাবে ভর্তুকি দেওয়া যথাযথ হবে, তা নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন, মনে করছেন গবেষকরা, যাঁরা আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ও অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন। এই উদ্বেগ নতুন নয়। রেশনব্যবস্থার জন্য ন্যূনতম সরকারি মূল্যে সরকারি ক্রয় যে চাষের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করছে এবং পরিবেশের ক্ষতি করছে, এই উদ্বেগ বার বার দেখা গিয়েছে। অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছেন যে, চাল-গমের ক্রয় কমিয়ে, কম জলে উৎপন্ন শস্য বেশি করে ক্রয় করুক সরকার। তাতে পরিবেশবান্ধব চাষে উৎসাহ দেওয়া হবে।
কিন্তু কাগজ-কলমে যা ভাল নীতি, রাজনীতির জমিতে তা প্রায়ই অচল হয়ে দেখা দেয়। ২০২০-২১ সালের কৃষক আন্দোলনের পরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কৃষকদের দূরত্ব বেড়েছে, আস্থা কমেছে। কৃষক সংগঠনগুলি সরকারের সদিচ্ছা সম্পর্কে সন্দিহান, ফলে যে কোনও সংস্কারের প্রস্তাবকেই তাঁরা সহজে গ্রহণ করতে পারেন না। উপরন্তু, কৃষক আন্দোলন ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল ক্রয়কে সরকারি নীতি থেকে আইনে পরিণত করার দাবি তুলেছে। এ বিষয়টি পঞ্জাব, হরিয়ানা-সহ উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি চাষির কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। তাঁরা দেখিয়েছেন যে, উৎপাদনের উপকরণের খরচ ও মজুরি মিটিয়ে বাজার দরে চাল-গম বিক্রি করে লাভবান হওয়া অসম্ভব। তাই সরকারি ক্রয়ের উপরেই চাষি নির্ভর করতে বাধ্য। বরং অন্যান্য ফসলকেও সরকারি ক্রয়ের অধীনে নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন তাঁরা। নির্বাচনী বাধ্যবাধকতায় প্রায় সব দলই চাষিদের এই সংগঠিত দাবির কাছে নতিস্বীকার করছে।
কিন্তু এর ফলে সমস্যা রয়ে যাচ্ছে সেই তিমিরেই— করদাতার টাকাতে চাষিদের ভর্তুকি দিয়ে এমন চাষ হচ্ছে, যা মহাসঙ্কটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে দেশকে। ভূগর্ভের জলভান্ডার শূন্য হয়ে উর্বর ভূমি মরুভূমি হচ্ছে, অত্যধিক ইউরিয়া সার প্রয়োগে মাটি অনুর্বর হচ্ছে, ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহারে দূষিত হচ্ছে খাদ্য। কোনও দিক থেকেই সুস্থায়ী উন্নয়নের পথ দেখা যাচ্ছে না। গবেষকরা মনে করছেন, সরকারি ভর্তুকির কোনও বিকল্প ব্যবস্থা চাষিদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা দরকার। এ বিষয়ে দ্বিমত নেই, কিন্তু বিকল্প নীতির জন্য চাই বিকল্প রাজনীতিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy